মহানবীর (স) নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৩তম বছর। মুসলমানরা মাত্র মক্কা ছেড়ে মদিনায় এসেছেন। অচেনা পরিবেশে দেখা দেয় সুপেয় পানির তীব্র সংকট।
মদিনায় ‘বিরেরুমা’ বা রুমার কূপ নামে ইহুদিদের একটি কূপ ছিল। ইহুদিরা এ সুযোগে কূপের পানি মুসলমানদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতে শুরু করলেন।
সাহাবারা রাসুলকে (স) এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছ যে, এই কূপ মুসলমানদের জন্য ক্রয় করে দেবে। মুসলমানদের এই কূপ যে খরিদ করে দেবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে ঝর্ণা দান করবেন।’
রাসুলের (স) কথায় হজরত ওসমান (র) ইহুদির কাছে এই কূপ ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ইহুদি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে তিনি বললেন, পুরো কূপ বিক্রি না করলে অর্ধেক বিক্রি করুন। এতে একদিন কূপের মালিক হব আমি আর আরেক দিন হবেন আপনি।
ওসমান (র) অর্ধেক কূপ ক্রয় করে বিনামূল্যে পানি বিতরণ করতে লাগলেন। লোকজন ওসমানের (র) ক্রয় করা নির্ধারিত দিনে পানি সংগ্রহ করত এবং পরের দিনের জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত করে রাখত।
ইহুদির দিনে কেউ পানি সংগ্রহ করতে যেত না। ফলে তার পানির ব্যবসা মন্দা হওয়ায় নিজেই পুরো কূপ বিক্রির জন্য ওসমানের (র) কাছে প্রস্তাব পেশ করে।
ওসমান (র) ৩৫ হাজার রৌপ্য মুদ্রায় কূপটি কিনে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দেন।
এ সময় এক ধনী লোক ওসমানের (র) কাছ থেকে কূপটি দ্বিগুণ দামে খরিদ করতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। লোকটি মূল্য বাড়িয়ে বলতে লাগল। ওসমান (র) জবাবে আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও বেশি বলতে লাগলেন।
শেষে ধনী লোকটি বললেন, এমন কেউ আছে যে আপনাকে কূপটির মূল্য ১০ গুণ বলেছেন? ওসমান (র) জবাবে বললেন, আমার আল্লাহ আমাকে প্রতি নেকিতে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।
হজরত ওসমানের (র) শাসনামলে এই কূপের চারপাশে খেজুর বাগান তৈরি হয়। সময়ের চাকা ঘুরে বহু উত্থান-পতনের পর সৌদি রাজপরিবার সৌদি আরবের রাজসিংহাসনে বসার সময় এই বাগানে খেজুরগাছের সংখ্যা ১৫৫০টিতে পৌঁছায়।
সরকার বাগানের চারদিকে দেয়াল তৈরি করে দেয়। এই ভূসম্পত্তি ওসমানের (র) নামে দলিল করে দেয় এবং তার নামে খুলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, সৌদি আরবে এখনো তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমানের (র) নামে দলিল করা প্রপার্টি রয়েছে। রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও।
আরও মজার বিষয় হলো— মাস ফুরালে এখনো তার নামেই আসে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ওসমানের (র) মালিকানাধীন বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণের কাজ!
সৌদির কৃষি মন্ত্রণালয় এই বাগানের খেজুর বিক্রি করে অর্জিত অর্থ ওসমানের (র) অ্যাকাউন্টে জমা রাখে। সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মদিনায় একটি বড় প্রপার্টি ক্রয় করা হয়েছে।
যেখানে ‘হোটেল ওসমান বিন আফফান’ নামে একটি আবাসিক হোটেল নির্মাণ হয়। এই হোটেল থেকে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন রিয়াল আয় হবে বলে আশা করছে সৌদি সরকার।
যার নেমপ্লেটে লেখা আছে ‘মালিক সাইয়্যিদুনা উসমান (র)। যেহেতু তার ওয়াকফকৃত সম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থে এটি নির্মিত, তাই মালিক হিসেবে তার নামই উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৪-১৫ সালে হোটেলটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। হোটেলের আয়ও উসমানের (র) অন্য সম্পদের মতো একভাগ এতিম-মিসকিনদের দান করা হয় এবং আরেক ভাগ তার নামে পরিচালিত অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়।
এই অর্থের অর্ধেক অসহায়-দুস্থদের মানবতার সেবায় ব্যয় করা হয়, আর অর্ধেক হজরত ওসমানের (র) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
ওসমানের (র) এ দান আল্লাহ এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন যে, কেয়ামত পর্যন্ত তা চালু থাকবে। ওসমানের (র) আখেরাতের অ্যাকাউন্টে তো সওয়াব জমা হচ্ছেই দুনিয়ার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সও ফুরাবার নয়।