জাইমা রহমান কে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এর একটি বক্তব্য কেন্দ্র করে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত সেই উত্তাপে পানি ঢালেন। তিনি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের অভিযোগে ডা. মুরাদ হাসান এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করেননি। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু একই সাথে বিএনপির অনেক নেতৃবৃন্দ অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য করলেও তাদের বিরুদ্ধে দল থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যদিও বিএনপির তরুণ নেতা ইশরাক হোসেন এবং পরবর্তীতে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল তাদের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু দল বা নেতৃত্ব থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জাইমাকে নিয়ে এরকম আলোচনা মুখেই লন্ডনে জোর আলোচনা চলছে যে, জাইমা রহমান ব্রিটিশ রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নয়। জাইমা রহমানকে সম্প্রতিক সময়ে কনজারভেটিভ পার্টির একাধিক বৈঠকে উপস্থিত দেখা গেছে। তিনি কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য হয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এবং খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ রাজনীতিতে জাইমা রহমানকে দেখা যাবে বলেও লন্ডনে বিএনপির একাধিক নেতা জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ বাংলা ইনসাইডারের কাছে নিশ্চিত করেছেন।
জাইমা রহমান ২০০৭ সালে তার বাবা বিএনপির বিতর্কিত এবং দুর্নীতিবাজ নেতা হিসেবে চিহ্নিত তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে আসেন। .২০০৭ সালে লন্ডনে আসার পর থেকে তার দশ বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী, কেউ যদি ১০ বছরের বেশি সময় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে তাহলে তিনি নাগরিকত্ব পেতে পারেন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন জাইমা রহমান ইতিমধ্যে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বার এট ল' করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জাইমা রহমান রাজনীতিতে যুক্ত হতে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা লেবার পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন এবং টিউলিপ সিদ্দিকি সহ একাধিক বাঙালি এখন লেবার পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছেন এবং তারা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছেন। কিন্তু জাইমা রহমান লেবার পার্টির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার সঙ্গে ক্ষমতাসীন ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির যোগাযোগ দেখা গেছে।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বেশ কয়েকজন এমপির সঙ্গে তারেক রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আর সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই জাইমাকে এখন কনজারভেটিভ পার্টির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে। তবে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। একাধিক সূত্র বলছে জাইমা রহমান ইতিমধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য পদ নিয়েছেন এবং পরবর্তী নির্বাচনে বৃহত্তর লন্ডনের কোন একটি আসন থেকে তিনি যেন মনোনয়ন পান সে চেষ্টাও করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময়ে
জাইমা রহমানকে বিএনপির নেতৃত্বে আনার গুঞ্জন ছিল। এই গুঞ্জনের মধ্যেই জানা গেল যে বাংলাদেশের রাজনীতি নয় বরং ব্রিটিশ রাজনীতিতে তিনি আগ্রহী ।এবং সেই ব্যাপারে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্যে প্রচুর বাঙালি বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র টিউলিপ সিদ্দিকী তিন তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন বাঙালি নারী এখন বৃটেনের প্রভাবশালী এমপি। এই বাস্তবতায় জাইমা রহমানের বৃটেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী এ নিয়ে নানারকম আলোচনা চলছে। এটা কি স্রেফ তারেক জিয়ার প্রতিশোধস্পৃহার একটি বহিঃপ্রকাশ। টিউলিপ সিদ্দিকী যেহেতু রাজনীতিতে সফল হয়েছেন তার দেখাদেখি কি তার কন্যা জাইমা রহমান কে তিনি রাজনীতিতে আনতে চাচ্ছেন। নাকি জাইমা রহমান নিজেই স্বপ্রণেদিত হয়ে রাজনীতিতে উৎসাহী এই প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে টিউলিপ সিদ্দিকী যেভাবে একজন দক্ষ এবং মেধাবী রাজনীতিবিদ এবং পার্লামেন্টারি হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন সেভাবে জাইমা রহমান আলো ছড়াতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে।