ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ২১, ২০২১
দুই
মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন বেগম জিয়া। একটি মামলায় হাইকোর্ট তার
সাজা বহাল রেখেছেন। আপিল বিভাগ তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। আইনের সব পথ রুদ্ধ।
সরকারের অনুকম্পায় তিনি বিশেষ বিবেচনায় জামিনে রয়েছেন। কিন্তু ১৭ বছরের কারাদণ্ড
থেকে তার মুক্তির আপাতত কোনো পথ নেই। একমাত্র পথ রয়েছে যদি তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবে। কিন্তু কেন বেগম খালেদা জিয়ার এই পরিণতি হলো? বাংলাদেশের
রাজনীতিতে দুই নেত্রী প্রায় সমান্তরাল ধারার ছিলেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া চমক জাগিয়ে
সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ৯৬ সালে সালে তিনি
বিরোধী দলে গেলেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা তার ছিল। ২০০১ সালে আবার বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসেন।
দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এই রাজনীতি বাংলাদেশের দ্বিদলীয় গণতন্ত্রের একটি
চর্চার সূচনা করেছিল। কিন্তু এই সুস্থ্য গণতন্ত্র এবং সহাবস্থানের মূলে কুঠারাঘাত করেছিল
২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিকে কেবল বিভক্তিই করেনি, সহিষ্ণুতা
এবং সমঝোতার রাজনীতির অধ্যায়ের কবর রচনা হয়েছে।
এই
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পাপই কি বেগম খালেদা জিয়াকে বহন করতে হচ্ছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা
মনে করেন যে, ২১ আগস্টের এই ঘটনা যদি না ঘটতো তাহলে হয়তো বেগম খালেদা জিয়ার এই পরিণতি
হতো না। ২১ আগস্ট ২০০৪ এ আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে অতর্কিতে গ্রেনেড হামলা চালানো
হয়। এটা আজকে দিবালোকের মত সত্য যে, ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল শেখ হাসিনাকে
হত্যার উদ্দেশ্যেই। কিন্তু মানববর্ম করে শেখ হাসিনাকে সেদিন বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল।
তারপরও শব্দের কারণে তার কান প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনায় আইভি রহমানসহ আওয়ামী
লীগের ২৩ নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছিল। একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে
এরকম বীভৎসভাবে নিঃশেষ করার সহিংস প্রক্রিয়া তা অমানবিকই শুধু নয়, নৃশংসতম বটে। পৃথিবীতে
এ ধরনের ঘটনা বিরল।
বাংলাদেশের
প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম হয়। জিয়াউর রহমান বিএনপিকে
গঠন করেছিলেন মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী একটি রাজনৈতিক পরিকাঠামো তৈরি করার
উদ্দেশ্যে।জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে যেমন জড়িত ছিলেন তেমনি আওয়ামী লীগকে
নিঃশেষিত করার প্রক্রিয়ার মূল নেতা ছিলেন। জিয়ার মৃত্যুর পর এই ধারাতেই রাজনীতি করছে
বিএনপি। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট বিপুলভাবে বিজয়ী হয়।
এরপর বিএনপি ক্ষমতায চিরস্থায়ী রাখার জন্য যা যা করা দরকার সবকিছুই করেছিল। তারা দেড়
কোটি ভুয়া ভোটার বানিয়েছিল। তারা নির্বাচন কমিশনকে তামাশার কেন্দ্র করেছিল। তারা
প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য সংবিধান সংশোধন
করেছিল। এতকিছু করার পরও তারা নিশ্চিত হতে পারেনি। আর সেই সময় বিএনপি-জামায়াতের একটি
অংশ পরিকল্পনা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে হত্যা করার এবং আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য
করার। ২১ আগস্টের ঘটনা ছিল সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
এই
ঘটনার ইতিমধ্যে তদন্ত হয়েছে, বিচার হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বেগম খালেদা
জিয়া ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি নয়। সে সময় তিনি সরকার প্রধান ছিলেন
এবং সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি যেমন দায় এড়াতে পারেন না তেমনি এই মামলার তথ্য আলামত
তার সরকারই নষ্ট করেছে। বেগম খালেদা জিয়া নিজেই জজ মিয়ার কাহিনী বলেছেন জাতীয় সংসদে।
এই ঘটনায় তার নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তিনি শুধু তথ্য ধামাচাপা দেননি, মামলাকে
অন্য খাতে প্রবাহিত করারই চেষ্টা করেননি বরং নোংরা রাজনীতির খেলায় মেতেছিলেন। এখানেই
বাংলাদেশের রাজনীতির দুটি ধারা দুটি পথে চলে গেছে। যেখানে আর মীমাংসার কোনো জায়গা
রাখা হয়নি। আর এই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার দায় বেগম খালেদা জিয়া কখনোই এড়াতে
পারেন না। কারণ তিনি তখন সরকার প্রধান ছিলেন এবং ঘটনার পর তিনি নির্মোহ, নিরপেক্ষভাবে
এর তদন্তও করতে দেননি। আর সেই পাপেরই ফল ভোগ করছেন এখন বেগম খালেদা জিয়া। যে প্রতিহিংসার
রাজনীতির তিনি পথ দেখিয়েছেন সেই পথে তিনিই এখন ঘুরছেন।
সৌজন্যে:
বাংইনসাইডার