নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সভায় তিনি দলকে নির্বাচনমুখী করার ঘোষণা দেন এবং এখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য কাজ শুরু করতে বলেন। এই সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ যে ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন তাতে আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে। উন্নয়ন এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে আওয়ামী লীগের আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই। কারণ গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ যে গোটা বাংলাদেশকেই পাল্টে দিয়েছে এটা আওয়ামী লীগের চরম সমালোচকরাও স্বীকার করেন। আর সাংগঠনিকভাবেও আওয়ামী লীগ এখন অন্য যেকোনো দলের চেয়ে শক্তিশালী। বিএনপি'র চেয়ে আওয়ামী লীগের সক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু এসবের পরও নানা কারণে আওয়ামী লীগ শংকিত, উদ্বিগ্ন। যে বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন তাদের মধ্যে রয়েছে,
১. ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়: ইউপি নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ খারাপ করেছে। প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শতকরা ৭৩ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকে প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু শেষ দফায় এসে মাত্র ২৭ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য ভীষণ উদ্বেগের বলেই আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। তারা মনে করছেন যে, দলের হাইকমান্ডের বারংবার নির্দেশনা পরও এই নির্বাচনে বিদ্রোহীদের থামানো যায়নি এবং এই বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে ধরাশায়ী করেছে এবং এটির প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে বলে অনেকেই মনে করছেন।
২. কোন্দলে অস্থির তৃণমূল: আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এর মধ্যেই তৃণমূলে দেখা যাচ্ছে নানা রকম অস্থিরতা এবং বিরোধী। বিশেষ করে স্থানীয় নেতারা এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন, ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এবং তাদের সমালোচনা করছেন। এই অবস্থা আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। দলের চেইন অফ কমান্ড নষ্ট হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি যে সম্মান শ্রদ্ধা ছিল সেটিও এখন আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। এরকম অবস্থা চললে সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের জন্য খারাপ সময় অপেক্ষা করছে বলে অনেকে মনে করছেন।
৩. অগোছালো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন: আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো এখন অগোছালো অবস্থা। ছাত্রলীগ প্রতিনিয়ত নানারকম বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। অন্য সংগঠনগুলো দিবস কর্মসূচির মাধ্যমে পরিচালিত। এক সময় আওয়ামী লীগের শক্তির অন্যতম উৎস ছিল এ সমস্ত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এখন সেগুলো যেন আওয়ামী লীগের জন্য একটা দায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যই শুধুমাত্র এই ধরনের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নাম আসছে।
৪. সরকারের সাথে দূরত্ব: স্পষ্টত আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রীরা দলের নেতা নয় এবং দলের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারেন না। এদেরকে অনেকে হাইব্রিড হিসেবে চিহ্নিত করেন। অনেক মন্ত্রীরা যেন ভিনগ্রহের বাসিন্দা হয়ে মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন। তারা দলের স্বার্থ বা দলের নীতি, আদর্শ এমনকি নির্বাচনী ইশতেহারের দিকেও মনোযোগী নন। ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারের একটি দূরত্ব ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে এমন সব মন্ত্রী বসা আছেন যারা আওয়ামী লীগেই অপরিচিত। ফরে দলের সঙ্গে সরকারের যে সমন্বয়, সেই সমন্বয় অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
৫. শীর্ষ নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি বিরাট অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। দলের উপদেষ্টা মন্ডলীর হেভিওয়েট সদস্যরা মোটামুটি নিজেদেরকে গুটিয়ে রেখেছেন। প্রেসিডিয়ামে যারা আছেন তাদের প্রায় অর্ধেকের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে হাতেগোনা ৫-৭ জন শুধু কাজ করছেন। ফলে সারাদেশে সাংগঠনিক এক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে এবং এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে, সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের জন্য দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে বলেও অনেকে মনে করেন।