সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু করেছেন আদালত। কাঠগড়ায় আসামিদের উপস্থিতিতে ৩০ পৃষ্ঠার রায় পড়ছেন বিচারক।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত। এটি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক হত্যাকাণ্ড। সোমবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল রায়ের পর্যবেক্ষণে এ মন্তব্য করেন।
সোমবার বেলা আড়াইটার কিছু আগে এজলাসে বসেন বিচারক। আসামিদের নাম ডাকার পর ৩০০ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন তিনি।
এর আগে বেলা ২টায় একটি প্রিজনভ্যানে করে ১৫ আসামিকে কারাগার থেকে কক্সবাজারের জেলা আদালতে নিয়ে আসা হয় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে। পরে লাইন ধরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় এজলাস কক্ষে, দাঁড় করানো হয় কাঠগড়ায়।
এ মামলার প্রধান দুই আসামি হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী।
কাঠগড়ায় প্রদীপের পরনে দেখা যায় ধূসর জ্যাকেট। তার পাশেই দাঁড়িয়েছেন লিয়াকত। পুলিশের আরও সাত সদস্য, এপিবিএন এর তিন সদস্য এবং টেকনাফের স্থানীয় তিন বাসিন্দা এ মামলার আসামি।
কাঠগড়ায় ওসি প্রদীপকে বিষণ্ন দেখা গেছে। তিনি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছেন।
সূত্রমতে, প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ থানার ওসি থাকাকালে মাদক নির্মূলের নামে ২২ মাসে ১৪৪টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার জন্ম দেন। তাতে মারা গেছেন ২০৪ জন। এসব ঘটনাকে দেওয়া হয়েছে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের তকমা। অথচ সাধারণ মানুষ বলছেন, ক্রসফায়ারে নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন নিরীহ।
এমনই একটি সাজানো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি এবং রামু থানায় একটি মামলা করে। সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং মাদক আইনে এসব মামলা করা হয়। টেকনাফ থানায় করা দুই মামলায় নিহত সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম সিফাতকে আসামি করা হয়। আর রামু থানায় মাদক আইনে করা মামলাটিতে আসামি করা হয় নিহত সিনহার অপর সফরসঙ্গী শিপ্রা দেবনাথকে।
২০২০ সালের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে।
মামলার অন্য আসামিরা হলো— টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, উপপরির্দশক (এসআই) টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা।