ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, জুলাই ৫, ২০২৪ |

EN

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: আওয়ামী লীগের অগ্নিপরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২১

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: আওয়ামী লীগের অগ্নিপরীক্ষা
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনে আপাত অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ক্রমশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে এবং শেষ বিচারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষায় পরিণত হয়েছে। অনেকেই বলছেন, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন একটি টেস্ট কেইস। বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি এবং এই পরিস্থিতিতে জনগণ কী ভাবছে তার একটি বড় প্রতিফলন ঘটবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। 

তৃতীয়বারের মতো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এটি তার প্রাপ্য বলেই অনেকে মনে করেন। কারণ দীর্ঘদিন ধরে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব পালন করার পরও তার গায়ে কোন কলঙ্ক, কালিমা আচঁড় দেয়নি। তাছাড়া তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন উন্নতির ক্ষেত্রেও একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন বলে অনেকে মনে করেন। নারায়ণগঞ্জে তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। কিন্তু এই নির্বাচন শুধু সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচন হিসেবে আর থাকছে না। এই নির্বাচন এখন জাতীয় নির্বাচনের একটি আবহ ধারণ করেছে বলেই অনেকে মনে করেছেন। 

বিএনপি কিছুদিন আগে বলেছিল যে তারা বর্তমান সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। সেই অবস্থান থেকে বিএনপি ভিন্ন আঙ্গিকে সরে এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোতে বিএনপি স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং সেই স্বতন্ত্র অংশগ্রহণের ইতিবাচক ফল তারা পেয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের অনেক জায়গায় তারা বাধার মুখে পড়েননি এবং অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে তারা জয়ী হয়েছেন। যদিও বলা হচ্ছে যে, বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজেরা যতটা জয়ী হয়েছে তার চেয়ে বেশি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। আর সে কারণেই বিএনপি তার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাই নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে বিএনপির নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে। তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জের দীর্ঘদিনের নেতা এবং তাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে বিপুল বিতর্ক থাকার পরও নারায়ণগঞ্জ বাসীদের একটি অংশে তার সমর্থন রয়েছে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে বিএনপির একটি ভালো সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। তৈমুর আলম খন্দকার দাবি করেছেন যে, আওয়ামী লীগের একটি অংশ তাকে সমর্থন দেবে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের যে বিভক্তি-বিভাজন তার প্রতিরূপ নারায়ণগঞ্জ এসে পড়বে কিনা সেটিও একটি দেখার বিষয়। কারণ গত কিছু নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগই। আওয়ামী লীগকে পরাজিত করছে আওয়ামী লীগই। নারায়ণগঞ্জের ক্ষেত্রে কি হবে সেটি একটি দেখার বিষয়। কারণ যদি শেষ পর্যন্ত সেলিনা হায়াত আইভীর বিপক্ষে শামীম ওসমান বা নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি অংশ কাজ করে তাহলে এই নির্বাচনে নাটকীয় ফলাফল অসম্ভব নয়। 

এ নির্বাচনটি শেষ পর্যন্ত আইভীর জনপ্রিয়তা নির্বাচন হচ্ছে না। বরং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সার্বিকভাবে দেশে আওয়ামী লীগের উপর জনগণের মনোভাব কি তার নির্বাচন হচ্ছে। কাজেই এই নির্বাচনটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষায় রূপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জনপ্রিয় নেতা মির্জা আজমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার অবস্থান কতটুকু ধরে রাখতে পারবে সে নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। কারণ এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের একটি মনোভাব জানানোর পথ বলে অনেকে মনে করছেন। একটি সিটি নির্বাচনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সৌজন্যে: বাংলাইনসাইডার