ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

বিএনপির সেই নেতাদের শঙ্কাই সত্যি হলো

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ২১, ২০২১

বিএনপির সেই নেতাদের শঙ্কাই সত্যি হলো

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। আওয়ামী লীগের সমাবেশে পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটানো হলো। অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মারা গেলেন ২৩ জন। মুমূর্ষু অবস্থায় আইভি রহমান পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি কলঙ্কিত দিন। প্রতিপক্ষ রাজনীতিকে অস্ত্রের শক্তিতে নিঃশেষ করে দেওয়ার যে প্রতিহিংসার রাজনীতি এটির এক চরম প্রকাশ ঘটেছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। এই ঘটনা সম্পর্কে তৎকালীন সময়ে ক্ষমতাসীন বিএনপির অধিকাংশ নেতাই ছিলেন অন্ধকারে। আদালতের রায় বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তারেক জিয়া হাওয়া ভবনে বসে এই পরিকল্পনা করেছিলেন এবং বিএনপি` মুষ্টিমেয় নেতারাই এটি জানতেন। কিন্তু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার পরপরই বিকেলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বিষয়টি সম্বন্ধে জানতে পারেন এবং এটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।

 

আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া: এই গ্রেনেড হামলার ঘটনা যখন ঘটে তখন বিএনপি মহাসচিব ছিলেন প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া। তিনি সেই সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। ঘটনা শোনার পরপরই তিনি বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি ডেকে নিয়ে আসেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে। বাবরের কাছ থেকে তিনি ঘটনার বিবরণ জানেন এবং মান্নান ভূঁইয়ার মত দীর্ঘদিন রাজনীতি করা মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে। মান্নান ভূঁইয়া তখন হতাশা প্রকাশ করে বলেন যে এই ঘটনার জন্য বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হবে। আমরা যদি সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে দমন করতে চাই তাহলে আমরা নিজেরাই নিঃশেষ হয়ে যাব। মান্নান ভূঁইয়া এখন নেই। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি সংস্কারপন্থী হয়েছিলেন মূলত তারেক জিয়া এবং খালেদা জিয়ার কারণে। আর তিনি বিএনপির যে নিঃশেষ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন আজ তা সত্যি হতে চলেছে।

 

সাদেক হোসেন খোকা: সেই সময় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। একই সঙ্গে তিনি মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন। এই ঘটনার সময় তিনি ছিলেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ভবনে। ঘটনার পর পরই তিনিও ছুটে আসেন পল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে। পুরো ঘটনা শোনার পর তিনি বলেন, বিএনপি নিজেই তার কবর রচনা করলো। এই মন্তব্য তিনি শুধু বিএনপি কার্যালয়েই করেননি, পরবর্তীতে ক্যান্টনমেন্টে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তিনি বলেন যে, এই ঘটনার পক্ষপাতহীন তদন্ত করা দরকার। ঘটনার কোনো দায় যদি বিএনপি নেয় বা ঘটনার সঙ্গে যদি বিএনপি কোনো ভাবে যুক্ত থাকে তাহলে বিএনপিকে তার চরম মূল্য দিতে হবে। সাদেক হোসেন খোকাকে সেদিন ভর্ৎসনা করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর তারেক জিয়াকে বাঁচাতে বেগম খালেদা জিয়া একের পর এক নির্দেশনা জারি করেছিলেন। কিন্তু খোকার সেই বক্তব্যই আজ যেন সত্যি পরিণত হচ্ছে। বিএনপিকে ২১ আগস্টের দায়ভার এখনো বহন করতে হচ্ছে।

 

তরিকুল ইসলাম: তরিকুল ইসলাম ছিলেন সেই সময় তথ্যমন্ত্রী। তিনি এই ঘটনার দিন ঢাকায় ছিলেন না। ছিলেন তাঁর নির্বাচনী এলাকার যশোরে। ঘটনার পরপরই তিনি ঢাকায় চলে আসেন। পরদিন তিনি দেখা করেন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। বেগম খালেদা জিয়াকে তিনি বলেন যে, আপাতত যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। ব্যাপারে যেন বিচারবিভাগীয় তদন্ত হয়। তরিকুল ইসলাম সেই সময়ে তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তরিকুল ইসলামের কথাও শোনেননি বেগম খালেদা জিয়া।

 

এই তিন নেতার কেউই এখন নেই। কিন্তু বিএনপির মধ্যে তখন এই বক্তব্যগুলো গৃহীত হয়নি। তারা নিজেরাও হতাশ হয়েছিলেন। পুরো ঘটনাটিকে বিএনপি অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। এই চেষ্টার ফলেই জর্জ মিয়া নাটক সাজানো হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি এই হত্যার সব আলামত নষ্ট করে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পর নতুন করে তদন্তে পাওয়া যায় এই ঘটনার সঙ্গে তারেক জিয়া এবং বিএনপির সম্পৃক্ততা। তারপর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি ক্রমশ নিঃশেষিত হতে থাকে। যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিএনপির ওই তিন নেতা, তাদের শঙ্কাই আজ সত্যি হতে চলেছে।