ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

পূর্বাচলে মাসব্যাপী ২৬তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি | আপডেট: রবিবার, জানুয়ারী ২, ২০২২

পূর্বাচলে মাসব্যাপী ২৬তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে অবস্থিত রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহরে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল ১ জানুয়ারি শনিবার সকাল ১০টায় নতুন বছরের পহেলা জানুয়ারি নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মেলার উদ্বোধন করেন। 

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বার্থেই পণ্যের মান বজায় রাখুন। রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করতে হবে। পণ্য রপ্তানিতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি তিনি আহবান জানিয়েছেন। বর্তমান কুটনীতি হবে বাণিজ্য ও অর্থসংক্রান্ত।

এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রী  টিপু মুনশি এমপি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান। বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য সচিব তপণ কান্তি ঘোষ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জসীম উদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতিক, রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যা আলহাজ্ব মোঃ ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সচিব, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, এফবিসিসিআই-এর সদস্য, বণিক সমিতির প্রতিনিধি, ব্যবসায়ীগণ।

সভায় বক্তারা বলেন, রপ্তানি বাণিজ্য উন্নয়নের অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে পণ্য উন্নয়ন ও পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা। আর পণ্য বাজার সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার  আয়োজন ও অংশগ্রহণ। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে যুক্ত হতে যাচ্ছে এক নতুন অধ্যায়। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হয়। এবারই প্রথম বারের মতো স্থায়ী মেলা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। পূর্বের ন্যায় মেলাটি জানুয়ারি মাসব্যাপী সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।  ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।  

দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারীজ, কার্পেট, কসমেটিক্স এ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স, ফার্নিচার, পাট ও পাট জাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী, চামড়া ও জুতাসহ চামড়া জাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারীওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারী, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারী, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর, ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে।  
এবারের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড স্টল  দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১৪হাজার ৩শত ৬৬ বর্গমিটার আয়তনের ২টি হলে সকল স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে (সম্মুখ ও পেছনে)  প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন এবং ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হলেও ইউরোপসহ অন্যান্য কিছু দেশে তা আবার নতুন রূপে ছড়িয়ে পরায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারের বাণিজ্য মেলায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ কিছুটা কম। মেলা চলাকালীন স্বাস্থ্য বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে।

এবারও মেলায় মূল ভবনের প্রবেশদ্বারে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ ইত্যাদি বিষয়কে প্রক্ষেপণ করে এবারের বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন অধিকতর নান্দনিক, ভাবগাম্ভীর্য ও অর্থপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান, বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক ছাড়াও যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নেয়ার প্রকৃত ইতিহাস সকলের নিকট বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরারও প্রয়াস নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের ভিতরে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শন ছাড়াও তাঁর জীবন ও কর্মভিত্তিক ডকুমেন্টারী প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

মেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণার্থে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসার, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র‌্যাব নিয়োজিত রয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব মেলা প্রাঙ্গণ ও প্রাঙ্গণের বাইরে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এছাড়া সার্ভিস গেইট ও ভিআইপি গেইট এবং এক্সিবিশন হলের ভিতরে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করা হয়েছে। নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় এক্সিবিশন সেন্টারে বিল্ট ইন ১৬০টি সিসিটিভির অতিরিক্ত আরোও ৬০টি ক্যামেরা মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেইট, পার্কিং এলাকা এবং সংশ্লিষ্ট সকল এলাকাসহ  পুরো এলাকাটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া, মেলার প্রবেশ গেইটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে যে কোন ধরনের  অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে ফায়ার ব্রিগেড। 

মেলার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্ন কর্মী সার্বক্ষণিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত থাকবে। এক্সিবিশন হলে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুরুষ ও মহিলা আলাদা টয়লেট রয়েছে যা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য আলাদাভাবে পুরুষ ও মহিলা পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণের বাইরওে টয়লেট তৈরি  করা হয়েছে। এছাড়া, মেলা প্রাঙ্গণ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শতাধিক পরিচ্ছন্ন কর্মী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। 

খাদ্য দ্রব্যের মূল্য ও মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর পৃথক অফিস রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যসহ গঠিত টিম মেলা চলাকালীন নিয়মিত মনিটরিং করবে এবং প্রয়োজনে অভিযান পরিচালনা করা হবে। উল্লেখ্য এবারের মেলায় এক্সিবিশন সেন্টারের ভিতরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ৫শত আসন বিশিষ্ট একটি ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করবে।

মেলার রয়েছে প্রায় এক হাজার কার পার্কিং এর সুবিধা।  পার্কিং এর জন্য রয়েছে বিল্ট-ইন দ্বিতল কার পার্কিং বিল্ডিং যেখানে  পাঁচ শতাধিক গাড়ির পাকিং সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও, এক্সিবিশন হলের বাইরে ৬ একর জমিতে পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

দর্শনার্থীদের সকল প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য রয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র। ব্যাংকিং সাভিসের জন্য মেলায় থাকছে জনতা ব্যাংক। পাশাপাশি মেলায়  বেশ কিছু ব্যাংক বুথ স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। মা ও শিশুদের কথা বিবেচেনা করে মেলায় স্থাপন করা হয়েছে ২টি মা ও শিশু কেন্দ্র। অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবার মধ্যে রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, মসজিদ, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার/বেঞ্চ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

এছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড হতে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্তবিআরটিসি ও কয়েকটি যাত্রীবাহী বাসের ডেডিকেটেড সার্ভিসের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলা চলাকালীন এ বাস সার্ভিস চালু থাকবে। নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করে দর্শনার্থীগণ এ বাসে মেলায় যাতায়ত করতে পারবেন।
মেলার প্রবেশ টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ২০টাকা। মেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক টিকেট কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে। মেলার টিকেট অন-লাইনেও বিক্রয় করা হচ্ছে। 

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ডিআইটিএফ অনন্য ভূমিকা পালন করে। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ইতিবাচক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। এছাড়াও দেশীয় উদ্যোক্তাদের স্থানীয় বাজারে তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারে এ মেলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ডিআইটিএফ এর বিভিন্ন অবকাঠামো/প্যাভিলিয়ন/স্টল নির্মাণ ও সজ্জিতকরণ কাজে প্রচুর জনবলের প্রয়োজন হয়। এতে করে মৌসুমী কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। ডিআইটিএফ এর মাধ্যমে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং কাজে সংশ্লিষ্ট ফার্মসমূহ তাদের ইনোভেটিভ কর্মকান্ড ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। ডিআইটিএফ এর মাধ্যমে দেশের ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং খাতের সুনাম আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া ডিআইটিএফ দেশের সার্ভিস সেক্টর উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ  অবদান রাখছে।