বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিষ্কার বলে দিতে চাই, আন্দোলন করছেন, করেন আন্দোলন। তবে আন্দোলনে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে খবর আছে। খবর আছে। আবারও খেলা হবে। খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, খেলা হবে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দুর্নীতিবাজ কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না- এমন মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের কারও ছাড় নেই, কারও ক্ষমা নেই। এটা শেখের বেটি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দেখিয়ে দেবেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কতটা কঠোর হতে পারেন। দলের নেতাকর্মীদেরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগকে প্রস্তুত হতে হবে, তার আগে আমি বলব, বাড়াবাড়ি করবেন না। সারা বাংলাদেশে সবার উদ্দেশে বলছি, বাড়াবাড়ি করবেন না। ক্ষমতার দাপট কেউ দেখাবেন না। কাউকে ক্ষমা করা হবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি শেখ হাসিনার।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতিবাজরাই এই দেশে বেশি দুর্নীতি দুর্নীতি করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের মধ্যে কত যে দুর্নীতিবাজ একটু খুঁজে দেখেন, পেয়ে যাবেন। দুর্নীতিবাজ আছে আশে-পাশে। দুর্নীতিবাজের ক্ষমা নেই। বিএনপির দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপির দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার থাকে না। কারণ, বিএনপি মানেই দুর্নীতিবাজ। জাতীয়তাবাদী দুর্নীতিবাজ দল, আমরা শক্তি আমরা বল।
বিএনপি নেতা তারেক রহমানের দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারেক রহমান পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। কিসের জন্য অভিযোগ? হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার। অভিযোগ দুর্নীতির। এখন বিএনপি নেতারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। আপনাদের এক নাম্বার নেতাই তো দুর্নীতিবাজ, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। সব তদন্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বৈধ নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওই দুর্নীতিবাজকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে হবে, বিচার করতে হবে। সব তদন্ত হবে, কে কত টাকা বানিয়েছেন।
কেন পালটাপালটির অপবাদ: সাংবাদিকদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা বলেছিলাম বছরব্যাপী উদযাপন করব। সেখানে খবর হয় আমরা নাকি পালটাপালটি করছি। গতকাল আমরা সাইকেল র্যালি করেছি, বিএনপির কি কিছু ছিল? তাহলে কেন এই অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন? আমরা সারা বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করব। আমাদের কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হবে। আগস্ট মাসের পরে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ হবে। সে সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, লন্ডনে বসে কর্মসূচি দেয় মেইড ইন লন্ডন। নতুন নেতৃত্ব পাঠায়, ফরমান আকারে। এই নেতৃত্বের নাম মেইড ইন লন্ডন।
বিএনপি দালালি করতে চেয়েছিল পাত্তা পায়নি: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি নেতাদের অভিনন্দন জানানোর কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, দালালি করতে চেয়েছিলেন পারেননি, পাত্তা পাননি। যত দোষ নন্দঘোষ আওয়ামী লীগের। আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব। আর আপনারা দাস হয়েও ভারতের সমর্থন চান। ক্ষমতার জন্য আপনাদের যে কারও দাসত্ব মেনে নিতে কোনো আপত্তি নেই। আমরা বন্ধু আছি বন্ধু থাকব। বিদেশে আমাদের সবাই বন্ধু কেউ আমাদের প্রভু নেই।
বিএনপি ষড়যন্ত্র করে আজকে মিটিং দিয়েছে: আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কয়েক দিন আগে নির্বাচন হয়েছে, উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশে এখন শান্তি দরকার। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য নতুন সরকারের সময় দরকার। বিএনপিকে বলতে চাই, আবার ষড়যন্ত্র করে আজকে মিটিং দিয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা দেব না, এটা দেশে আইন, কোর্ট। কোর্ট যদি মুক্তি দেয় আমাদের আপত্তি নাই।
রাজপথে একটু বেশি থাকতে হবে: সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন থাকবে, জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, বাংলাদেশ নিরাপদে থাকবে। আমরা পেট ভরে খেতে পারব। শান্তিতে ঘুমাতে পারব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা সংসদে আছি, সরকারে আছি, রাজপথেও আছি। তবে রাজপথে একটু বেশি থাকতে হবে, কারণ ওই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি মিলে আবার ষড়যন্ত্র করতে চেষ্টা করবে।
খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আদালতে যেতে হবে: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী তারেক রহমানকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় না বলেই আদালতের দরজায় যায় না। খালেদা জিয়াকে যদি মুক্ত করতে হয় তাহলে আদালতের দরজায় যেতে হবে। অথবা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে হবে।
বিএনপি আসলে খালেদা জিয়ার সুস্থতা চায় না: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি আসলে খালেদা জিয়ার সুস্থতা চায় না। তারা চায় এই অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করতে।
আঘাত আসলে পালটা আঘাত: আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ এবং আগামী দিনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে এক এবং অভিন্ন আছি। আওয়ামী লীগ হলো ফিনিক্স পাখি। যার কোনো ধ্বংস নেই। আঘাত এলে আমরা পালটা আঘাত দিতে পারি।
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। তবে রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের দিনে ক্ষমতাসীন দলের এই আলোচনা সভাও সমাবেশে রূপ নেয়। বেলা ৩টায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের পর থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে পৃথক মিছিল নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৃথক মিছিল নিয়ে সভায় উপস্থিত হন।
এদিকে সভায় আসা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড শাখার নেতাকর্মীদের ব্যানার নিয়ে বেশ বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও নগর নেতারা বারবার ব্যানার নামানোর অনুরোধ করলে ও নির্দেশ দিলেও তারা তা অমান্য করেন। এ সময় নেতাদের অসহায়ত্ত প্রকাশ করতেও দেখা যায়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ মান্নাফির সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তর্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সহ-সভাপতি শহিদ সেরনিয়াবাত, নুরুল আমিন রুহুল প্রমুখ। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও নগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।