সৌদি আরবে পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দেশের হজযাত্রীদের বরণ করতে প্রস্তুত দেশটি। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার ৮৫ হাজারের বেশি হজযাত্রী হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আশকোনার হজক্যাম্পে ২০২৪ এর হজ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। আগামীকাল শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম হজ ফ্লাইট। ঢাকা হজক্যাম্পের পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, হজযাত্রীদের নিরাপদে সৌদি গমনে ক্যাম্পের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে, মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আগমন শুরু হলেও বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধিত ৮৫ হাজার ৮৫ জন হজযাত্রীর মধ্যে এখনো ভিসা পাননি প্রায় ৫০ হাজার হজযাত্রী। এ নিয়ে হজে যেতে ইচ্ছুক নিবন্ধনকারী যাত্রীরা আছেন উৎকণ্ঠায়। যদিও ধর্মমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন ভিসা নিয়ে জটিলতা কেটে যাবে।
ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান মঙ্গলবার জানান, ‘ভিসা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের ফ্লাইট যখন যেটা চালু হচ্ছে। হজযাত্রীরা টিকিট নিচ্ছেন। ভিসা নিচ্ছেন। কোনো সমস্যা নেই। নিশ্চিত থাকুন, এটা কোনো সমস্যা হবে না। আমরা নির্দ্বিধায় এটা চালিয়ে নিতে পারব। সে সুযোগ আমাদের আছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা সমস্যা অনুভব করছি না। সঠিক সময় সব কাজই করতে পারব।
জানা গেছে, হজ এজেন্সির গাফিলতির কারণে অধিকাংশ যাত্রীর মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া হয়নি। তারা কম দামে ভাড়া বাড়ি খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট করেছেন। যদিও এবার অন্য বছরের তুলনায় বাড়ি ভাড়া কম। আর প্রায় ৫০ হাজার হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন না হওয়ায় তাদের ভিসা কার্যক্রম আটকে আছে।
সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার হজ ভিসা ইস্যুর মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে বিশেষ বিবেচনায় ১১ মে পর্যন্ত আবার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হজযাত্রীদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে ২৫৯ হজ এজেন্সি কাজ করছে।
হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম যুগান্তরকে বলেন, গাইডসহ এবার বাংলাদেশ থেকে ৮৫ হাজার ৩০৭ জন হজযাত্রী হজে যাবেন। এর মধ্যে গাইডসহ সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৪১৯ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ ৮০ হাজার ৬৮৮ জন। এখন আমাদের ২২ হাজারের মতো হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন হয়েছে। বাকিদের ভিসাও দ্রæত হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৩১৯ হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রায় হজযাত্রীর ভিসা কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন। এর মধ্যে ২০ হাজারের মতো হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু হয়েছে। বাদবাকি হজযাত্রীর ভিসা কার্যক্রম শেষ হয়নি।
আগামীকাল ৯ মে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাসের প্রথম হজ ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। এদিন ৭টি ফ্লাইটের শিডিউল রয়েছে। এতে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে দুই হাজার ৩৭২ জন। বিমানের শেষ হজ ফ্লাইট আগামী ১০ জুন জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে।
এ ছাড়া সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস ফ্লাইটের শেষ হজ ফ্লাইট আগামী ১২ জুন জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ২১ জুন বিমানের ফিরতি হজ ফ্লাইট শুরু হবে।
হজ ভিসায় শুধু জেদ্দা, মদিনা ও মক্কায় ভ্রমণ: হজ ভিসাসংক্রান্ত নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। দেশটি বলছে, এই ভিসা নিয়ে শুধু জেদ্দা, মদিনা ও মক্কা শহরে ভ্রমণ করা যাবে। নির্ধারিত শহরের বাইরে ভ্রমণের জন্য এই ভিসা বৈধ হবে না। সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাতে রোববার গালফ নিউজ তাদের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হজ ভিসা শুধু হজ মৌসুমের জন্য বৈধ। এই ভিসার মাধ্যমে হজযাত্রীরা শুধু পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে পারবেন। হজ ভিসা সে দেশে কাজ করা বা বসবাসের জন্যও বৈধ হবে না। এই বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করলে সংশিষ্ট ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে, তা ছাড়া ভবিষ্যতে হজে আসা নিষিদ্ধ করা হতে পারে।