ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

আওয়ামী লীগের ঝুলন্ত তিন

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: সোমবার, ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২২

আওয়ামী লীগের ঝুলন্ত তিন
স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং সব ধরনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রকে সুপারিশ করা হয়েছে তাদেরকে বহিষ্কার করার জন্য কিন্তু কেন্দ্র এখন পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে তারা আদৌ বহিষ্কৃত, না তারা এখনও আওয়ামী লীগ আছেন -এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এরকম ঘটনা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি তবে আলোচিত তিনজন। এই তিনজনের মধ্যে রয়েছেন:

১. নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী: সম্প্রতি একরামুল করিম চৌধুরীকে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং দল থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ধোঁয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা আছে। যদিও একরামুল করিম চৌধুরীবিরোধীরা বলছেন, দলের সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করে এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিন্তু এ ধরনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন কেন্দ্রীয় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

২. মুরাদ হাসান: নানা বিতর্কে জড়িয়ে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। মুরাদ হাসানের পদত্যাগের পর থেকেই তাকে নিয়ে নাটক জমতে শুরু করে। জামালপুরে তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়, এমনকি তাকে তার নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের কমিটি থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে কিনা সেটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সম্প্রতি আবারও ডা. মুরাদ হাসান তার চাচার মৃত্যুর কারণে নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছেন, সেখানে গিয়ে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন। মুরাদ হাসান কি আওয়ামী লীগে আছেন নাকি তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত? এ প্রশ্নের উত্তরে নানামুখী বিতর্ক রয়েছে।

৩. জাহাঙ্গীর আলম: জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পদচ্যুত মেয়র। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি এবং বিতর্কের কারণেই তিনি শেষ পর্যন্ত পদ হারান এবং দল থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরকম অবস্থা তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা চলছে এবং সেই মামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে তিনি আদালতে যখন গেছেন তখন আওয়ামী লীগেরই বেশকিছু নেতাকর্মীকে তার পাশে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও তিনি এখনো আওয়ামী লীগের একটি অংশকে নিয়ে চলাফেরা করছেন এবং তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগও রয়েছে।

প্রশ্ন হলো যে, এই আওয়ামী লীগ থেকে যারা এভাবে বহিষ্কৃত হয়েছেন তাদের অবস্থান টা কি? তারা কি বহিষ্কৃত হয়েছেন নাকি এখনও আওয়ামী লীগে আছেন? আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তারা বলছেন যে, একরামুল করিম চৌধুরীকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এরকম অনেকেই অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে কিন্তু আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যতক্ষণ পর্যন্ত এটি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই বহিষ্কার অকার্যকর। স্থানীয় পর্যায়ের কেউই আওয়ামী লীগের কাউকে বহিষ্কার করতে পারে না বা অব্যাহতি দিতে পারে না। এটি কেন্দ্রীয় কমিটির এখতীয়ারাধীন বিষয়।

একই ঘটনা বলা হচ্ছে মুরাদ হাসানের ক্ষেত্রে। মুরাদ হাসানের বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ মুরাদ হাসানের ব্যাপারে সুপারিশ করেছে কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এটি এখন পর্যন্ত আলোচনা হয়নি। তবে জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন বলেছেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। তারা বলছেন যে, জাহাঙ্গীর আলমকে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কাজে তিনি এখন আওয়ামী লীগের কোনো কিছুই নন। তার প্রাথমিক সদস্য আছে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সদস্যরা বলছেন, যেহেতু তিনি সাধারণ সম্পাদক থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন, কাজেই তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য সদস্যপদও হারিয়েছেন।

শুধু এই তিনজন নয়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা গেছে বেশকিছু স্থানীয় নেতাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, বহিষ্কৃত করা হয়েছে। কিন্তু আদৌ তাদের অবস্থান কি তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সৌজন্যে: বাংলাইনসাইডার