আলোচিত সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও পদক বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম আদালতের কাছে এ দাবি জানান।
রোববার সকাল সোয়া ১০টা দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমালের আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে আলোচিত এ মামলার দুপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে আসামিদের উপস্থিতে দুপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়। এ সময় সিনহা হত্যাসহ নানা অপরাধমূক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে প্রদীপ কুমার দাশের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও পদক বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যুক্তিতর্কের জন্য নবম দফায় ৯, ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। এর আগে অষ্টম দফায় আদালত মূলতবির আগে ১৫ আসামির কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। আলোচিত এ মামলায় ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হলেও তার মধ্য থেকে এ পর্যন্ত ৬৫ জনকে সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে কড়া নিরাপত্তায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ মামলার ১৫ আসামিকে আদালতে আনা হয়।
এদিকে এর আগেও ওসি প্রদীপের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও পদক বাতিলের অনুরোধ দাবি করেছিল মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন সচেতন মহল। তাদের মতে, প্রদীপের যত অর্জন সবই বিতর্কিত। প্রদীপ মাদক নির্মূলের নামে সংশ্লিষ্টদের ধোঁকা দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে এসব অর্জন করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, সিনহা হত্যা মামালার একজন নারী সাক্ষী, সাক্ষ্যপ্রদানকালে আদালতকে বলেন, তার দুই মেয়েকে প্রদীপ অস্ত্রের মুখে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে থানায় আটকে রেখে দীর্ঘদিন ধর্ষণ করেছে। এ বিষয়ে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছে ওই নারী।
সিনহা হত্যা ছাড়াও প্রদীপ ও তার সহযোগীদের নামে ১২টি হত্যা মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
তাদের দাবি, দাবিকৃত চাঁদা দিতে না পারায় মাদককারবারি সাজিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে প্রদীপ। এসব অভিযোগ বিবেচনা করে প্রদীপের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও পদক বাতিলের দাবি উঠেছে।
বর্তমানে সিনহা হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছে ওসি প্রদীপ।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে।
ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।