ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

জঙ্গিবাদ: বিএনপির আমলে উত্থান, আওয়ামী লীগের আমলে পতন

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: বুধবার, আগস্ট ১৮, ২০২১

জঙ্গিবাদ: বিএনপির আমলে উত্থান, আওয়ামী লীগের আমলে পতন

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেন শান্তির প্রতীক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সংগঠন যতবার ক্ষমতায় ছিল ততবারই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে নিত্য নতুন ইতিবাচক সফলতা অর্জন করেছে। দেশের জন্ম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যত বড় বড় অর্জন সব আওয়ামী লীগের আমলেই হয়েছে। হিউম্যান ইনডেক্সসহ বিভিন্ন ইতিবাচকসুচকে বাংলাদেশ অগ্রগামী হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করেছে। অন্যদিকে বিএনপি জামায়েত জোট আমলে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের অভ্যায়রণ্যে পরিণত হয়।

 

বিএনপি জামায়েত জোট আমলে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের আশ্রয়স্থল, সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। সেখান থেকে রাষ্ট্রকে শান্তিকামী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে আনেন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার সরকার। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) বিশ্ব শান্তি সূচক-২০২০ .১২১ জিপিআই স্কোর নিয়ে ১৬৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। ২০১৯ সালে এই সূচকে বাংলাদেশ ছিল ১০১তম।

 

বিএনপি জামায়েত জোট আমলে দেশেরই জঙ্গিবাদের চিত্র দেখলেই তা অনুমেয় হবে।

 

বিএনপি-জামায়াতের আমলে দেশে জাল বিস্তার করেছিল পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। বাংলাদেশকে ঘাঁটি করে ভারতের জঙ্গি সংগঠন সংযুক্ত মুক্তিবাহিনী, উলফার বিস্তার ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল অবধি বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলেই ফুলে-ফেঁপে ওঠে। ২০০৪ সালের এপ্রিল চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার মামলাকে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় ভারতে নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিল উলফাকে৷ আইএসআইয়ের মদদে ভারতে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য সবরকম সহায়তা দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। অস্ত্র চোরাকারবারের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের নাশকতামূলক কাজের সুযোগ করে দিয়েছিল চারদলীয় জোট সরকার। সেটাই ধরা পড়ছে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার মামলায়।

 

চট্টগ্রাম অস্ত্র উদ্ধার মামলায় প্রমাণিত হয় বিএনপি-জামায়াত সরকার উলফাকে বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে কাজের সুযোগ করে দিয়েছিল। এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম এবং এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবুদ্দিন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় কথা স্বীকারও করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ভারতীয় জঙ্গিদের অস্ত্র পাচারে বাংলাদেশিরাও আই.এসআইকে সাহায্য করেছে। উলফার স্বঘোষিত কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া তখন বাংলাদেশেই ছিলেন। চীন থেকে বিশাল পরিমাণ অস্ত্র আনার বিষয়টি তিনি সরাসরি তদারকি করছিলেন।

 

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বাংলাদেশের মাটিতে ভালোমতো প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছিল আইএসআই। ভারতবিরোধী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষের বাতাস ছড়িয়েছিল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার গঠিত হলে লাগাম টানা হয়। তার আগে ১৯৯১-১৯৯৬ ছিল আইএসআইয়ের মুক্ত বিচরণভূমি বাংলাদেশে। ২০০১-২০০৬ শাসনামলে তারা দানবশক্তি হয়ে প্রশ্রয় পেয়েছিল।

 

বিএনপি-জামায়াত আমলে আইএসআইয়ের মেহমানরা বাংলাদেশে জামাই আদরেই ছিল। সরকারি আতিথেয়তায় অস্ত্র চোরাকারবার বা অস্ত্র প্রশিক্ষণেরও বন্দোবস্ত হয়। এমনকি বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করারও সুযোগ করে দেওয়া হয় তাদের। উলফার পরিচালনায় বাংলাদেশে শুরু হয়, ঊষা ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা’, ‘অনির্বাণ গার্মেন্ট লিমিটেড, চট্টগ্রাম`, `করাচি গার্মেন্ট, চট্টগ্রাম প্রভৃতি। সরকারের সমর্থন বা সহযোগিতা ছাড়া ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কোনোমতেই গড়ে তোলা সম্ভব হতো না উলফার পক্ষে। ২০০৬ সালে আমেরিকার বিখ্যাত সংস্থা স্ট্র্যাটেজিক ফোরসাইট বা স্টার্টফোরের গবেষণায় উঠে আসে উলফাপ্রধান পরেশ বড়ুয়ার বিশাল ধনসম্পদের খতিয়ান।

 

উলফার ভারতবিরোধী কাজে আইএসআইয়ের প্রশংসার হাজারো উদাহরণ রয়েছে। ২০০২ সালে পাকিস্তানের ফৌজি প্রশাসক জেনারেল মোশাররফের বাংলাদেশ সফরের আগে ৩০ জুলাই পাকিস্তানের সরকারি টিভি চ্যানেলেই তো উলফার গুণকীর্তন করা হয়। অনুষ্ঠানের নামই ছিল, রেভারি অ্যান্ড গ্লোরি অব উলফা। অর্থাৎ, উলফার সাহসিকতা গৌরব প্রচারে ব্যস্ত ছিল পাকিস্তান। সেখানে প্রশংসিত হয় উলফার নাশকতামূলক কাজকর্ম। জেনারেল মোশাররফের ঢাকায় অবস্থানকালে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয় উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়ার। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে এজন্য নিয়ে যাওয়া হয় শেরাটন হোটেলে। সেখানেই উলফা নেতার সঙ্গে কথা বলেন মোশাররফ। ২০১০ এর জানুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করেন। কিন্তু তার মন্তব্যের পর পাকিস্তান সরকারিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিএনপি-জামায়াতের আমলে পাকিস্তান আসলে প্রকাশ্যেই ভারতবিরোধী শক্তিকে মদদ দিয়েছে। ব্যবহার করেছে বাংলাদেশের জমি। বিএনপি কি সেই পাপমুক্তি ঘটিয়েছে? সরকারবিরোধী বা ভারতবিরোধী অসন্তোষ শক্তি নয়, শক্তি হলো রাজনীতির আদর্শ। সেটা কি বিএনপি পরিবর্তন করেছে?

 

৭১-এর যুদ্ধের পরাজয় আসলে ভুলতে পারছে না পাকিস্তান। তাই বাংলাদেশি দোসরদের সঙ্গে নিয়ে সেই হারের প্রতিশোধ নিতে চায় তারা। শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশও তাদের শত্রু। কিন্তু মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে। আইএসআই এখন আর বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত অর্থেই বাংলাদেশের মাটি সন্ত্রাসবাদের কবল থেকে মুক্ত করেছেন। সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া বন্ধ করে গোটা দুনিয়ার কাছেই শান্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন হাসিনা। অথচ বিএনপি-জামায়াতের আমলে পাকিস্তানের মদদে সন্ত্রাসীদেরই মদদ দিয়েছে খালেদার সরকার। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় প্রমাণিত আইএসআইয়ের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপি সরকারের অশুভ আঁতাতের বিষয়টি।

 

১০ ট্রাকের ঘটনা একটি মাত্র। ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার বিভীষিকা দেশের মুক্তিযুদ্ধের আলো নিভিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। দেশজুড়ে রাজনৈতিক হত্যা, গ্রেনেড বোমা সন্ত্রাসে কাপিয়ে দেওয়ার নেপথ্যেই ছিল আইএসআই বিএনপি জামায়াত শাসনামলের রাষ্ট্রযন্ত্রের যৌথ প্রয়াস। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মদদ সৃষ্টি ভয়াবহ ছিল। শেখ হাসিনা সব গুঁড়িয়ে দিলেও বিএনপি তার অপশাসনের ভুলগুলো চিহ্নিত করে নিজেদের শোধরানোর পথ খোঁজেনি। হেফাজত নিয়ে শাপলা চত্বরের খেলোয়াড়রা আরেক দফা হঠকারী করে সর্বনাশ করেন।

 

এবার দেখা যাক শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ দমনে কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন।বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে (২০০৯-২০১৩) জঙ্গিবাদ দমনে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিসহ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম গ্রহণ সমন্বয়ের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে সভাপতি করে ১৭ (সতের) সদস্যের জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার কমিটি গঠন করা হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তার নেতৃত্বেই আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন-২০১৪ (আইনটির মেয়াদ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট (সংশোধন) আইন বিধিমালা প্রক্রিয়াধীন আছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধিমালা-২০১৪ প্রণীত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশে লাখ ৬১ হাজার ৩শ জন জনবল ছিল। বর্তমানে তা লাখ হাজারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে নারী পুলিশ সদস্য ছিল মাত্র ২৫২০ জন। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৭৬৭ জন। পুলিশবাহিনীতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৫০ হাজার পদ সৃজনের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর পর্যায়ক্রমে ৫০ হাজার পদ সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ছাড়াও পুলিশ পরিদর্শক পদকে ২য় শ্রেণি থেকে ১ম শ্রেণিতে এবং উপ-পুলিশ পরিদর্শককে ৩য় থেকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীতকরণ এবং পুলিশের নতুন নতুন উইং সৃষ্টি হয়েছে। যেমন, বাহিনীতে শিল্পাঞ্চল পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, পিবিআই, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ, ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার এসপিবিএনসহ মোট ১০টি নতুন ইউনিট তৈরি করা হয়েছে।

 

বর্তমান সরকারের আমলেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) এলআইসি শাখা গঠন করা হয়। বিশেষ অপরাধ তদন্তের জন্য গঠন করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানে আসে একের পর এক সাফল্য। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার কিংবা নিহত হয়। আলোচিত মামলাগুলোর তদন্তও সফলভাবে শেষ করেছে পুলিশ। এতে কমেছে জঙ্গি তৎপরতা। একইসঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধ, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই দস্যুতার হারও কমেছে অনেকখানি। বিশেষত বন জলদস্যু এবং সর্বহারাদের আত্মসমর্পণ দেশের অন্যতম অবদান যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাজকে গতিশীল করতে শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগে ওই সরকারের সংসদ অধিবেশনের শেষে এসে গ্রামের বেশি ইয়াবা পাওয়া গেলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে `মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ পাস করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য শনাক্তকরণ এবং অধিদপ্তরকে ৩টি পিকআপ, দুটি মাইক্রোবাস, ২৯ ধরনের যন্ত্রপাতি ১৫০টি কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় মিলিয়ন ডলারের একটি। প্রকল্প ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্থা `কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কৈকা) বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

 

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গি দমনে জিরো টলারেন্স নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ পরিকল্পনা গ্রহণ করায় জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সবসময়ই তৎপর রাখা হচ্ছে। জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বিচারে ফাঁস হয়েছে কয়েকজন দুর্ধর্ষ জঙ্গি সদস্যের। জঙ্গিদের অনলাইন তৎপরতা রোধে এখন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে নিশ্চিন্তে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ফেসবুক, গুগলসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম এবং স্মার্টফোন অ্যাপ নির্মাতাদের সঙ্গে এদেশের পুলিশ প্রশাসনের সখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলে দ্রুত সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া যায়। আসলে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে এলিট ফোর্সের যাব, বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটসহ পুলিশের সব ইউনিট গোয়েন্দা সংস্থাকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান কার্যক্রম জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, `বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। দেশের মানুষ ধর্মীয় উগ্রবাদিতা তাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করে। দেশের অগ্রগতি নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ বড় ধরনের অন্তরায়। এই অন্তরায় দূর করার জন্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে `পুলিশ` ্যাব` বাহিনীর সফল অভিযানে শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি নেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রেপ্তার নিহত হয় এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোলা-বারুদ উদ্ধার করা হয়। ২০১৬ সালের হোলি আর্টিজান হামলার পর পর্যন্ত যতগুলো অপারেশন পরিচালিত হয়েছে তার সবগুলো থেকেই জঙ্গিগোষ্ঠী আঘাত হানার পূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে জঙ্গি আস্তানাসমূহ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। জঙ্গি দমনে শেখ হাসিনা সরকার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ফলে বর্তমানে জঙ্গি তৎপরতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এবং জঙ্গি দমনে সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। উপরন্তু জনগণের নিরাপত্তা এবং দেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে জঙ্গি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উদ্যোগে কতিপয় বিষয়ে জঙ্গিবাদীদের অপব্যাখ্যা এবং পবিত্র কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা শীর্ষক প্রকাশিত পুস্তিকা এখন সবার হাতে। অন্যদিকে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হওয়ায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৭টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গিবাদের অর্থায়নে জড়িতদের কার্যকরভাবে দমনের লক্ষ্যে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ (সংশোধনী-২০১৩) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ প্রণয়ন করেছে। সরকারের আন্তরিকতা এবং গৃহীত নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি শৃঙ্খলা স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। জনগণের প্রত্যাশা জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, জঙ্গি হিসেবে এযাবৎ যতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই ৪টি সংগঠনের। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলো হচ্ছে : জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ওরফে আনসার আল ইসলাম হিযবুত তাহরির। জেএমবি গঠিত হয়েছে জামায়াতের প্রাক্তন সদস্যদের নিয়ে। আল-কায়েদার অনুসারী আনসারুলস্নাহ বাংলা টিমের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে শিবিরের মানুষ। হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে সরাসরি জামায়াতের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া না গেলেও দল দুটির মধ্যে মতাদর্শগত মিল রয়েছে; এরা ওয়াহাবী ধারার জিহাদি।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম থেকেই জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থানে রয়েছেন এবং নিরলসভাবে কাজ করছেন। তার নির্দেশনা কর্ম তৎপরতার কারণেই সারাদেশে একযোগে বোমা বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন সময়ে নাশকতা সৃষ্টিকারী জঙ্গি সংগঠনসমূহের শীর্ষ সারির নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীকেও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। কেউ কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে এবং বেশকিছু মামলা এখনো বিচারাধীন। তবে, যে সব জঙ্গি এখনো আত্মগোপন করে আছে তাদের তৎপরতা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। পুলিশ ্যাবের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি অভিযানের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে এবং বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক হয়েছে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সহায়তায় একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সদস্যদের নির্মূল করা হচ্ছে। এসব অভিযানের কারণে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে জনজীবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ফিরে এসেছে। তবে জঙ্গিবাদ উত্থানের কিছু কারণ রয়েছে সেগুলো বন্ধ না হলে জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল হবে না। অন্যদিকে মনে রাখা দরকার জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা।

সৌজন্যে: বাংলাইনসাইডার