ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

শাবি শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, জানুয়ারী ৩০, ২০২২

শাবি শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা

ছবি: সংগৃহীত

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর পুলিশি হামলার ঘটনায় কোনো শিক্ষক প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাননি। এ নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে সমালোচনা চলছে। প্রশ্ন উঠেছে-যে ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর, সেখানে এমন হামলার পরও কেন শিক্ষক সমিতি বিবৃতি ছাড়া কোনো শিক্ষক প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করলেন না। এর কারণ খুঁজতে চেষ্টা করেছে যুগান্তর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চার বছরে শিক্ষকদের মধ্যে উপাচার্য-ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। হামলার পর উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের যে বক্তব্য ছিল, তা শুনে কেউ আর প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এমন ভীতি থাকলে ঘটনার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা কি আদৌও হামলার আদেশদাতাকে খুঁজে বের করতে পারবেন। এমন প্রশ্ন শিক্ষকদের। তদন্ত কমিটি এর প্রমাণও রেখেছে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তদন্ত কমিটির চার সদস্য মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির দাবি করেছে শিক্ষক সমিতিও। তদন্ত কমিটির প্রধান ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার যুগান্তরকে জানান, নিরপেক্ষভাবে তারা তদন্ত করবেন। তবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় কিংবা বাইরের তদন্ত কমিটি বিভিন্ন প্রযুক্তিগত দিক ব্যবহার করে তদন্ত করতে পারবেন। এর সীমাবদ্ধতা তাদের আছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-১৬ জানুয়ারি শাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ বর্বর হামলা চালায়। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষক আহত হন। শিক্ষার্থীরা যখন হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতর, ঠিক সেই মুহূর্তে উপাচার্য গণমাধ্যমে কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে উলটো গুলি করার অভিযোগ তোলেন তিনি। তার এমন বক্তব্যে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে রাতেই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা আসে। অভিযোগ-হাসপাতালে তাদের দেখতেও কোনো শিক্ষক যাননি। এমনকি কয়েকজন শিক্ষক আহত শিক্ষকদের দেখতে গেলেও তারা শিক্ষার্থীদের কোনো খবর নেননি। পরদিন শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দাবি করা হয়। কিন্তু মাঠে নেমে কোনো শিক্ষককে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তুলশী কুমার দাস বলেন, এটা ভাবনার বিষয়। এ ক্যাম্পাসে আগে এমন ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদের ঝড় উঠত। এবার কেন হয়নি, তা তিনিও বুঝে উঠতে পারছেন না। ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায় বলেন, এটা সত্যি যে আমরা সমষ্টিকভাবে আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি। কেন এমন হয়েছে, সেটা চিন্তার বিষয়। তবে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবাদ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, অতীতে এমন ঘটনায় সব শিক্ষক এক হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে সবাই এক হয়ে যেতাম। এবার সমন্বয়ের খুব অভাব লক্ষ করা গেছে। তার মতে, এ ঘটনায় শিক্ষকদের অনেক দায় আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকরা বলেন, চার বছরে ক্যাম্পাসে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি চলছে। এমন পরিবেশ এ ক্যাম্পাসে ছিল না। বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পর থেকে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই এ ঘটনার পর অনেকে তামাশা দেখতে চেয়েছে। কারণ শিক্ষার্থীদের দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ, কোনো শিক্ষকের নয়। একজন শিক্ষক বলেন, ঘটনার পর উপাচার্য যখন শিক্ষার্থীদের দায়ী করে বক্তব্য দেন, তখন আর কোনো শিক্ষক এ ঘটনায় প্রকাশ্যে প্রতিবাদের সাহস করেননি। আবার কেউ কেউ বলেন, অনেক সিদ্ধান্ত উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন কঠোরভাবে নিয়েছেন। তিনি যেভাবে চেয়েছেন, একাডেমিক কাউন্সিল সেভাবে পাশ করতে বাধ্য হয়েছে; কেউ কোনো প্রতিবাদ করেননি। এ কারণে অনেকের মনে ক্ষোভ ও ভীতি দুটিই কাজ করেছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনায় প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করেননি।

বুধবার এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, এমন ঘটনায় শিক্ষকদের প্রতিবাদ করার সাহস না থাকা মানে তাদের মেরুদণ্ড নেই। এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ইয়াসমীন হক বলেন, তোমরা কেউ এমন শিক্ষক হয়ো না।

তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন : শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে সিন্ডিকেট জরুরি ভিত্তিতে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে গঠিত কমিটির সভাপতি ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো রাশেদ তালুকদারকে করা হয়। রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়। এতে সব অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে কমিটির সদস্য করা হয়। এ তদন্ত কমিটি নিয়েও ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

জানা যায়, তদন্ত কমিটির প্রধানসহ অধিকাংশ সদস্যই উপাচার্যের কাছের মানুষ হিসাবে পরিচিত। শিক্ষকরা বলছেন, এ ঘটনায় উপাচার্য দায়ী হলে কমিটি কি তা বলতে পারবে। এদিকে, ২২ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ সদস্যের শিক্ষক প্রতিনিধিদল দেখা করে। তাদের মধ্যে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিবুল আলম ছাড়া বাকিরা তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন। তারা সরকার কিংবা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি করার দাবি করেন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. তুলশী কুমার দাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে একটি তদন্ত কমিটি হলে সেই প্রতিবেদন নিয়ে সাধারণত প্রশ্ন ওঠার কোনো অবকাশ নেই। এজন্য তারা এ দাবি জানিয়েছেন।