গত ২০ বছরেও যেহেতু মিটারের ভাড়া অনুযায়ী গন্তব্যে যাওয়ার আইনটি কার্যকর হয়নি, তাই প্রশ্ন উঠেছে-দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলতে কি কিছু নেই? সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চালকদের সৃষ্ট নৈরাজ্য প্রতিরোধে ট্রাফিক বিভাগের তৎপরতাও চোখে পড়ে না; যদিও তারা বলছে, এ নৈরাজ্য বন্ধে তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই।
এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীতে মাত্র দুই শতাংশ অটোরিকশাচালক মিটারে যেতে রাজি হয়, তা-ও আবার ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া বা ‘বকশিশ’ দাবি করা হয়। দ্বিতীয়ত, যাত্রীদের ইচ্ছামতো গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৮৮ শতাংশ অটোরিকশাচালক। চুক্তিতে চলাচলকারী অটোরিকশাচালক সর্বনিু ৫০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৭১০ দশমিক ৮১ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন মিটারের ভাড়ার চেয়ে। সব মিলিয়ে অটোরিকশা খাতে চলছে মহানৈরাজ্য।
অথচ ২০০৮ সালের সড়ক আইনে অটোরিকশা মিটারবিহীন চললে চালককে ছয় মাসের জেল এবং মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার কথা স্পষ্টভবে উল্লেখ আছে। এ আইনের প্রয়োগ প্রসঙ্গে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেছেন, সরকার চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করে এ খাতকে সুশৃঙ্খল করা সম্ভব। আমরা তার এ কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করি। অটোরিকশা খাতের নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে প্রথমে দরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
অটোরিকশাচালকরা একটা সংঘবদ্ধ অপশক্তি হিসাবে যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের ‘গলা কাটবেন’-এ নৈরাজ্য মেনে নেওয়া যায় না। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৮ সালের পর যাত্রীভাড়া পাঁচবার বাড়ানো হয়েছে। এই সুবিধা দেওয়ার পরও অটোরিকশার চালকরা সন্তুষ্ট নন! সড়ক আইন অনুযায়ী, চুক্তিতে চলাচলকারী অটোরিকশার বিরুদ্ধে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। অথচ আমরা এ আদালতের তেমন তৎপরতা লক্ষ করছি না। ভ্রাম্যমাণ আদালত তৎপর হলেও অবশ্য ব্যবস্থা নিতে পারছে না, কারণ চালক ও যাত্রীর মধ্যে চুক্তি থাকে যে, আদালত বা ট্রাফিকের মুখোমুখি হলে যাত্রী যেন বলেন, তিনি মিটারেই যাচ্ছেন। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, সমস্যাটা অনেক গভীর। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে কীভাবে, তা নিয়ে সরকারকেও গভীরভাবে ভাবতে হবে।