ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।
তারা হলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র জালাল মিয়া, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মোত্তাকিন সাকিন, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ এবং ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ। এই চারজনই ফজলুল হক মুসলিম হলে আবাসিক শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আটক পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে জালাল ছাত্রলীগ নেতা বলে দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। তবে জালাল দাবি করেন, তিনি ১৬ জুলাই ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর সক্রিয় হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে।
দুপুরে আটক হওয়ার সময় জালাল বলেন, ‘আমি আগে ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের উপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। তবে গত ১৬ জুলাই ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করি। এর পর যোগ দিই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে।’
হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় গত জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে যারা পদত্যাগ করেন তাদের একজন জালাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের পর ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। হাসিনার পতনের পর আমি বাড়িতে চলে যাই।’
জালাল দাবি করেন, তিনি ১৬ জুলাইয়ের আগেই ছাত্রলীগ ছাড়তে চেয়েছিলেন, তবে কৌশলগত কারণে তা করেননি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমি সে সময় জুনিয়রদের সাহায্য করতাম। আর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কারা কোথায় থাকছে সেটিও আমি জানিয়ে দিতাম।’
জালালের বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি ছাত্রলীগ করার সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নিজের বিরুদ্ধে অপ্রপাচার চলছে দাবি করে জালাল বলেন, ‘যারা বলছেন, আমি ছাত্রলীগের এজেন্ডা (পিটিয়ে হত্যা) বাস্তবায়ন করছি তাদের উদ্দেশে বলব, আপনারা হলে আসেন, দেখে যান।’
তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় আটক মোত্তাকিন সাকিন ও সুমন মিয়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন বলে জানা গেছে। আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের দাবি, সাকিন ও সুমন আন্দোলনের সময় ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রদের সংগঠিত করেন। তবে আটক আরেক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ, আল হোসেন সাজ্জাদের বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে বুধবার রাতে পিটিয়ে মারা হয় তোফাজ্জল হোসেনকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় তোফাজ্জল হলে ঢুকে পড়েন। এ সময় কয়েক শিক্ষার্থী তাকে ধরে ফেলে আগের দিন হল থেকে ছয়টি মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তোফাজ্জলকে ভাত খেতে দেয়া হয়। এরপর রাত ১০টা থেকে দুই ঘণ্টা পেটানো হয় তাকে। রাত ১২টার দিকে কয়েক শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজন