রাজধানীতে ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটার গতিসীমার মধ্যে চালানো অনেক কঠিন, এটি মহাসড়কে চালানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে তেজগাঁওয়ে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে ‘ট্রাফিক সেফটি অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম অ্যান্ড রোড সেফটি স্লোগান কন্টেস্ট-২০২৪’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) উদ্যোগে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি)।
একদিকে ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেল অনুমোদন হচ্ছে, অন্যদিকে সড়কে চলাচলে গতিসীমা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৩০ কিলোমিটার, তবে সড়কে চলতে গিয়ে এই গতিতে গাড়ি খেই হারিয়ে ফেলবে। এটা সাংঘর্ষিক নয় কি? আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, দুটি কথাই ঠিক। গতিসীমার কথা বলেছে, সেটিও ঠিক আবার সিসির বিষয়টিও ঠিক। যে আইনটি প্রচলিত রয়েছে সেটি বিআরটিএ’র মাধ্যমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় করে থাকে। আর মোটরসাইকেলের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হয়। আমাদের রাজধানীতে এরকম সিসি মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটার গতিসীসার মধ্যে চালানো অনেক কঠিন। হয়তো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে, সেটি দেখতে চাই হাইওয়েতে, কারণ এই নির্দেশনা মতে রাজধানীতে চালানো কঠিন।
তিনি বলেন, অন্যান্য দেশেও যদি আমরা দেখি তবে সেখানে গতিসীমা কম, সেই তুলনায় আমাদের ঢাকা শহরে গতিসীমা অনেক বেশি।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এআই বেজ রোবটিক সিস্টেম চালু করা যায় কি না—এমন এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এআই বেজ ট্রাফিক সিস্টেম চালুর বিষয়ে চিন্তা করা হয়েছে। একটি পরিকল্পনাপত্র পুলিশ সদর দপ্তরে রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও চিন্তা চলছে। রাজধানীতে যদি আমরা এটি করতে পারি তবে এআই বেজ সিসি ক্যামেরার ওপর ভিত্তি করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালা করতে সক্ষম হব।
সড়কের পাশে যত্রতত্র গাড়ির অবৈধ পার্কিং করে রাখা হয়। এজন্য সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা ডিএমপি নিচ্ছে কি না—এক শিক্ষার্থী করা প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীতে বিল্ডিং নির্মাণ করতে গেলেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। সেখানে রাজউকের কিছু শর্ত থাকে। যেমন, কতটুকু জায়গা ছাড়া হবে, পার্কিং লট রাখাসহ নানা শর্ত থাকে। কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ সেগুলো মানছে না। এদিকে, আমরা নিজেরাও অনেক অসচেতন, যতটুকু আইন রয়েছে ততটুকু আমরা মানছি না। ভবন মালিক, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, আমরা কেউই আইন ঠিকমতো মানছি না। সকলের সচেতন হওয়ার দরকার রয়েছে। একটি ভবন নির্মাণ করলে সেখানে পার্কিং রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। নিজের গাড়ি ও মেহমানের গাড়িটিও যাতে পার্কিং করে রাখা যায়। এতে সড়কে আর অবৈধ পার্কিং করার প্রয়োজন হয় না। সড়কের পাশে অবৈধ পার্কিংয়ের বিষয়ে আমামাদের ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত কাজ করছে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ লোকসংখ্যা, সে অনুযায়ী সড়কে পথচারী ও গাড়ির চাপে মানুষের চাপা পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ঢাকা সোনারগাঁও ক্রসিং যদি ধরি, সেখানে ৩ লাখ লোক প্রতিদিন সড়ক পাড়াপাড় হয়। যদিও সেখানে আন্ডারপাস, ফুটওভার ব্রিজ বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। সুতরাং বিশ্বের বিভিন্ন শহরের তুলানায় ঢাকার চিত্র অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি আমাদের শহর ভালো চলছে আবার অন্যান্য দেশের শহরের তুলনায় আমরা এগিয়ে রয়েছি এটাও সত্য।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, এটাও সত্য যে রাজধানীতে ১৯১টি ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে একটি ক্রসিংয়ে একটি সিগন্যাল বাতি রয়েছে, সেটি হলো গুলশান ক্রসিং। কিন্তু সিগন্যাল বাতি স্থাপন বা লাগানোর বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের। এটি ট্রাফিকের আওতায় নয়। সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের দায়ভার কতটুকু, সেটিও আপনাদের জানা দরকার। সড়কের যানজট ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে চারটি সংস্থা কাজ করে। এরমধ্যে চার ভাগের এক ভাগের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক পুলিশ। শুধু আইন প্রয়োগের কাজটি করা হয়।
তিনি বলেন, শীত, গরম, বর্ষায় সব সময় ট্রাফিক পুলিশকে সড়কে পাওয়া যায়। এটাই বাস্তবতা। এবার রমজানে আমাদের ট্রাফিক পুলিশের প্রচেষ্টায় প্রায় সবাই বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পেরেছেন। আমাকে মন্ত্রী মহোদয় জিজ্ঞেস করেছিলেন, রমজান মাসে এত যানজট কেন হয়? আমি তাকে বললাম, রমজান মাসে সবাই একসঙ্গে সড়কে বের হন, কারণ সবাই বাসায় গিয়ে ইফতার করতে চান। আর অন্য সময় কর্মজীবীরা বিভিন্ন সময় বের হন। তাই রমজান মাসে সবাই একত্রে বের হয় বলেই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেবল পুলিশের দ্বারা সম্ভব নয়, কেবল সিটি কর্পোরেশনের দ্বারা সম্ভব নয়, কেবল পরিবহন মালিক-চালকদের দিয়ে সম্ভব নয়। সকলের আন্তরিক হতে হবে, সকলকেই নিয়ম মানতে হবে। তাহলে সকলের সহযোগিতায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো বা নিশ্চিত করা সম্ভব।
ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা কিন্তু ফুটপাত থেকে হকার তুলে দিচ্ছি। এরজন্য অনেকের ফোন পাই, তারা বলে আপনার কি একটুকুও দয়ামায়া নেই! এটাও কিন্তু বাস্তবতা। তাদের রাখলে সড়কে শৃঙ্খলা থাকছে না, আবার নির্দয়ভাবে তাদের তুলে দিতে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শেষে ‘ট্রাফিক সেফটি অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম অ্যান্ড রোড সেফটি স্লোগান কন্টেস্ট-২০২৪’ এর শুভ উদ্ভোধন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, জাইকা’র প্রতিনিধি ইউমি ওকাজাকি, প্রকল্প পরিচালক-ডিআরএসপি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমানের প্রকল্প ম্যানেজার ও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের (ট্রাফিক- এডমিন ও রিসার্চ) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি)’ ঢাকা মহানগর এলাকায় ২০২২ সালের মার্চ থেকে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।