ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলের বিয়ে উদযাপন যে রাজকীয় হবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু কতটা রাজকীয় হতে চলেছে, জামনগরে প্রথম প্রাক-বিবাহ উদযাপনে তার আভাস পাওয়া গিয়েছিল। ইতালির বিলাসবহুল ক্রুজে দ্বিতীয় উদযাপনও ছিল বিলাসিতায় মোড়া। প্রাক-বিবাহেই যদি এমন রাজকীয় আয়োজন থাকে, তাহলে বিয়েতে কী হবে! বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। ফোর্বসের রিপোর্ট বলছে, ছোট ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫ হাজার কোটি রুপির বেশি খরচ করেছেন মুকেশ আম্বানি, যা নাকি আম্বানিদের বার্ষিক আয়ের মাত্র ০.৫ শতাংশ।
মেয়ে ইশার বিয়েতেও এত রুপি খরচ করেননি মুকেশ-নীতা। ইশার বিয়েতে ৭০০-৮০০ কোটি রুপি খরচ হয়েছিল। তবে আয়োজনের দিক থেকে তাক লাগানো বিয়ে এই প্রথম, তা নয়। এর আগেও এমন অনেক বিয়ে হয়েছে, যা অম্বানিদের সঙ্গে পুরোদস্তুর পাল্লা দেয়। তালিকায় কারা?
১৯৮১ সালে ইংল্যান্ডের তৎকালীন যুবরাজ চার্লস এবং যুবরানি ডায়ানার বিয়ে, গত কয়েক দশকের সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ বলে মনে করা হয়। রাজপরিবারের বিয়ে। তাই আক্ষরিক অর্থেই রাজকীয় ছিল।
চার্লস এবং ডায়ানার বিয়ের অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন প্রায় তিন হাজার অতিথি। তবে বিয়ের অনুষ্ঠান টিভিতে সম্প্রচারিত হওয়ায় ৭৪টি দেশের প্রায় ৭৫ কোটি নাগরিক সাক্ষী থাকতে পেরেছেন ঐতিহাসিক মুহূর্তের।
সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল গির্জায় বিয়ে হয়েছিল চার্লস এবং ডায়ানার। বিয়েতে ডায়ানা যে গাউন পরেছিলেন, তা পুরোটাই মুক্তার তৈরি। প্রায় ১০ হাজার মুক্তো বসানো গাউনে। বিয়েতে প্রায় ২৭টি কেক কাটা হয়েছিল। রাজপরিবারের বিয়ের খরচ নির্দিষ্ট অংকে বাঁধা মুশকিল। তাই নির্দিষ্ট অংকে বিয়ের খরচ প্রকাশ্যে আসেনি। তবে বিয়ের আয়োজনের খরচ নিয়ে অনুমান করতে বাধা নেই।
একই মঞ্চে দুই ছেলের বিয়ের আয়োজন করেছিলেন সাহারা গ্রুপের কর্ণধার সুব্রত রায়। সুব্রতের দুই ছেলে সুশান্ত এবং সীমান্ত রায় একসঙ্গেই নতুন জীবন শুরু করেছিলেন। মশকরা করে অনেকেই বলেছিলেন, খরচ বাঁচাতেই দুই ছেলের একসাথে বিয়ে দেন সুব্রত।
তবে সেটা যে সত্যি নয়, তা পরে স্পষ্ট হয় বিয়ের খরচ প্রকাশ্যে আসায়। ২০০৪ সালে সুব্রতর বড় ছেলে সুশান্ত বিয়ে করেন লখনউয়ের ব্যবসায়ী-কন্যা রিচাকে। ৬ দিন ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান চলেছিল। অতিথিদের জন্য প্রায় ২৭টি প্রাইভেট জেট এবং ২০০টি মার্সিডিজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
অভিনেত্রী চাঁদনি তুরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ছোট ছেলে সীমান্ত। দুই ছেলের বিয়েতেও ঢেলে আয়োজন করেছিলেন সুব্রত।
বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুই সন্তানের বিয়ের আয়োজনে প্রায় ৫৬০ কোটি রুপি খরচ করেন সুব্রত।
২০১৬ সালে সাবেক নেতা এবং ভারতীয় শিল্পপতি গলি জনার্দন রেড্ডি, মেয়ে ব্রাহ্মণীর বিয়ে দেন হায়দরাবাদ নিবাসী ব্যবসায়ী রাজীব রেড্ডির সঙ্গে। এই বিয়ের অনুষ্ঠানও চোখ ধাঁধিয়েছিল গোটা দেশের।
একটানা পাঁচ দিন ধরে বেঙ্গালুরুর বিলাসবহুল প্রাসাদে বিয়ের আসর বসেছিল। বিয়ের অতিথি তালিকায় রাজনীতিবিদ থেকে বলিউড তারকা থেকে- বাদ ছিল না কেউ। শোনা যায়, প্রায় ৫০ হাজার অতিথির উপস্থিতিতে চারহাত এক হয়।
নিমন্ত্রণের কার্ড বাবদ খরচ হয়েছিল নাকি কয়েক কোটি রুপি। সেখানে গোটা বিয়ের খরচ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছিল, জনার্দন মেয়ের বিয়েতে প্রায় ৫৫০ কোটি রুপি খরচ করেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভুত শিল্পপতি লক্ষ্মী মিত্তাল। ২০০৪ সালে লক্ষ্মীর মেয়ে আনিশা মিত্তাল বিয়ে করেন ব্যবসায়ী অমিত ভাটিয়াকে। একমাত্র মেয়ের বিয়েতে ঢেলে খরচ করেছিলেন লক্ষ্মী। আনিশা-অমিতের বিয়ের আয়োজন দেখেও এমনভাবে চোখ ছানাবড়া হয়েছিল অনেকের।
বিয়ের অনুষ্ঠানটি হয়েছিল প্যারিসে। এই বিয়ে নিয়েও হইচই পড়ে গিয়েছিল চারদিকে। বিয়ের খরচ থেকে আয়োজনের খুঁটিনাটি সব কিছু নিয়েই একটানা আলোচনা চলেছিল। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে ২৫০ কোটি রুপি খরচ করেছিলেন লক্ষ্মী।
তবে এই মুদ্রার অঙ্ক নিয়ে নানা মতামত রয়েছে। অনেক সংস্থার দাবি, ২৫০ নয়, কন্যার বিয়েতে এর চেয়ে অনেক বেশি রুপি খরচ করেছিলেন লক্ষ্মী। অনেকের দাবি, ৫৫০ কোটি রুপির ধারকাছে খরচ হয়েছিল।
সুব্রত রায়, লক্ষ্মী মিত্তাল ছাড়াও, অন্য এক ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্যবসায়ী সুনীল ভাসওয়ানির মেয়ের বিয়ের আয়োজনও হইচই ফেলেছিল। স্টালিয়ন গ্রুপের মালিক এবং সংযুক্ত আমিরাতের ব্যবসায়ী সুনীল মেয়ে সোনমের বিয়েতে ঢেলে খরচ করেন।
সোনম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মুম্বাইয়ের ব্যবসায়ী কমল ফাবিয়ানির সাথে। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সোনম এবং কমল বিয়ে করেন। সেখানকার বেলভেডিয়ার প্যালেসেই বিয়ে সম্পন্ন হয় তাদের।
অতিথি আপ্যায়ন থেকে বরকনের সাজগোজ, খাওয়া-দাওয়া থেকে উদযাপনের খুঁটিনাটি— সব কিছুই বিলাসিতায় মোড়া ছিল। শোনা যায়, সুনীল মেয়ের বিয়েতে প্রায় ২৪০ কোটি রুপি খরচ করেছেন।
সূত্র: আনন্দবাজার