ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

আমলাদের লাগাম টেনে ধরছেন প্রধানমন্ত্রী

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ১৪, ২০২১

আমলাদের লাগাম টেনে ধরছেন প্রধানমন্ত্রী

গত মাসে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। এ নিয়ে আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অনেক উর্ধ্বতন আমলা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন যে এই সিদ্ধান্তটি বাতিল করার জন্য। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। ১৯৭৯ সালের বিধি অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর সম্পদের হিসাব দেখার কথা। সরকার কেবল সেই বিধিটি নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে মাত্র। এতেই আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গত একনেকের বৈঠকে জামালপুরে নির্মিতব্য সোলার পার্কের নামকরনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল শেখ হাসিনা সোলার পার্ক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। এ সময় আমলারা বারবার করে প্রধানমন্ত্রীকে এই নামটি রাখার জন্য অনুরোধ করলেও প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী চাটুকারিতায় গা ভাসান নি। এই দুই ঘটনার প্রেক্ষাপটে আগামী ১৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে সচিব কমিটির সভা। যে সচিব কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করবেন। 

ধারণা করা হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী আমলাদের লাগাম টেনে ধরছেন ধাপে ধাপে। বিগত দুটি ঘটনা তার ইঙ্গিত মাত্র। সামনের দিনগুলোতে আমলাদেরকে আরও জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার আওতায় আনা হবে। তার উদ্যোগ হিসেবেই সচিব কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় বলা হয়েছে যে, করোনা মোকাবেলা করা, অর্থনৈতিক গতি সঞ্চালন, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং জবাবদিহিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়েই সচিব কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হবে। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে যে, এই সভায় প্রধানমন্ত্রীর মূল এজেন্ডা হলো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা। প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরই প্রথম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি সচিবদেরকে বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বহু গুণ বাড়ানো হয়েছে। কাজেই এখন কোনো দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তাটি কতটুকু প্রতিপালিত হয়েছে সেটির এখন জবাব নেওয়ার সময় এসেছে বলেই সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে। গত কিছুদিন ধরেই আমলাতন্ত্রের উত্থান এবং আমলাদের কর্তৃত্ব নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিককালে সরকারের ভেতর থেকেই এই বক্তব্যকে নাকচ করে দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, আমলাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি রাজনৈতিক কর্তৃত্বেই দেশ চলছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যে নির্দেশনা দিচ্ছেন আমলারা তার প্রতি পালন করছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যাই বলুক না কেন তাদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমলাদের দাপট এবং দৌরাত্ম্য বেড়েছে এবং এর ফলে অনেক দুর্নীতি এবং অনিয়মের কথাও সামনে চলে আসছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর আবেগের প্রকল্প গৃহহীনদেরকে গৃহ প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু কিছু মাঠ পর্যায়ের আমলা যে দুর্নীতি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। বেশকিছু আমলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথাবার্তা বলা হচ্ছে। তাছাড়া আমলাদের কর্তৃত্ব বৃদ্ধির ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী আমলাদেরকে একটা জবাবদিহিতার আওতায় আনছেন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এই প্রক্রিয়াটি একদিনে হবে না ধাপে ধাপে হবে। তার প্রথম পদক্ষেপ ১৮ আগস্টের সচিব কমিটির সভা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।