Can't found in the image content. ‘গাধার পিঠে’ চড়েই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে পাকিস্তান! | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

‘গাধার পিঠে’ চড়েই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে পাকিস্তান!

বিশ্ব বাংলা ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জুন ১৩, ২০২৪

‘গাধার পিঠে’ চড়েই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে পাকিস্তান!
পাকিস্তানে হু হু করে বাড়ছে গাধার সংখ্যা। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক বছরে দেশটিতে গাধার সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ। বর্তমানে সে দেশে মোট গাধা রয়েছে ৫৯ লাখ! বিগত কয়েক বছর ধরেই গাধা পালনের ব্যাপারে তৎপর পাকিস্তান। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-২০২০ সালে পাকিস্তানে গাধার সংখ্যা ছিল ৫৫ লাখ। তারপর থেকে প্রতি বছর লাখেরও বেশি গাধা বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশটিতে। গত চার বছরে গাধার সংখ্যা চার লাখ বেড়েছে পাকিস্তানে।

কিন্তু ইমরান-শাহবাজের দেশ কেন গাধার সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর জোর দিল? সেই প্রসঙ্গে আসার আগে জেনে নেওয়া যাক পাকিস্তানের বর্তমান আর্থিক অবস্থার বিষয়ে। 

বিগত কয়েক বছর ধরে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে পাকিস্তান। শাহবাজ শরিফের নতুন সরকার গঠনের পরেও চিত্রটা তেমন পরিবর্তন হয়নি। মানুষ ঠিকমতো খেতে পাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। জনগণের মাথার ওপর ঝুলছে বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা। এমন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে শাহবাজ সরকার। তবুও অবস্থার তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। কৃষিক্ষেত্র ছাড়া বাকি ক্ষেত্রগুলোতে তেমন উন্নতি করতে পারেনি ভারতের চির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটি।

মঙ্গলবার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব ২০২৩-২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশ করেছেন। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার দেশের আর্থিক উন্নতি নিয়ে যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল, তা ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছে।
পাক সরকার চেয়েছিল গত অর্থবছরে তাদের জিডিপি বৃদ্ধি হোক ৩.৫ শতাংশ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারেনি পাকিস্তান। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ২.৩৮ শতাংশ।

কৃষিক্ষেত্র ছাড়া মোটামুটি বাকি সব ক্ষেত্রেই বৃদ্ধির হার লক্ষ্যমাত্রার নিচে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিল্প ক্ষেত্রে বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল ৩.৪ শতাংশ। সেখানে এক বছরে পাকিস্তান শিল্প ক্ষেত্রে বৃদ্ধি করেছে মাত্র ১.২১ শতাংশ। পরিষেবা খাতে আর্থিক বৃদ্ধি পেয়েছে ১.২১ শতাংশ।

তবে কৃষি খাতে গত ১৯ বছরে রেকর্ড করেছে পাকিস্তান। এই খাতে আর্থিক বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.২৫ শতাংশ। দেশটির অর্থমন্ত্রীর কথায়, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তিই হলো কৃষি।

দেশটির রাজস্ব ঘাটতি গত বছরের মতোই। সেবারও ঘাটতির হার ছিল ৩.৭ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতি রয়ে গেছে ৪.২ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, যা পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থার জন্য সতর্কবার্তা।

২০২২ সালে আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। গত দুবছর ধরে মূল্যবৃদ্ধির জন্য নাজেহাল অবস্থা দেশটির নাগরিকদের। খাবার নিয়ে সে দেশের মানুষকে প্রকাশ্য রাস্তায় মারপিটও করতে দেখা গেছে একাধিক বার।

পাকিস্তানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমার নাম নেই। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে আমজনতার। ২০২৩ সালে মূল্যবৃদ্ধির হার পৌঁছেছিল ৩৮ শতাংশে। আর্থিক সঙ্কট সামাল দিতে টালমাটাল অবস্থা তাদের।

এহেন আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে গাধার পালন বৃদ্ধি করছে পাকিস্তান। সেসব গাধা বিদেশে, বিশেষ করে চীনে রপ্তানি করে আর্থিক লাভের আশা করছে শাহবাজ সরকার। মূলত চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্ব বহু পুরনো। সেই বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়েই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পাকিস্তান।

কিন্তু চীনে কেন গাধা রপ্তানি করতে চায় পাকিস্তান? প্রধানত মালবাহী হিসেবে এই প্রাণির ব্যবহার রয়েছে গোটা বিশ্বেই। তাই এই গাধাই বিশ্ব বাণিজ্য বাজারে অন্যতম চর্চিত বিষয়। গাধা নিয়েই মূলত দড়ি টানাটানি চলছে চীন এবং আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে। এমন অবস্থায় নিজের ‘বন্ধু’কে গাধা পাঠিয়ে সাহায্য করতে চায় পাকিস্তান। 

আর চীনের কাছে গাধা এত অপরিহার্য হওয়ার কারণ, চীনা বাজারে ইজিয়াও নামে একটা ওষুধের চাহিদা তুঙ্গে। সেই ওষুধ তৈরি করতে মূলত প্রয়োজন গাধার চামড়ার। সেই চামড়া সংগ্রহ করতেই বিগত কয়েক বছরে বেড়েছে গাধা হত্যার ঘটনা। শুধু তা-ই নয়, চোরাচালানকারীদের নজরেও রয়েছে গাধা।

ইজিয়াও নিয়ে আলোচনা এবং সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম দখল করলেও, চীনে এই ওষুধের ব্যবহার বহু পুরনো। ১৬৪৪ সাল থেকে এই ওষুধের ব্যবহার হয়ে আসছে দেশটিতে। সে সময় সাধারণত রাজপরিবারের মধ্যেই এই ওষুধের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এখন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যেই এই ওষুধের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

চীনাদের বিশ্বাস, এই ওষুধ রক্ত পরিস্রুত করে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গাধার চামড়া থেকে বের হওয়া এক ধরনের তরল ওই ইজিয়াও তৈরির অন্যতম প্রধান উপকরণ। ওষুধটির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চীনে টান পড়তে থাকে গাধার সংখ্যাও। নিজ দেশে গাধার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণেই চীন মূলত বিদেশ থেকে গাধার চামড়া আমদানি শুরু করে।

সেক্ষেত্রে তারা গাধার চামড়া জোগাড় করার জন্য নির্ভর করতে শুরু করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ওপর। কিন্তু এই গাধা নিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বিরোধ চরমে ওঠে। চীনকে গাধা সরবরাহ করতে ‘অসম্মত’ হয় আফ্রিকার দেশগুলো। তার পরই গাধার খোঁজে অন্যান্য দেশের দিকে নজর দেয় চীন। এমন অবস্থায় চীনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে পাকিস্তান। সূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া।