বর্তমানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। এই দুই দেশের মধ্যে যেকোনও সময় যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। এই উত্তেজনার মধ্যেই বেলারুশে রাশিয়ান সেনা সাজানোর চিত্র ধরা পড়ল স্যাটেলাইটে।
মার্কিন স্যাটেলাইটে ধরা পড়া এসব চিত্রে দেখা গেছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বেলারুশের বেশ কয়েকটি স্থানে উন্নত সমরাস্ত্র মোতায়েন করা শুরু করেছে।
ক্রেমলিন ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের পরিকল্পনা করছে, এই আঙ্কার মধ্যেই নতুন উপগ্রহ চিত্রগুলো ইউক্রেন এবং ন্যাটোকে উদ্বিগ্ন করার জন্য যথেষ্ট।
এই সেনা মোতায়েনের বিষয়টি সম্ভবত রাশিয়ান এবং বেলারুশ বাহিনীর মধ্যে যৌথ মহড়ার সাথে যুক্ত, যা বৃহস্পতিবার শুরু হতে চলেছে। তবে অন্যান্য ফটোগ্রাফে দেখা যাচ্ছে যে ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে মহড়া চলছে সেখান থেকে এই স্থান কয়েকশ মাইল দূরে। রাশিয়া বারবার ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। যদিও এই অঞ্চলে মস্কোর ব্যাপক সৈন্য মোতায়েন অন্য কথা বলছে।
ওয়াশিংটনের দুই মার্কিন কর্মকর্তার মতে, ক্রেমলিন ইউক্রেনের সীমান্তে ৭০ শতাংশ সামরিক কর্মী এবং অস্ত্র একত্রিত করেছে যা রাশিয়ার একটি পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের জন্য প্রয়োজন হবে। যাইহোক, এটা এখনও স্পষ্ট নয় যে রাশিয়ান বাহিনী নিজেদের পূর্ণ মাত্রায় সাজিয়ে তুলতে আরও কতদিন সময় নেবে।
মার্কিন কোম্পানি ম্যাক্সারের তোলা উপগ্রহ চিত্রগুলো শনিবার তোলা হয়। যাতে দেখা গেছে রাশিয়ান বাহিনী বেলারুশের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এবং ইউক্রেন সীমান্তের ২০ মাইলের মধ্যে ফিল্ড ক্যাম্প তৈরি করছে। কিছু চিত্রে বেলারুশের লুনিনেটস এয়ারফিল্ড দেখা গেছে , যেখানে রাশিয়ান যুদ্ধবিমানগুলো অনুশীলনের আগে মোতায়েন করা হয়েছে। এয়ারফিল্ডে রাশিয়ান এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং সু-২৫ অ্যাটাক এয়ারক্রাফ্ট দেখা গেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার লুনিনেটসে বিমানের আগমনের ভিডিও প্রকাশ করেছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা ভেজদা অনুসারে, এস-৪০০ ব্যাটালিয়নগুলো ৯ হাজার কিলোমিটার পথ যাত্রা করতে সক্ষম , রাশিয়ার পূর্বপ্রান্ত খাবারোভস্কি থেকে যাত্রা করে এতটা পথ পাড়ি দিতে সক্ষম এস-৪০০।
ম্যাক্সারের অন্যান্য ফটোগ্রাফগুলো দেখায় যে যেখানে রাশিয়া, বেলারুশ এবং ইউক্রেনের সীমানা মিলিত হয়েছে তার কাছাকাছি লুনিনেট এয়ারফিল্ডের প্রায় ১৭০ মাইলপূর্বে বেলারুশিয়ান শহর রেচিৎসাতে রাশিয়ান বাহিনী নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে৷ এই অঞ্চলে জড়ো করা হয়েছে বাহিনীর ট্যাংক, হাউইটজার এবং পদাতিক যোদ্ধাদের । সেনা ছাউনি তৈরী করার ছবিও ধরা পড়েছে স্যাটেলাইটে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওগুলিতে দেখা গেছে যে, রাশিয়ান সৈন্যরা রেচিৎসাতে স্থানীয় লোকদের সঙ্গে আমোদ প্রমোদে অংশ নিয়েছে। ম্যাক্সারের আরও বেশ কয়েকটি চিত্রে দেখা গেছে রেচিৎসার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ইউক্রেনীয় সীমান্তের ১৫ মাইলের মধ্যে ইয়েলস্ক শহরের নিকটবর্তী গ্রামীণ এলাকায় ক্রমবর্ধমান রাশিয়ান সেনাদের উপস্থিতি।
আইএইচএস/জেনস, একটি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে ইয়েলস্কে কমপক্ষে তিনটি রাশিয়ান ব্যাটালিয়ন গ্রুপের উপস্থিতি রয়েছে। রাশিয়ার এই বিশাল সৈন্য মোতায়েন মার্কিন এবং ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বৃহস্পতিবার বলেছেন যে বেলারুশে মস্কোর সেনা মোতায়েন শীতল যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। ইউরোপীয় কূটনীতিকরা এই ঘটনাকে একটি “বড় উদ্বেগ” বলে অভিহিত করেছেন।
স্থানীয় আবহওয়ার কথা মাথায় রেখে রাশিয়া এমন জায়গায় তাদের ভারী সামরিক সরঞ্জামগুলো রাখছে যাতে সহজেই সেখান থেকে নাড়াচাড়া করা যায়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন যে পুতিন সম্ভবত মার্চের শেষের দিকে সমরাস্ত্রগুলো সরাতে পারেন। হোয়াইট হাউস বেশ ভালোই বুঝতে পারছে , রাশিয়া ইতিমধ্যেই ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক রবিবার বলেছেন- তাদের কাছে কোনও প্রমাণ নেই যে রাশিয়া তাদের দেশে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের জন্য পদক্ষেপ নেবে, তবে সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন কিয়েভ এবং তার অংশীদাররা যেকোনও সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
পোডোলিয়াক জানিয়েছেন , ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ান সৈন্যদের উপস্থিতি কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। সূত্র: সিএনএন