ভোট শেষ, ফল প্রকাশও হয়ে গেছে। এখন পালা সরকার গঠনের।
কিন্তু সরকার গঠন কে করবে? এনডিএ নাকি ইন্ডিয়া? এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এমনিতে মমতার দুর্গে এবারও হানা দিতে পারল না ক্ষমতাসীন বিজেপি। বুথ ফেরত সমীক্ষা ভুল প্রমাণ করে, এবারও বাংলায় নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ২৯, বিজেপি ১২, কংগ্রেস এক। এবারও খাতা খুলতে পারলো না সিপিআইএম। এবারও বামেদের শূন্য হাতে ফিরতে হলো। তবে তাদের একটাই ভরসা, ভোট শতাংশে দেড় থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশ।
অপরদিকে, ৫৪৫ আসনে বিজেপি একক ক্ষমতায় পেয়েছে ২৪০ আসন, কংগ্রেস ৯৯ এবং অন্যান্যরা পেয়েছে ২০৪ আসন। ফলে সব মিলিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’ (এনডিএ) পেয়েছে ২৯৪ আসনে। অন্যদিকে, তাদের প্রতিপক্ষ জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ এলায়েন্স’ (আইএনডিআইএ বা ইন্ডিয়া) পেয়েছে ২৩২ আসনে। অন্যান্য পেয়েছে ১৭ আসন।
এই আবহে কি বিজেপি সরকার গড়তে পারবে? যদিও ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন। খালি চোখে দেখলে মনে হবে এনডিএ তার অনেক বেশি পেয়েছে। ফলে সরকার গড়তে সমস্যা কোথায়? কিন্তু সরকার গড়তে হলে এনডিএ জোট শরিক প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সমান ভূমিকা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল যদি এনডিএ ছেড়ে বের হয়ে যায় তাহলে বিজেপির ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সরকার গড়া কঠিন হয়ে পড়বে। আর এই সন্দেহ তৈরি করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট।
ইতিমধ্যে জানা যাচ্ছে, এনডিএ জোটশরিক দুটি দলকে ভাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে কংগ্রেস। প্রথমটি বিহারে নিতিশ কুমারের দল - জনতা দল ইউনাইটেড -জেডি(ইউ), অপরটি অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর দল - তেলেগু দেশম পার্টি(টিডিপি)। যথাক্রমে এই দুই দল এবারের লোকসভায় আসন পেয়েছে ১২ এবং ১৬ আসন। সে ক্ষেত্রে দুই আসনের যোগফল ২৮টি আসন এনডিএ থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে বিজেপি জোট এনডিএর হাতে পড়ে রইবে ২৬৬ আসন। ফলে বিজেপি নেতৃত্বেধীন এনডিএ জোট সরকার গড়তে পারবে না।
ফলে ইন্ডিয়া আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেই কাজ করতে। ইতিমধ্যেই এ কাজে দায়িত্ব পড়েছে তিন দলের নেতার উপর। কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার এবং পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তারা যদি এই কাজে সাফল্য পায় তাহলে বিজেপির পক্ষে সরকার গড়া এক প্রকার মুশকিল।
মঙ্গলবার লোকসভার ফল প্রকাশের পরই দিল্লিতে কংগ্রেসের তরফে মল্লিকার্জুন এবং রাহুল গান্ধী জানিয়ে দিয়েছে, বুধবার(৫ জুন) ইন্ডিয়া'র বৈঠক হবে। সেখানেই নানান বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে ফলপ্রকাশের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে ইন্ডিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার আবেদন করছি। ফলে এখন ইন্ডিয়া জোটের এখন মূল লক্ষ্য হল, যে করেই হোক বিজেপির জোট শরিকদের ভাগিয়ে নিজেদের দলে নেওয়া। আর এতে যদি তারা সফল হতে পারে তাহলে বলা যেতেই পারে জয় পেয়েও বিজেপি সরকার গড়তে পারবে না।