ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

যেভাবে ‘কসাই’ খ্যাত জিহাদকে নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ

ওপার বাংলা ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, মে ২৫, ২০২৪

যেভাবে ‘কসাই’ খ্যাত জিহাদকে নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহাংশ উদ্ধারে তল্লাশি চালাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ (সিআইডি)।  

গতকালের পর শনিবার (২৫ মে) দেহাংশ তল্লাশির কাজ শুরু করেছে রাজ্যর বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

আনারের দেহাংশ উদ্ধারে খালে ফেলা হচ্ছে জাল। পাশাপাশি ‘কসাই’ খ্যাত জিহাদ হাওলাদারকে আনা হচ্ছে অভিজাত আবাসিক এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে। একই সঙ্গে অপর এক তথ্যে জানা যাচ্ছে, আজই জিহাদকে জেরা করার জন্য কলকাতায় আসছে বাংলাদেশের চারজনের একটি বিশেষ টিম। তবে সরকারিভাবে এর কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জিহাদকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হবে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে। সেখানে জিহাদের কাছ থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খানুভাবে জানতে চাওয়া হবে কীভাবে সেই রাতের নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। অর্থাৎ অভিনয় করে জিহাদ দেখাবে, ১৩ মে রাতে তারা কীভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং দেহ কোথায় কীভাবে টুকরো করে। প্রতিটা বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খানুভাবে জিহাদ তুলে ধরবে পুলিশের সামনে। এসব ঘটনা ভিডিও রেকর্ড করা হবে বলে একটি সূত্র মারফত জানা গেছে। এরপরই তাকে ফের নিউটাউনের ভাঙ্গর অঞ্চলের কৃষ্ণমাটি খালের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। তাকে সামনে রেখে উদ্ধার চালাবে।

বৃহস্পতিবার সকালে গোপালনগর থানার অন্তর্গত বনগা থেকে জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এরপরই ওই রাতেই তার সন্ধান দেওয়া স্থানে লাশের দেহাংশ খুঁজতে তাকে নিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু অন্ধকারে কারণে উদ্ধার কাজে বিঘ্ন ঘটে। এরপর শুক্রবার জিহাদকে তোলা হয় বারাসাত আদালতে। পুলিশ তাকে ১২ দিনের রিমান্ডে নেয়। আদালত থেকেই জিহাদকে সরাসরি নিয়ে আসা হয় খালের সামনে। তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু খালে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা থাকায় তল্লাশি কার্যে বিঘ্ন ঘটেছিল। এরপর পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সিদ্ধান্ত নেয় আগে কচুরিপানা সরানো হবে।

পুলিশের তথ্য মতে, ১৩ মে রাতে ওই ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয় এমপি আনারকে। এরপর ১৪ মে বিকেল ৫টা থেকে ফ্ল্যাট ছাড়তে শুরু করেন হত্যাকারীরা। ১৪ মে রাতের অন্ধকারে খালের বিভিন্ন অংশে পলিথিনে মোড়ানো লাশের টুকরো ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। স্থানীয়দের অভিমত ১৪-২৫ মে অর্থাৎ ১১ দিনে দেহাংশের কতটা উদ্ধার হবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন থাকছে। কারণ তারা জানাচ্ছে, এমনিতে খালে পানি কম থাকে কিন্তু একদিনে বেশ ভারী বৃষ্টি হয়েছে ওই অঞ্চলে। যে কারণে পানি বেড়েছে। এর ফলে পচনশীল প্লাস্টিক ভেসে যাওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশ জানিয়েছিল, অভিযুক্ত জিহাদ বাংলাদেশি এবং একজন ‘দক্ষ কসাই’। অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে বাস করছিলেন তিনি। জেরায় জানিয়েছেন, তার নাম জিহাদ হাওলাদার, বাবা জয়নাল হাওলাদার খুলনার বাসিন্দা। দুই মাস আগে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন।  

জিহাদ জেরায় আরও স্বীকার করেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে কীভাবে তিনিসহ আরও চারজন এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর তারা ফ্ল্যাটে মরদেহ টুকরো টুকরো করেন। পরিচয় নষ্ট করার জন্য মরদেহের মাংস কিমা করে পলি প্যাকে রাখেন, হাড় ছোট ছোট টুকরো করেন। তারপর প্যাকেটগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে খালে ফেলে দেয়।  

শুক্রবার জিহাদকে এজলাসে তোলা হলে, রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের তরফে, নৃশংস হত্যার অভিযোগে তার নামে মামলা দায়ের করে। তাকে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী, ৩৬৪, ৩০২, ২০১ এবং ১২০বি -এই চার ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটাই জামিন অযোগ্য ধারা। ৩৬৪ অর্থাৎ হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ। ৩০২ অপরাধমূলক নরহত্যা। ২০১ তথ্য লোপাট, অর্থাৎ অস্ত্র এবং দেহ প্ল্যান করে সরিয়ে ফেলা এবং ১২০ বি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়)। অর্থাৎ এই ধরনের মামলায় সর্বোচ্চ রায় হিসেবে বিচারক আমৃত্যু যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে। রাজ্য পুলিশের তরফে তাকে, একজন দক্ষ ‘কসাই’ হিসেবে বিচারকের সামনে পেশ করেছে।

গত ১২ মে ভারতের কলকাতায় চিকিৎসার জন্য যান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। বুধবার (২২ মে) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, কলকাতায় এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামানের ঢাকার দুই বাসায় দুই-তিন মাস আগেই সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তিনিই এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড।