পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক হলো মা। যার কাছে আমাদের শৈশব থেকে আনন্দ, বেদনা, উৎসাহ, উচ্ছাস ও উদ্দীপনা এবং আবদার কিংবা ভয়সহ হাজারো অনুভূতি মায়ায় জড়িয়ে থাকে। মায়ের পরম মমতা, ভালোবাসায় ও আদরে-যত্নে বড় হয়ে উঠে প্রতিটি শিশু। শত বিপদ-আপদ ও বাঁধা থেকে মা তার সন্তানকে আগলে রাখেন সবসময়। চেখের আড়াল হলেই সন্তানের জন্য মায়ের মন যেন উদগ্রীব হয়ে থাকে সবসময়। মা হলো সন্তানের আশ্রয়স্থল।
মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশেষ মর্যাদায় পালিত হয় মা দিবস। আজ বিশ্ব মা দিবসে মায়েদের নিয়ে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা তুলে ধরেছেন তিতুমীর কলেজ সংবাদদাতা সিয়াম মাহমুদ ।
মা'কে ছাড়া পৃথিবী কতটা নিষ্ঠুর অনুভব করি
মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক। একজন মা-ই পারে নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে সন্তানের কথা ভাবতে। সকাল থেকে রাত কেটে যায় মায়েদের সন্তানের পিছনে। আমার মা আমার পৃথিবী। যখন খুব মন খারাপ হয় মায়ের সাথে কথা বললে মন ভালো হয়ে যায়। যেকোনো সমস্যায় পড়লে মায়ের কাছে যাই তার সমাধান খুজতে। আজকের এই মা দিবসে বলতে চাই, তোমাকে ছাড়া পৃথিবী কতটা নিষ্ঠুর সেটা অনুভব করি আম্মু। অনেক ভালোবাসি তোমাকে। সারাজীবন আমার পাশে এভাবেই আমার বন্ধু হয়ে, সমস্যায় পড়লে সমাধান হয়ে, অসুস্থ হলে ডাক্তার হয়ে পাশে থেকো। সবশেষে বলবো শুধু মা দিবসে মায়ের প্রতি ভালবাসা বা সম্মান দেখানো বিষয়টা এমন না হোক। বছরের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহুর্ত এমন ভালোবাসা,সম্মান থাকুক মায়ের প্রতি।
সাকিলা পারভীন,
সমাজবিজ্ঞানের বিভাগ
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
আমার একমাত্র প্রিয় বন্ধু আমার মা
মা, মাতা, আম্মা, আম্মু, মামনি, জননী, গর্ভধারিণী এরকম আরও অনেক নামে আমরা এই পৃথিবীতে একটি মাত্র মানুষকে ডেকে থাকি। এই সুন্দর পৃথিবীটা যার মাধ্যমে আমাদের দেখার সুযোগ হয়েছে সে তো একমাত্র মা।
আমার জীবনে আমার আম্মুর ভূমিকা পুরোটাই। আমার বেঁচে থাকা, এতো বড় হওয়া তার সবটা জুড়েই আমার আম্মু। আব্বু মারা যাওয়া পর এই মানুষটা আমার আর আমার ভাইয়ার বটবৃক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। এই মানুষটা না থাকলে হয়তো ছোট্ট লাজুকী আর তার ভাইটা হারিয়ে যেত কোন অজানা পথে। জীবনের সমস্ত ঝড়-বৃষ্টি থেকে আমাদেরকে আম্মু সামলেছেন।
আব্বু-আম্মু দুজনের ভুমিকা পালন করেছে আমার আম্মু।নিজে শক্ত হাতে উপার্জন করে আমাদের ছোট্ট ছোট্ট সমস্ত সুখের জোগান দিয়ে এই দুনিয়ায় টিকে ছিলেন আমাদেরকে নিয়ে। অসম্ভব মানসিক শক্তির জোরে তিনি সব যুদ্ধকে জয় করেছেন হাসিমুখে। জীবন যুদ্ধ তিনি হয়তো আজ কিঞ্চিৎ সফল।
আমার একমাত্র প্রিয় বন্ধু আমার মা। আমার প্রতিদিনের সমস্ত গল্পের সাক্ষী আমার আম্মু। আমাদের পথের দিশারি। আজও আমার হাত ধরে জীবনের ভালো খারাপ পথের দিশা দেখিয়ে যাচ্ছেন আমার আম্মু।
আমি এতোদিন শুধু বই পুস্তকে বিভিন্ন মহীয়সী নারীর গল্প পড়ে এসেছি। কিন্তু আমার জীবনের আমার চোখের সামনে আমার মায়ের মতো এমন মহীয়সী নারী, মহীয়সী মা আমি একমাত্র তাতেই দেখেছি।
জানি প্রত্যেকের কাছেই তার মা সেরা এবং শ্রেষ্ঠ। আমার আম্মু আমার কাছে সুপারউম্যান। তিনি ছিলেন দেখেই আমি বেঁচে আছি। সারাজীবন চেষ্টা করবো তার মতো আদর্শ মা হয়ে উঠার।
তোমায় নিয়ে লিখতে গেলে আমি সারাজীবন লিখেও শেষ করতে পারবো না, সারাজীবন আমাদের পাশে থেকে যেও।তুমি ছাড়া আমি অচল। ভালোবাসি তোমায় আম্মু। আমার জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত আমি তোমাকে আমার পাশে চাই ঠিক যেমন এখনটা আছো।
ইসরাত জাহান লাজুকী
গনিত বিভাগ
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
মায়েরা যেনো সুস্থ থাকেন
আমি মনে করি মাকে ভালোবাসাতে কোন দিবসের প্রয়োজন হয় না। আমার মা আমার জন্য তার জীবনের সকল কিছু ত্যাগ করেছে এখন পর্যন্ত করে যাচ্ছে।
জীবনের তাগিদে কয়েক বছর ধরেই পরিবার থেকে দূরে। কয়েক মাস পরপরই সাধারণত বাড়িতে যাওয়া হয়।অনেকসময় অফিস ছুটি থাকে না, পড়ালেখার চাপ থাকে, পরীক্ষা থাকে। কয়েকদিন গিয়েছিলাম প্রায় পাঁচ মাস পর বাড়িতে পরিবারের সাথে ঈদ করতে। সাতদিনের ছুটি কাটিয়ে ফিরতে হয়েছে কমব্যাস্ত শহরে। ফেরার সময় প্রতিবারই আম্মু একদম বাস কাউন্টার পর্যন্ত এগিয়ে দেয় কোনোদিন আম্মুকে রেখে আসতে পারিনি। সেদিনও যথারীতি সাথেই আসছিলো আম্মু গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিল। আমার দিকে তাকিয়ে বলছিল আর দেড় মাস পর আবার আসবি; কষ্ট করো বাবা একদিন আল্লাহ সুখ দিবে। আমি কিছু বলতে পারিনি শুধু তাকিয়ে ছিলাম মুখের দিকে। এমন গল্পটা শুধু আমার না পরিবার থেকে দূরে থেকে পড়ালেখা করা হাজারো তরুণ-তরুণীর। মা দিবসে একটাই চাওয়া আল্লাহ যেনো সবার মাকে সুস্থ রাখুক ভালো রাখুক।
আমান উল্যাহ আলভী
মার্কেটিং বিভাগ
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
সন্তানের প্রথম বিদ্যালয় মা
মা শব্দ টি হয়তো খুব ছোট একটা শব্দ। কিন্তু এই শব্দটি প্রত্যেকটি ছেলে-মেয়ের সুখ-দুঃখের সাথে জড়িত। নিজের অজান্তে মুখ থেকে বের হওয়া পৃথিবীর একমাত্র মধুময় শব্দ মা।জর্জ এলিয়েট বলেছিলেন, চুখ খুলে মমতাময়ী মায়ের মুখটির প্রেমে পড়ার মাধ্যামে শুরু হয় আমাদের জীবন । তারপর থেকে তার প্রেম আদর আর ভালোবাসায় কাটতে থাকে জীবন। আর একটি আর্দশ জাতি নির্মাণে মায়ের ভুমিকা অতুলনীয়। নিপোলিয়োন বলেছিলেন, একটা আর্দশ জাতি যদি চাও, তাহলে আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও। বাবার ব্যস্ততায় সন্তান লালন-পালন বড় একটা ভূমিকা রাখে মা। সন্তানের প্রথম বিদ্যালয় মা। মার কোল থেকে সন্তান বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখে। পুরো পৃথিবী একদিকে থাকলে, মা থাকে তার সন্তানের দিকে। মায়ের ভালোবাসায় থাকে না জাতপাত ধর্ম-বর্ণ । মায়ের ভালোবাসা এবং ঋন অমূল্য যা পরিশোধযোগ্য নয়। মায়ের ভালোবাসা এতোটা শক্তিশালী যা সব সময় চিহ্ন রেখে যায় আর সব সময় আমাদের সুরুক্ষা হিসেবে কাজ করে। মা দিবসে সবার একটা লক্ষ্য হওয়া উচিত কোনো মাকে যাতে আমরা প্রবীন নিবাসে না দেখি। কারন যার মা আছে সে কখনো গরিব নয় । সন্তানের সাথে থেকে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মায়ের মুখে ফুটুক হাসি।
মমিনুর রশিত
অর্থনীতি বিভাগ
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।