ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

রমজানের দুই মাস আগেই কারসাজি

ভোক্তাদের কপালে ভাঁজ, লাগামহীন ছোলা ডাল ও তেলের দাম

প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান ঘিরে একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কারসাজি করে তারা রোজা শুরুর দুই মাস আগেই পরিকল্পিতভাবে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।


ফারজানা ববি নাদিরা | আপডেট: শুক্রবার, জানুয়ারী ২১, ২০২২

ভোক্তাদের কপালে ভাঁজ, লাগামহীন ছোলা ডাল ও তেলের দাম

ছোলা ডাল ও তেল, ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান ঘিরে একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কারসাজি করে তারা রোজা শুরুর দুই মাস আগেই পরিকল্পিতভাবে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারের পণ্যের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গেল দুই সপ্তাহে রোজায় অতিব্যবহৃত পণ্য-ছোলা, মসুর ডাল, মুগডাল ও ভোজ্যতেলের দাম দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয়েছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলের দাম না বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

ফলে রোজা শুরুর আগেই পণ্য কিনতে ভোক্তাদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে। তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে জানান, ইতোমধ্যে বাজার তদারকি শুরু হয়েছে। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে রোজা শুরুর দুই মাস আগেই অসাধুরা ভোক্তার পকেট কাটা শুরু করে। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি কার্যক্রম জোরদার করলে অসাধুরা পণ্যের দাম কিছুটা কমায়। তবে কারসাজি করে যে টাকা বাড়ানো হয়, এর চার ভাগের এক ভাগ কমানো হয়। এতে সরকার ক্রেডিট নিলেও এই বাড়ানো-কমানো খেলায় অসাধুরাই জয়ী হয়। তাই এখন থেকেই বাজার তদারকি করে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। পাশাপাশি অনিয়মের সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত হরে আইনের আওতায় আনতে হবে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় এসব পণ্যের দাম বাড়ার চিত্র দেখা গেছে। টিসিবি বলছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি ছোলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা। মুগডাল ও মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। এছাড়া ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন প্রতিলিটারে ৩-৫ টাকা বেড়েছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। সঙ্গে খোলা পাম অয়েল লিটারে ২ টাকা বেড়েছে।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে নিষেধ করলেও এই নির্দেশ তারা মানছে না। ব্যবসায়ীদের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের পর প্রথমবার ৬ জানুয়ারির বৈঠকে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে না বলে সিদ্ধান্ত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারপরও সে সময় রাজধানীর খুচরা বাজারে একদিনের ব্যবধানে লিটারে ২ থেকে ৫ টাকা বাড়তি দরে ভোজ্যতেল বিক্রি হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, আগামী ১৫ দিনে তেলের দাম বাড়ানো যাবে না। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার লিটারে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়েছে ভোজ্যতেলে। ফলে ক্রেতাকে বাড়তি দরেই তেল কিনতে হচ্ছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৪৫-১৪৮ টাকা। যা সাত দিন আগে ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন এক সপ্তাহ আগে সর্বনিু ৭০০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন ৭১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সর্বোচ্চ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা।

বৃস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজা যত ঘনিয়ে আসছে অসাধুরা ছোলার দাম বাড়াচ্ছে। ১০ জানুয়ারি প্রথম দফায় কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ছোলা ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। এরপর বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় পণ্যটির দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ছোলা এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতিকেজি মুগডাল বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা। যা সাত দিন আগে ১১৫-১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মসুর ডালের মধ্যে প্রতিকেজি মাঝারি আকারের দানা বিক্রি হয়েছে ১০৫-১১০ টাকায়, যা সাত দিন আগে ছিল ১০০-১০৫ টাকা। বড় দানার প্রতিকেজি মসুর ডাল ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছোট দানার মসুর ডাল প্রতিকেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. শামীম বলেন, করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে চাল থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে লক্ষ করছি অসাধু বিক্রেতারা রোজা শুরুর দুই থেকে তিন মাস আগ থেকেই পণ্যের দাম বাড়াতে থাকে। এবারও সেটাই করছে। যারা বাজার তদারকির সঙ্গে যুক্ত, তারা এখনো নির্বিকার। কিছুই করছে না। তারা ভালোভাবে তদারকি করলে প্রতিবছর ক্রেতাদের এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয় না।

এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বরাবর দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা রমজান আসার আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে মনিটরিংও আগেভাগেই করতে হবে। কঠোর তদারকির মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দিকনির্দেশনায় রমজান উপলক্ষ্যে বাজার তদারকি শুরু হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে কোন পণ্য কী দামে কেনা ও বিক্রি কত, তা ইতোমধ্যে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এবার রমজান ঘিরে কারসাজি করলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। দরকার হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে। এছাড়া জরিমানাসহ জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।