ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

সহজে পুষ্টি লাভের উপায়

স্বাস্থ্য ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, জুন ১, ২০২৪

সহজে পুষ্টি লাভের উপায়
প্রতিদিন আমরা যেসব খাবার খাই সেগুলোর পুষ্টিমান সম্পর্কে যদি আমাদের জানা থাকে তাহলে আমরা সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারব। গাজর-টমেটো-পাকা পেঁপেতে আছে বিটা-ক্যারোটিন। এগুলো ধমনির মধ্যে কোলেস্টেরল জমতে দেয় না। আবার গাজর ও পেঁপেতে যে পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ আছে এবং যেভাবে আছে তা সহজেই আমাদের ত্বক গ্রহণ করতে পারে। তাই ত্বকের লাবণ্য বাড়াতে তা অত্যন্ত কার্যকর। বিকালের নাশতা হিসাবে ভুট্টা খাওয়া যেতে পারে। এতে আছে ভিটামিন ‘এ’ ও জটিল শর্করা। ডায়াবেটিস রোগী, যাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রবণতা আছে, তাদের খাবারে ভুট্টা যুক্ত করলে উপকার পাওয়া যায়।

শরীরের মধ্যে যতটুকু ভিটামিন ‘সি’ দরকার সেটা আমরা খাবারের মাধ্যমে পেতে পারি। সব ধরনের লেবু, কাঁচামরিচ, কমলা, আমলকী, পেয়ারা, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘সি’ আছে। কাঁচামরিচ, ধনিয়াপাতা ও পুদিনাপাতার ভর্তা ভিটামিন ‘সি’ ও লৌহের উৎস। যা রক্তস্বল্পতায় কার্যকরী। বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, তেল, মাখন, আটা ও সব উদ্ভিজ্জ তেলই ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ। ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুলের চেয়ে খাবার থেকে ভিটামিন ‘ই’ গ্রহণ করলে ভালো হয়। এটি ত্বক ও চুলের ওপর এতো বেশি প্রভাব বিস্তার করে যে, একে ‘ইয়ুথ ভিটামিনও’ বলা হয়।

ভিটামিন ‘এ’ চোখের স্বাস্থ্যরক্ষার পাশাপাশি ত্বক, চুল, স্নায়ুতন্ত্রের উন্নতি ঘটায়। এটি ত্বকের কমনীয়তা বৃদ্ধি করে ও বার্ধক্য রোধে সাহায্য করে। ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যাবে গাজর, মিষ্টিকুমড়া, পাকা আম, পাকা পেঁপের মধ্যে। কডলিভার তেল ভিটামিন ‘এ’র উত্তম উৎস। গাজর, টমেটো, আপেল, কাঁচামরিচ, সবুজ শাকসবজি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। কলিজা, ডিমের কুসুম, মাখন, পনির, মাছ, মাছের তেল ভিটামিন ‘ডি’-এর উৎস। এর অভাবে বাড়ন্ত শিশুদের রিকেট নামক রোগ হয়। এতে হাত ও পায়ের হাড় বাঁকা হয়ে যায়। তেমনি ক্যালসিয়ামের অভাবে বড়দের হাড় ভঙ্গুর ও ক্ষয় হয়ে যায়। এ জন্য খেতে হবে-দুধ ও দুধজাত খাবার, ছোট মাছ, শুঁটকি মাছ, ডাল, পোস্তদানা ইত্যাদি। ডালের মধ্যে ভিটামিন ‘বি’ পাওয়া যায়। যদি ডাল দিয়ে সবজি রান্না করা হয়, তাহলে একই সঙ্গে ভিটামিন ‘বি’ চর্বি ও খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যাবে।

প্রোটিন পৃথকভাবে না খেয়ে যদি চাল ও আটার সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়, তাহলে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। যেমন-খিচুড়ি, ডালের পিঠা অর্থাৎ চালের গুঁড়া বা আটা-ময়দার সঙ্গে বেসনের মিশ্রণ, কালাইয়ের রুটি, দুধ-রুটি, ডাল-রুটি, দুধ-মুড়ি বা খই, পরিজ, দুধ-সুজি বা সাগু বা বার্লি ইত্যাদি। অঙ্কুরিত ছোলা, শিমের বিচি, বাদাম, বুট বা মটর ভাজা এগুলোতে প্রচুর আমিষ আছে এবং এগুলো সহজলভ্য। যেসব সবজি খোসাসহ রান্না করা যায়, সেগুলো খোসাসহ রান্না করা উচিত। সবজি সিদ্ধ করে পানি ফেলে দিলে এর স্বাদ ও পুষ্টি দুটিই নষ্ট হয়। আবার ভাজা সবজির চেয়ে কম পানি দিয়ে সিদ্ধ করা সবজিতে পুষ্টির অপচয় কম হয়। দুধ ও তেল বারবার ফুটালে বিষাক্ত হয়ে যায়। রান্নায় সোডা ব্যবহার করলে এর খাদ্যগুণ অনেকখানি নষ্ট হয়। এজন্য চটপটির মটরের ‘বি’ ভিটামিন থাকে না বললে চলে।

কেক-পেস্ট্রি আইসক্রিম দেহে ক্যালরি ও ফ্যাট বাড়িয়ে দেয়। চিপ্স, চানাচুর, সিঙ্গাড়া, সমুচা, মোগলাই পরোটার ক্ষেত্রেও একই কথা। এদিকে কোমলপানীয়ের পরিবর্তে লেবুর শরবত, লেবু-চা অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। ভোজ্যতেলের মধ্যে অলিভ অয়েল, রাইস ব্রান অয়েল, সরিষার তেল দেহের জন্য খুবই ভালো। তবে অলিভ অয়েলের দাম বেশি বলে সবার সাধ্যের মধ্যে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তবে এসব তেলে থাকে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। যা হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বাদাম ও পাঁপর তেলে না ভেজে সেঁকে খেলে ভালো হয়। শুকনো লালমরিচের পরিবর্তে কাঁচামরিচ ও গোলমরিচ খাওয়া ভালো।

সঠিক খাদ্যই স্বাস্থ্যরক্ষার মূল ভিত্তি। সঠিক খাবারের মাধ্যমেই আমাদের শরীর গঠন ও সুস্থভাবে বাঁচা নির্ভর করে। এদিকে প্রকৃতি প্রদত্ত স্বাভাবিক খাদ্য শরীরের ভেতরে অনেক সহজে সঠিক জায়গায় গিয়ে রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।

লেখক:  আখতারুন নাহার আলো, চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।