রাত পোহালেই ভোট। উত্তাপ বাড়ছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায়। প্রচার-প্রচারণা,গণসংযোগ, মিছিল-মিটিংয়ে প্রার্থীরা একে অপরের থেকে ছিলেন না পিছিয়ে। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে উত্তেজনা বাড়িয়েছে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বাকযুদ্ধ। এ দুই প্রার্থী হলেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের ভগ্নিপতি মামুনুর রশীদ ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার। ১৯ মে রাত বারোটায় শেষ হয় সকল প্রকার প্রচার প্রচারণা কার্যক্রম।
মঙ্গলবার (২১ মে) এ উপজেলায় চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী, দুজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং তিনজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানপ্রার্থী প্রতীদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আনারস প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ বর্তমানে রায়পুর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং টিউবওয়েল প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আইনজীবী মারুফ বিন জাকারিয়া বর্তমানে রায়পুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তারা আগের পদে পুনরায় প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার মোটরসাইকেল প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। তিনি চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একই প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।
মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আলতাফ হোসেনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুনুর রশীদ। তার প্রতিটি পথসভায় বিপুল সংখ্যক সাধারণ ভোটারের উপস্থিতি ভোটের হিসাব পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন ভোটার জানান, আলতাফ হোসেন হাওলাদার অতীতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকলেও বর্তমানে মামুনুর রশীদের গণজোয়ার আলতাফ হোসেন হাওলাদারের নিজ ইউনিয়নের ভোটের হিসাবেও পাল্টে দিতে পারে।
আবার কেউ কেউ মনে করছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে আলতাফ হোসেন হাওলাদার বিজয়ী হয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে দুদিকেই রয়েছে সমান ঝুঁকি। গত কয়েক দিনে প্রচার-প্রচারণায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ ও সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদারের কর্মী সমর্থকদের মাঝে তুমুল উত্তেজনা দেখা গেছে। বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন এ দুই চেয়ারম্যানপ্রার্থী ও তার সমর্থকরা।
সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত সাধারণ ভোটাররা। আদৌ সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছেন উপজেলাবাসী। এ দুই চেয়ারম্যানপ্রার্থীর বাকযুদ্ধের কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশন থেকে আলতাফ হোসেন হাওলাদারের সমর্থক ও দক্ষিণ চর বংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু জাফর মিন্টু ফরায়েজিকে শোকজ করা হয়েছে।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, গত ১৬ মে লক্ষ্মীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রিয়াংকা দত্ত স্বাক্ষরিত একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করেন।
মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আলতাফ হোসেন হাওলাদারের সমর্থক ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু জাফর মিন্টু ফরায়েজি আনারস প্রীতিকের প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকন এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মুন্সিকে নিয়ে বিভিন্ন রকম মানহানিকার বক্তব্য ও উসকানিমূলক বক্তব্যের ৭ মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরেই শুরু হয় পাল্টাপাল্টি উস্কানিমূলক বক্তব্য।
ভাইরাল হওয়া ৭ মিনিটের বক্তব্যে আবু জাফরকে বলতে শোনা যায়, আনারস প্রীতিকের প্রার্থী মামুনুর রশীদের বাবা রাজাকার ছিলেন, এবং মোহাম্মদ আলী খোকন অবৈধ টাকার মালিক, তিনি এই অবৈধ টাকা দিয়ে রায়পুরের রাজনীতি ধ্বংস করছেন এবং এডভোকেট মিজানুর রহমান মুন্সি একটা হিজরা।
এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দফায় দফায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে মামুনুর রশীদের সমর্থকরা।
মামুনুর রশীদ বলেন, ভোটের দিন বহিরাগত এনে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চায় আলতাফ হোসেন হাওলাদার।ভোটারদের হুমকি দিচ্ছেন। তার পক্ষে কাজ না করলে শহরে গেলে মারধরের হুমকি দেন।
তবে নির্বাচনী আমেজের সঙ্গে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে বহিরাগতরা আনাগোনাও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সাধারণ ভোটাররা। সহিংসতার শঙ্কায় ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয়ও পাচ্ছেন অনেকে। সাধারণ ভোটারদের দাবি ২০১৮সালের ভোটের পর এই সহিংসতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। ১৮' পরবর্তী সময়ে অঙ্গহানির ঘটনা ঘটে অন্তত ১০টি।
দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে ১৯ মে রোববার সকাল, সন্ধ্যায় পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে বাড়িয়ে দেন সাধারণ ভোটারদের সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা।
সব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, '১১জন ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনে কাজ করবেন। নির্বাচনের দিন যদি কেউ প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে তাহলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো। এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠ সম্পুর্ণ স্বাভাবিক আছে। ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য মাঠে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও প্রশাসন প্রস্তুত আছে।