তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান ফেসবুক লাইভে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের নিয়েও অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়ে তার বক্তব্যের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন বর্তমান এবং সাবেক নেত্রী৷
এ বিষয়ে বহুল প্রচারিত দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ছাত্রলীগের নেত্রীরা বলেন, নিজের দলের হোক বা বিরোধী দল– দায়িত্বশীল পদে থেকে কোনো নারী নিয়ে এভাবে কেউ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারেন না৷
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া এবং শামসুন নাহার হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের সম্পর্কে বলতে শোনা যায়, 'তারা শিষ্টাচারের সংজ্ঞাটা আমাদের শেখাতে চাচ্ছে। তসলিমা নাসরিনের মতো অনেক তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ আছে, দুঃখ লাগে কোনটা জানেন? এরা আবার জয় বাংলার কথা বলে। এরা ছাত্রলীগ করছে নাকি, এরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, এরা নাকি আবার নেত্রী ছিল কোনো কোনো হলে৷ কিন্তু রাতের বেলা এরা নিজেদের হলে থাকতেন না, ঘুমাতেন হোটেলে হোটেলে৷ কারণ ফাইভ স্টার হোটেলে থাকার মজা, আর রোকেয়া হল শামসুন নাহার হলে থাকাটা কি এক কথা? আমি এর চেয়ে বেশি বললে মিছিল শুরু হয়ে যেতে পারে। আমি আর বেশি কিছু বলব না।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে 'অশোভন এবং নারীবিদ্বেষী' অ্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী নারীদের সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।'
তিনি আরও বলেন, 'মুরাদ হাসান বাংলাদেশের নারী সমাজের চরিত্র হনন করেছেন। জনগণের সেবক হতে তিনি যে শপথ নিয়েছিলেন সে হিসেবে এটা তিনি করতে পারেন না। তিনি নারীবিদ্বেষ বর্ণবিদ্বেষ এবং যে ধরনের অশোভন শব্দ-বাক্য চয়ন করেছেন, আমি মনে করি তিনি প্রজাতন্ত্রের প্রতিমন্ত্রীর পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।'
শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা বলেন, 'রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসা ব্যক্তির মুখের ভাষা শুনে মনে হচ্ছে, আমরা দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে৷ এই লোক এতোবড় স্পর্ধা নিয়ে কথা বলে যদি বহাল তবিয়াতে থাকে, তাহলে দলের সবাইকে বলছি, রাজনীতি করা একটি মেয়েও যদি নৈতিক, চরিত্রবান থেকে থাকে তার দীর্ঘশ্বাস থেকে কেউ রক্ষা পাবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রতিমন্ত্রী একজনকে ইঙ্গিত করে কথা বলেনি, বলেছে সকল মেয়েকে নিয়ে, যারা রাজনীতি করে। আমি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পদে আছি, আমি একক কোন মেয়ে না। ছাত্রলীগের হাজার হাজার মেয়ের প্রতিনিধি আমি। আমি জানতে চাই কোন সাহসে আপনি এভাবে মেয়েদের বা ছাত্রলীগের মেয়েদের নিয়ে কথা বললেন?'
শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নিশিতা ইকবাল বলেন, 'দলীয় কিংবা বিরোধী দলের নারী হোক না কেন, কোনো নারী সস্পর্কেই প্রতিমন্ত্রী এভাবে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারেন না৷'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা নারীরা রাজনীতি করতে গিয়ে পরিবারসহ অনেক বাধার সম্মুখীন হই, কিন্তু এ ধরনের অসত্য কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য আমাদের নিরুৎসাহিত করে৷ আমরা এর প্রতিবাদ জানাই এবং তার পদত্যাগ দাবি করি৷'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সাবেক এক নেত্রী বলেন, 'এরকম বিকৃতমনা লোক রাষ্ট্রীয় পদে থাকা মানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সব অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।'
ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, 'সাংবিধানিক জায়গা থেকে কোনো নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা আসলে আধুনিকতাকে চ্যালেঞ্জ করা এবং রক্ষণশীলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া৷ এ ধরনের বক্তব্য আমরা কোনভাবেই প্রত্যাশা করি না। এ ধরনের বক্তব্য দুঃখজনক৷'
এসব ব্যাপারে মন্তব্য জানতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে ফোন করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।