মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৭ জুন বাংলাদেশি নাগরিকের গুম হওয়ার একটি তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তালিকাটি হস্তান্তর করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ বিভাগকে দেয় যে, এই নিখোঁজ তালিকায় যাদের নাম আছে তারা সত্যি সত্যি নিখোঁজ হয়েছে কিনা, কার কি অবস্থা, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে প্রদানের জন্য। সেই আলোকে পুলিশ এই তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে নির্দেশনা দেয় যে, এদের ব্যাপারে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে পুলিশ ঠিকানা অনুযায়ী কথিত নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের বাড়িতে যায় এবং তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। যাই জিজ্ঞাসা করা হোক না কেন সে ব্যাপারে তাদের বিবরণে লিপিবদ্ধ করে এবং তাদেরকে স্বাক্ষর করতে বলে।
এই ঘটনাটি নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক খবর প্রকাশ করে যে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের বাসায় গিয়ে পুলিশ জোর করছে এবং সাদা কাগজে সই নিচ্ছে। আসলে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অসত্য। সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়নি। ওই বাড়িতে গিয়ে পুলিশ প্রথমেই জানতে চেয়েছে যে, ওই ব্যক্তি আসলেই গুম হয়েছে কিনা, কতদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে, সর্বশেষ তাদের কার সাথে দেখা হয়েছিল ইত্যাদি তথ্য এবং থানায় তারা জিডি করেছে কিনা, কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ইত্যাদি। যখন পুলিশ পুরো বিষয়টিকে লিপিবদ্ধ করলো, করার পর তাদেরকে সেটি পড়তে দিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এটিকে একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রচার করছে যে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে জোরপূর্বক সাদা কাগজে তাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে এবং তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে৷ এই পত্রিকার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হবার সাথে সাথে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যেই মায়ের ডাক এবং আইন সালিশ কেন্দ্র এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে যে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে, চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সেই দুইটি এনজিওর বক্তব্যের সূত্র ধরেই আবার পরদিনই জাতীয় প্রেসক্লাবে মায়ের ডাকের উদ্যোগে রাজনৈতিক আবরণে একটি সমাবেশ হয়েছে। সেই সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না, আসিফ নজরুলের মতো সরকারবিরোধী লোকজন উপস্থিত থেকে এ নিয়ে বেশ বক্তব্য রেখেছেন।
এই বক্তব্যের পরপরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (যেটি আগে থেকেই বর্তমান সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত এবং যুদ্ধাপরাধীদের সহায়তা জানানোর জন্য বিতর্কিত এবং সমালোচিত) প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে, বাংলাদেশে যে গুমের ঘটনাগুলো সরকার তদন্ত তো করছেইনা, বরং সরকার এটার আত্মপক্ষ সমর্থনের বিভিন্ন পথ খুঁজছে। এই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনের সুপারিশমালায় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডাসহ বেশকিছু দেশের প্রতি। সেই সমস্ত সুপারিশগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট একটি অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে এই সুপারিশগুলোতে। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডা এখন হয়তো এই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে কাজ করবে।
পাঠক লক্ষ্য করুন যে কিভাবে একটি ঘটনাকে অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যে তালিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন থানায় দিয়েছিল সে তালিকা অনুযায়ী গুম হওয়া ব্যক্তিদের তথ্য হালনাগাদ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন বাড়িগুলোতে যাচ্ছিলো তখন সেটাকে হয়রানি, চাপ প্রয়োগ হিসেবে দেখানো হলো এবং সেটি কোন রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু হলো। ঠিক এটি একটি ঘটনা এবং ঠিক এভাবেই বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিক পত্রিকা এই অপপ্রচারের মূল সূত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আমরা যদি সবগুলো ঘটনা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখবো যে, একই চেইনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার করা হচ্ছে যার উৎসভূমি বাংলাদেশই।