আজ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরশাসক, একনায়ক জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মদিন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা হলেও জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপির তেমন কোনো আড়ম্বরতা ছিল না। জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত ছাড়া বিএনপি কোনো উল্লেখযোগ্য কর্মসূচী পালন করেনি। একটি দলের প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিন এমন অনাদরে, অবহেলায় পালিত করা হয় এটা ভাবতেও অবাক লাগে বলে মনে করছেন বিএনপির অনেক নেতাই। তারা বলছেন যে জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালন করা উচিৎ অত্যন্ত ঘটা করে এবং দলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এই কর্মসূচী পালন করা উচিৎ কয়েকদিন ধরে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বিএনপি এখন জিয়াউর রহমানকে এড়িয়ে যায়। শুধুমাত্র দিবসভিত্তিক কর্মসূচী ছাড়া জিয়াউর রহমানকে তারা স্মরণও করেনা। বিএনপির একজন নেতা বলছিলেন যে জিয়াউর রহমানের ছবি এখন ছোট হতে হতে নিশ্চিহ্নপ্রায় হয়ে গেছে। এখন বিএনপিতে চলছে তারেক জিয়ার রাজত্ব। তারেক জিয়ার রাজত্বে তার পিতা জিয়াউর রহমানই নির্বাসিত। জিয়াউর রহমান পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম কুশীলব। জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্ষমতার পালাবদলের নানা বাঁকে নিজেকে সামলে নিয়ে ৭ই নভেম্বর ক্ষমতা দখল করেন। ক্যু, পাল্টা ক্যু'র এই ধারায় জিয়াউর রহমানের মূল লক্ষ্য ছিল অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করা। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং সেনাপ্রধান হওয়ার পর তিনি বিচারপতি সায়েমকেও বন্দুকের নলের মুখে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে হটিয়ে দেন। এরপর তিনি একাধারে সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। যা ছিল সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক। তিনি অবশ্য সংবিধান স্থগিত করেন এবং সংবিধানের কাটাছেড়া করে তিনি সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে উপড়ে ফেলেন। বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর কাজ করেন তিনি একনিষ্ঠভাবে।
জিয়াউর রহমান তার মন্ত্রীসভায় যেমন রাজাকারদেরকে এনেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদে তিনি শাহ আজিজের মতো রাজাকারকে বসিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি তিনি যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমকেও বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, কালো টাকার যে ছড়াছড়ি সবকিছুই জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা। জিয়াউর রহমানের নাম ধরেই বিএনপি '৮২ এর পর থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছে। এই সময় জিয়াউর রহমানই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় পরিচিতি বা ব্র্যান্ড। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরেছিলেন শুধুমাত্র জিয়ার ইমেজের উপর ভর করে। একটি গোষ্ঠী সফলভাবে জিয়ার একটি ইমেজ দিতে সক্ষম হয়েছিল এবং ইমেজটি ছিল সততার ইমেজ। একটি মহল জিয়াকে সৎ বানানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করে সফল হয়েছিলেন। আর এ কারণেই '৮২ সাল থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মূল রাজনীতি ছিল জিয়াউর রহমান কেন্দ্রিক। জিয়াউর রহমানের আদর্শকেই তারা বিলি-বণ্টন করে রাজনীতিতে টিকে ছিলেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়া বিএনপির নেতৃত্বে আসার পর এখন জিয়াউর রহমানই বিএনপিতে নির্বাসিত হয়েছেন। তারেক জিয়া তার মাকে যেমন হটিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের পদ দখল করেছেন, ঠিক তেমনি জিয়াউর রহমানকেও স্মরণ করতে অনাগ্রহী। কারণ তারেক জিয়া বিএনপিকে নিজের কুক্ষিগত করতে চান এবং বিএনপিকে তার অর্থ উপার্জনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চান। আর এ কারণেই জিয়ার ইমেজ বা জিয়ার নাম ব্যবহার করতে তার তীব্র অনীহা।
সৌজন্যে: বাংলইনসাইডার