ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪ |

EN

ইসরাইলি কোম্পানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে নরওয়ে

বিশ্ব বাংলা ডেস্ক | আপডেট: বুধবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪

ইসরাইলি কোম্পানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে নরওয়ে
নরওয়ের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল বিশ্বের বৃহত্তম তহবিলগুলোর মধ্যে একটি। সম্প্রতি এ তহবিলের নৈতিক মানদণ্ডের নতুন ও কঠোর ব্যাখ্যার আলোকে ইসরাইলের কিছু কোম্পানির সঙ্গে তাদের সহযোগিতা শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরাইলের অপরাধমূলক কার্যক্রমে সহযোগিতা করে এমন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছে নরওয়ের এ তহবিল।

বুধবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানায়, নরওয়ের ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল, যা বিশ্বের বৃহত্তম তহবিলগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্বের ৮ হাজার ৮০০ কোম্পানির শেয়ারের ১.৫% মালিক এ তহবিল সম্প্রতি তাদের শেয়ার বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছে। তহবিলের নৈতিক মানদণ্ডের নতুন ব্যাখ্যা অনুসারে, যেসব কোম্পানি ইসরাইলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো এ মানদণ্ড লঙ্ঘন করছে।

নৈতিক নির্দেশিকা এবং পরামর্শ:
বিশ্বের বৃহত্তম সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের জন্য নরওয়ের নৈতিক পরিষদ গত ৩০ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠায়। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই চিঠিতে অনৈতিক করপোরেট আচরণের সম্প্রসারিত সংজ্ঞা সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। এ পরিবর্তনের বিষয়টি আগে কখনও প্রকাশিত হয়নি।

যদিও কতগুলো কোম্পানি বা তাদের নাম ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি, যাদের শেয়ার বিক্রি করা হতে পারে। তবে চিঠিতে বলা হয়েছে, সংখ্যাটি খুব বেশি হবে না। যদি নরওয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড, যাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, নৈতিক পরিষদের পরামর্শ অনুসরণ করে। ইতোমধ্যেই নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি কোম্পানিকে বিনিয়োগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি চিঠিতে উল্লেখ করেছে, নৈতিক নির্দেশিকা অনুযায়ী, সরকারি পেনশন তহবিল গ্লোবাল থেকে ইতোমধ্যেই বাদ দেওয়া কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু কোম্পানিকে বাদ দেওয়ার একটি ভিত্তি রয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ:
নরওয়ের এ তহবিল আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশগত, সামাজিক, এবং প্রশাসনিক (ESG) বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নেতা হিসেবে বিবেচিত। এ তহবিলের আকার এবং প্রভাব বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, নরওয়ের এ তহবিলের নৈতিক পরিদর্শকরা আরও অনেক কোম্পানির কার্যক্রমের পর্যালোচনা শুরু করেছে, যাতে তারা বিনিয়োগের নীতিমালার বাইরে রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করা যায়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন নীতির আওতায় বাদ দেওয়ার পরিধি কিছুটা বাড়তে পারে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৈতিক পরিদর্শকরা যে কোম্পানিগুলোর দিকে নজর দিতে পারে তার মধ্যে রয়েছে RTX করপোরেশন, জেনারেল ইলেকট্রিক এবং জেনারেল ডায়নামিকস। এ কোম্পানিগুলো গাজায় ব্যবহৃত অস্ত্র তৈরি করে বলে বিভিন্ন এনজিও জানিয়েছে। যেখানে ইসরাইলি সামরিক অভিযানে প্রায় ৪১ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। 

যদিও কোম্পানিগুলো মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।

তহবিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নরওয়ের এ তহবিল ইসরাইলে ১৬ বিলিয়ন ক্রোনার বা ১.৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। যা ৭৭টি কোম্পানির মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- রিয়েল এস্টেট, ব্যাংক, এনার্জি এবং টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠান। 

সার্বিক প্রেক্ষাপট:
নরওয়ের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসা এবং বিতর্ক উভয়ই সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো নরওয়ের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং অন্যান্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ ধরনের নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। 

অন্যদিকে, ইসরাইল এবং তার সমর্থকরা এ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে।

তবে নরওয়ের এ সিদ্ধান্ত তাদের নৈতিক বিনিয়োগ নীতির প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করে এবং এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার এবং নৈতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ স্থাপন করা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিণতি:
নরওয়ের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। এ সিদ্ধান্ত ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানিগুলোর ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। 

তবে আগামী দিনগুলোতে এ পদক্ষেপের প্রভাব কতটা গভীর হয় এবং এটি কীভাবে আন্তর্জাতিক বাজারকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়।