দেখতে দেখতে চোখের পলকে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের দ্বার প্রান্তে চলে এলাম আমরা। সময় এসেছে দেনা পাওয়ার হিসাব চুকাতে। আর এই দেনা পাওয়ার হিসাব হচ্ছে মানবীয় জীবনের। যে সংকল্প নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম এই বছর তা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি? কতটুকু অন্যের প্রতি মানবিক হতে পেরেছি? নিজ নিজ ধর্মীয় মূল্যবোধ কতটুকু পালন করতে পেরেছি? আজকেই এটা উপযুক্ত সময় একটু পিছনে ফিরে তাকানো। আর সেই পিছনে ফিরে যাওয়ার জন্যে আমাদের কিছু প্রশ্নের সাহায্য নিতে হবে। মনের রাখতে হবে পিছনে ফিরে তাকানো মানে এই নয় যে পিছনে পড়ে থাকা। এই পিছনে ফিরে তাকানোর মাধ্যমে আগামীতে সামনের দিকে চলতে বেগ পেতে সাহায্য করে। তাই ইংরেজিতে বলে Looking Back, looking Ahead. কম বেশী সবার কাছে দূরে থাকার, বিচ্ছিন্নতার, আতঙ্কের, মহামারির একটি বছর ছিলো ২০২১ খ্রিস্টাব্দ। অনেকে জড়তা, ভয়কে ও শঙ্কাকে পাশে ঠেলে আবার জাগছে নতুন স্বাভাবিকতায়।
এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, গত বছর ২০২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিশ্বের জন্য অনিবার্য হয়ে পড়েছিল ‘ঝুঁকি’ শব্দটি। বৈশ্বিক ঝুঁকি আগেও ছিল, তবে করোনা নামের এক ভাইরাস যেন ঝুঁকি মোকাবিলা অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। কত যে জটিলতায় বিশ্ব এখন। প্রথমত, কত দিন স্থায়ী হবে এই করোনা, তা নির্ণয় করা কঠিন। দ্বিতীয়ত, এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির নেতৃত্বের পটবদল, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার হামলার মতো ঝুঁকি। আমাদের দেশে করোনার ভ্যাকসিন চলে আসলেও ইতিমধ্যে করোনার নতুন ধরণ অমিক্রন এর প্রভাব চোখ রাঙাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমবাজারের অস্থিরতা। অনেক শ্রমিকই স্থান পরিবর্তন করেছেন, প্রণোদনার সঠিক বণ্টনসহ নানা বিষয়ে সরকারের ওপর মানুষের আস্থা কমেছে, এমন ঘটনাও দেখা গিয়েছে। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ন্যায় করোনার ফলে অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়নি এবারের ২০২১ এ। মানুষের চলাচল ব্যাহত হলেও কর্মীরা ছিলো সক্রিয়। যদিও কাজের সুযোগ ও পরিধি অনেকটা সংকুচিত হয়েছিল। অনেক মানুষকে বেকারত্বের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। আবার শিক্ষার্থীদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেকে ঝড়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের সমাজে এর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
২১ মানে অপ্রতিরোধ্য, দুর্বার, ভেঙ্গে চুরে করে চুরমার। তারপরও করোনার ভয়াল হাত থেকে রক্ষ পায়নি টগবগে ২০২১। তার মানে এই নয় ২১ তার যৌবন হারিয়ে ফেলেছিল। এই ২০২১ এ আমারা পালন করেছি আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। পালন করেছি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। আমাদের প্রবাসী দেশ ভারতের তুলনায় আমাদের জিডিপির হার তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক দিকে ধাবিত হয়েছে। আবার অস্থিরতার ঘটনাও কম নয়। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজনীতির অঙ্গনে বিএনপি নেতাদের সাইবার যুদ্ধ, বাজারে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধিতে ভোক্তার উত্তপ্ত, ধারাবাহিকভাবে বাস থাবায় ছাত্র-ছাত্রীর প্রাণ যার ঘা এখও শুকায়নি। সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০২১ বেশ ঘটনাবহুল ও তাৎপর্যমূলক একটি বছর ছিলো আমাদের জাতীয় জীবনে। নানা ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছিল, ঘটেছিল উত্থান-পতন। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। আর আমাদের এইভাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলার ফলে অনেকর কাছে ঈর্ষনীয় হয়ে পরেছি আমরা।
ভালো, মন্দ, আনন্দ, বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করা, একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করার সময় এখন বছরের দ্বারপ্রান্ত। আর মাত্র কয়েকদিন। তারপরও ২০২১ আমাদের জীবন থেকে শেষ। যার যার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ভাবনায় বছরটি নানাভাবে মূল্যায়িত হতে পারে। তবে সবার প্রত্যাশা নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে যে যাত্রা শুরু করেছে তা অব্যাহত থাকবে নতুন বছরেও। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার লক্ষ্যে।