সারা দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেছে শীতের আমেজ। দেশের কোথাও কোথাও চলছে শৈত্যপ্রবাহ। শীতকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটিকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। গত সোমবার ঢাকার পাশের জেলা টাঙ্গাইলের তাপমাত্রা নেমেছিল শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি, ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এতেই শীতের আমেজ পেয়েছে ঢাকাবাসী।
তবে তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের একটি হিসেব দেখলে আপনার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত পাঁচ বছরে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে মাত্র একবার। আর আশপাশের এলাকা থেকে মূল ঢাকায় তাপমাত্রা থাকছে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। অর্থাৎ সাভার বা টাঙ্গাইলের তুলনায় ঢাকায় শীত পড়ছে কম।
গত ৩০ বছরে ঢাকার আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রার রেকর্ড বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ার কথা। কিন্তু গত ৬ বছরে ঢাকার গড় তাপমাত্রা নিলে তা কোনোভাবেই ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। ব্যতিক্রম ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। ওই দিন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কে শীতকাল ধরা হয়। এ সময়ে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। চট্টগ্রামে ১৩ থেকে ১৬ ডিগ্রি। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীতকালে ৬ থেকে ১০টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। পাঁচ বছরে ঢাকায় মাত্র একবার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। শীতকালে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে শৈত্যপ্রবাহ চলাকালীন ঢাকার তাপমাত্রা বেশির ভাগ সময় ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। এমনকি সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহ চললেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে শৈত্যপ্রবাহ থাকছে না। এর বড় কারণ ঢাকার অতিরিক্ত জনসংখ্যা, ভবন-অবকাঠামো ও যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হওয়া বাড়তি তাপমাত্রা। এখানে সব সময় দেশের অন্য যেকোনো গ্রামীণ এলাকার চেয়ে তাপমাত্রা তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরে শীতের সময়ে শীত না থাকলেও বাড়তি কিছু বিপদ বেড়ে যায়। এ সময়ে শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণকাজ বেড়ে যায়। ইটভাটাগুলো চালু হয়। ফলে শহরে জমে থাকা কুয়াশার সঙ্গে ধোঁয়া আর ধুলা মিলে ধোঁয়াশা তৈরি হয়, যা ঢাকার বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে ফেলে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই দূষিত বায়ুর মধ্যে রাজধানীবাসীকে বসবাস করতে হয়।