দেশে এখন আবার রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ আছে। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে সভা সমাবেশের মত রাজনৈতিক কর্মসূচি গুলোকে ১১ দফা নির্দেশনার আওতায় স্থগিত রাখা হয়েছে। আর এই নির্দেশনা মেনে বিএনপিও তার সমস্ত কর্মসূচি স্থগিত রেখেছে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, নতুন ইসি গঠন হলে সে ইসি যাই হোক না কেন তা নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম হবে। বিএনপি শুধু একাই নয় অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনীতির মাঠের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাষ্ট্রপতি প্রায় একমাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ শেষ করেছেন এবং এই সংলাপের শেষ দিনে মন্ত্রীসভার বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত নতুন আইন অনুমোদিত হয়েছে। এই আইনটি এখন জাতীয় সংসদে পাশ হলেই আইনে পরিণত হবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন নতুন আইন আর যেভাবে গত দু'বছর সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে দুটির মধ্যে খুব একটা মৌলিক পার্থক্য নেই। নতুন আইনেও সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে এবং সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে বলে বলা হয়েছে। কাজেই আইন হোক না হোক সার্চ কমিটির মাধ্যমেই যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হচ্ছে এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
ইতিমধ্যে এই বিষয় নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে এবং তারা সার্চ কমিটির আদলে নির্বাচন কমিশন মানবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি অবশ্য নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে শুরু থেকেই নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। তারা রাষ্ট্রপতির সংলাপেও যোগ দান করেননি। তারা মনে করেন যে, নির্বাচন কমিশন নয়, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন। এরকম বাস্তবতায় তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন এর সঙ্গে নিরপেক্ষ নির্বাচন ইস্যুটিও যুক্ত করেছিলেন। যদিও তাদের আন্দোলন এখন নেই কিন্তু বিএনপি'র একাধিক নেতা বলছেন যে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া হলেই তারা তাৎক্ষণিকভাবে কর্মসূচি দেবেন। শুধু বিএনপি নয়, সাবেক জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের দুটি সংগঠন জেএসডি এবং নাগরিক ঐক্য ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। তারা মনে করছেন যে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে এই নির্বাচন কমিশন গঠন হলে সরকারের আজ্ঞাবহ এবং অনুগত ব্যক্তিরাই নির্বাচন কমিশনে আসবে। এতে এটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্তরায় হবে। অন্যদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোট এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোন রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। তবে বামজোট রাষ্ট্রপতির সংলাপও বর্জন করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলে বামদলগুলো আন্দোলনে যেতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
উগ্র দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কিছু একটা করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। বিএনপি চাইছে যে, নির্বাচন কমিশন গঠনের পর এর বিরোধিতা করে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম গঠন করতে যেই প্ল্যাটফর্ম থেকে সবগুলো রাজনৈতিক দল ন্যূনতম ইস্যুতে আন্দোলন করবে। বিএনপির পরিকল্পনা হলো নির্বাচনের ইস্যুর এই আন্দোলনকে তারা আস্তে আস্তে সরকার পতনের আন্দোলনে নিয়ে যাবে। আর এ কারণেই তারা নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যু নিয়ে একক আন্দোলন নয় বরং একটি সম্মিলিত আন্দোলনের পক্ষে এবং বিএনপি এরকম প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন যে, এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তারা জামায়াতকে পাশে নেবে না। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর অস্বস্তি রয়েছে, এ নিয়ে সরকারের সমালোচনা রয়েছে তেমনিভাবে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি রয়েছে। তারা মনে করে যে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের যে অনৈতিক সম্পর্ক এটি প্রকাশ্যে থাকুক বা গোপনে থাকুক এটা দেখে বিএনপি'র সঙ্গে সহাবস্থানের আন্দোলন করা সম্ভব নয়। আর এই প্রেক্ষিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে আন্দোলন হবে সেই আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ হবে বা কতটা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করতে পারবে সেটাই দেখার বিষয় ।
সৌজন্যে: বাংলাইনসাইডার