১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা র্যাবকে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে নিষিদ্ধ করার দাবি করে জাতিসংঘে এক চিঠি দিয়েছে। এই চিঠিটি দেওয়া হয়েছে ৮ নভেম্বর। কিন্তু গতকাল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ সংক্রান্ত তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এই তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশের আগে বাংলাদেশ পুরোপুরি অন্ধকার ছিলো। বাংলাদেশের কোন সংস্থা বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতো না যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ১২টি সংগঠন জাতিসংঘের শান্তি মিশনে র্যাবকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কি করলো? নিউইয়র্কে বাংলাদেশের জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন কি করলো? কি করলো বিদেশি মিশনগুলো? বাংলাদেশের কূটনীতির এটি একটি বড় ধরনের বিপর্যয় বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জাতীয় মানবাধিকার বাংলাদেশে একটি স্বাধীন, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান সরকার গঠন করেছিল এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান কাজ হলো মানবাধিকার সুরক্ষা করা, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা, দেশি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয় রাখা, যোগাযোগ রাখা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সবসময় মুখ্য ভূমিকা পালন করা। কিন্তু ৮ নভেম্বর যখন মানবাধিকার কমিশনগুলো জাতিসংঘের কাছে এরকম আবেদন করলো তখন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কি অন্ধকারে ছিলো? তারা কি ঘুমিয়েছিলো? তারা এ ব্যাপারে কি জানতো? দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠছে, প্রশ্ন উঠছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার সুরক্ষার চেয়ে ব্যক্তি ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং সরকারের একটি আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই কাজ করছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গুরুত্ব, ভাবমূর্তি শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যদি সক্রিয় এবং ইতিবাচক থাকতো, তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটার সাথে সাথে তাদের এটি জানা উচিত ছিলো। এ ধরনের চিঠি জাতিসংঘে দেওয়ার আগে তারা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জানাতো, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন র্যাব আসলে কোন বাড়াবাড়ি করেছে কিনা বা কোথায় মানবাধিকারের ব্যত্যয় ঘটেছে এটি নিয়ে নির্মোহ, নিরপেক্ষ তদন্ত করতো এবং সেই তদন্তের আলোকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে জানাতো। কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এমনই একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে যে এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যে অন্যান্য দেশীয় এনজিওগুলো সেগুলোর সম্পর্কেও খোঁজ-খবর রাখে না। অথচ এটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অন্যতম ম্যান্ডেট।
দায় এড়াতে পারে না জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনও। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করবে এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে কি হচ্ছে না সে বিষয়ে দেখভাল করবে। বর্তমানে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে রাবাব ফাতেমা দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তিনি কতটুকু সঠিকভাবে রাষ্ট্রের স্বার্থে দায়িত্ব পালন করছেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে? কারণ ৮ নভেম্বর যদি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারির কাছে এ ধরনের চিঠি দেওয়া হয়, তাহলে সেখানে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন কি করলো? তারা কি এই চিঠির ব্যাপারে অবহিত ছিলো? তারা কি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এরকম চিঠি সম্বন্ধে কিছু জানিয়েছে? তারা কি এই চিঠির প্রতিবাদ করেছে? এই প্রশ্নগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়াটাও জরুরি।
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো কি করে এ নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, মন্ত্রী বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা গেলে তাদের প্রটোকল দেওয়া ছাড়া এইসব বিদেশি মিশনগুলোর কাজ কি সেটি একটি ভাবার বিষয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাজ্যে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর দান করলো, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস সে সম্পর্কে কোন তথ্যই রাখিনি। তাহলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর মতো সংগঠনগুলোর সাথে কি বিদেশি মিশনগুলোর কোন যোগাযোগ, সংশ্লিষ্টতা নেই? এইসব প্রশ্নের উত্তর জরুরী। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখন সেই ষড়যন্ত্র প্রকাশ্য এবং ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। কাজেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনসহ বিদেশী দূতাবাসগুলো যদি এখন সক্রিয় না হয় তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বড় ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি পড়বে। আর এ কারণেই এই ঘটনায় দায়িত্ব এড়াতে পারেনা এই প্রতিষ্ঠানগুলো।
সৌজন্যে: বাংলাইনসাইডার