ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

পুলিশ সপ্তাহ শুরু কাল

দুই বছরে বাস্তবায়ন হয়নি বেশির ভাগ দাবি

কল্যাণকর অনেক উদ্যোগ গ্রহণ


নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শনিবার, জানুয়ারী ২২, ২০২২

দুই বছরে বাস্তবায়ন হয়নি বেশির ভাগ দাবি

ছবি: সংগৃহীত

রোববার থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ-২০২২। এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য, ‘দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। সাধারণত প্রতিবছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় পুলিশ সপ্তাহ। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর পুলিশ সপ্তাহ হয়নি। একই কারণে এ বছর অনেকটা সংক্ষিপ্ত আকারে পালন করা হবে পুলিশ সপ্তাহ।

২০২০ সালের পুলিশ সপ্তাহে অন্তত ২০টি সুনির্দিষ্ট দাবি জানানো হয়েছিল। এসবের মধ্যে দুটি দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে। কোনো কোনোটি আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। বেশিরভাগই গত দুই বছরে বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এ সময় কল্যাণমূলক বেশকিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবারের পুলিশ সপ্তাহে আগের দাবিগুলোসহ নতুন এক গুচ্ছ দাবি উপস্থাপন করা হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, ২০২০ সালের পুলিশ সপ্তাহে করা দাবিগুলোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে- পুলিশ পরিবারের দুই সদস্যের আজীবন রেশন প্রদান ও কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের এককালীন থোক বরাদ্দের প্রস্তাব। বাস্তবায়িত না হওয়া দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-আইজিপির পদমর্যাদা তিন বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) প্রধানের সমান করা, পুলিশপ্রধান নতুন পদ (চিফ অব পুলিশ বা অন্য নাম) এবং আইজিপি হিসাবে পাঁচজনকে নিয়োগ।

দোন্নতি জটিলতা দূর করার দাবিটি পুলিশের দীর্ঘদিনের। কিন্তু এটা আংশিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০টি ডিআইজির পদ, ৯৫টি অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২০টি এসপি পদ বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপির পদ ৪০টি করার দাবি থাকলেও এ মুহূর্তে আছে ২২টি। গত পুলিশ সপ্তাহের আগে অতিরিক্ত আইজিপি পদ ছিল ১৮টি। অর্থাৎ গত দুই বছরে চারটি অতিরিক্ত আইজিপির পদ বাড়ানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, নারী পুলিশের জন্য পৃথক ট্রেনিং সেন্টার, স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স স্থাপন, গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধা, বিভিন্ন দূতাবাসে পুলিশ সদস্যদের পদায়ন এবং আলাদা মেডিকেল কোর গঠনের দাবি জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছিল দুই বছর আগের পুলিশ সপ্তাহে। কিন্তু এ প্রস্তাবগুলো এখনো আলোর মুখ দেখেনি। আলোর মুখ দেখেনি জাতিসংঘের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো, যানবাহন প্রাধিকার প্রদান, মামলাজট নিরসনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারা দেশে যে কমিটি করা হয়েছে তা বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন, জাতির পিতার সমাধি সৌধের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ফোর্স গঠনের প্রস্তাবও।

সারা দেশে ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা গত পুলিশ সপ্তাহের অন্যতম দাবি। এ দাবিটি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু ফৌজদারি মামলায় যথাযথ সমন্বয়ের জন্য পুলিশের হাতে প্রসিকিউশন ফিরিয়ে দেওয়া, মেট্রোপলিটন থানাগুলোয় পরিদর্শকদের পরিবর্তে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। নন-ক্যাডার (পুলিশ পরিদর্শক, এসআই, এএসআই) কর্মকর্তাদের প্রবল আপত্তির মুখে সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কমিশনার, মহাপরিচালক ও পরিচালক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি থাকলেও পুলিশের অনাগ্রহের কারণেই এটি বাস্তবায়ন করা যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সূত্র জানায়, দুদকে একটি মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ আছে, যেটি ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে পূরণ করার কথা। কিন্তু সেই পদে পুলিশের কোনো ডিআইজি যেতে রাজি হননি। এ কারণে দীর্ঘদিনেও দুদকের উচ্চপর্যায়ে কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া যায়নি। তবে দুদকে উপ-পরিচালক এবং সহকারী পরিচালক পদে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা অতীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনও কেউ কেউ সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা একেএম কামরুল আহছান বলেন, গত পুলিশ সপ্তাহে উপস্থাপন করা প্রস্তাবনা বা দাবিগুলোর মধ্যে কিছু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন আছে। কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়েছে।

তিনি বলেন, পুলিশ প্রধান হিসাবে বর্তমান আইজিপি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কল্যাণমূলক অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে সারা দেশে বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু হয়। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এক লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৩টি বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। মাদক, চোরাচালান, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে এক লাখ ১৪ হাজার ৮৮৫ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিরোধমূলক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৫৬ হাজার ৩৬২টি ঘটনায়।

উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা আরও জানান, অতিরিক্ত আইজি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের জন্য বছরে একবার বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত বছর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসাবে সারা দেশের পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে ইউনিট পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স চালু করা হয়েছে। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রতিটি থানায় একটি হতদরিদ্র পরিবারের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন পরিবেশবান্ধব গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এই প্রকল্পের অধীন ৫১৯টি গৃহ নির্মাণ ও হস্তান্তরের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পুলিশের উদ্যোগে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য বিশেষ সেবা কর্মসূচি চালু করা হয়। এর অংশ হিসাবে প্রতিটি থানায় একটি করে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের জন্য আধুনিক অপারেশনাল গিয়ার ট্যাকটিক্যাল বেল্ট চালু করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ৫ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের (২৩-২৭ জানুয়ারি) প্রথম দিন সকাল ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্যারেডে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট ও পতাকাবাহী দলের সুশৃঙ্খল ও দৃষ্টিনন্দন প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করবেন।

পুলিশ সপ্তাহের প্রতিটি অনুষ্ঠান যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে অধিনায়ক হিসাবে নেতৃত্ব দেবেন পুলিশ সুপার ছালেহ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেবেন। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে ২০২০ সালে ১১৫ এবং ২০২১ সালে ১১৫ জনসহ মোট ২৩০ পুলিশ সদস্যকে পদক দেওয়া হবে। পদকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) সেবা, রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম), রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) সেবা। করোনার কারণে ২০২১ সালে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ বছর ২০২০ ও ২০২১ সালের পদক একসঙ্গে দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) কামরুজ্জামান জানান, পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) পৃথক বাণী দিয়েছেন। পুলিশ সপ্তাহকে কেন্দ্র করে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। পুলিশ সপ্তাহকে ঘিরে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে।

পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের সম্মেলন, প্রধান বিচারপতির সম্মেলন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সম্মেলন, আইজিপির সম্মেলন, শিল্ড প্যারেড, পুরস্কার বিতরণ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের পুনর্মিলনী ইত্যাদি। পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন অধিবেশনের মধ্য দিয়ে গত দুই বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তর জানায়।