নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, স্বাধীনতার এই মাসেও আমরা দেখছি আবারো পানি ঘোলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারত সরকার, ভারতবাসী মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদেরকে যেভাবে সহায়তা করেছে; আমরা যদি সেটা ভুলে যাই, তাহলে আমরা কি ধরনের মানুষ হলাম। এক কোটি মানুষ ভারতের শরণার্থী শিবিরে স্থান পেয়েছিল। তারা তাদের খাইয়েছে, পড়িয়েছে, শিক্ষা দিয়েছে, চিকিৎসা দিয়েছে, ট্রেনিং দিয়েছে, অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। সম্মিলিত মিত্রবাহিনী হিসেবে তারা সরাসরি অপারেশনে গেছেন। ১৭ হাজার ভারতীয় সৈন্য এ মাটিতে ঘুমিয়ে আছে। হানাদার বাহিনীর হাত থেকে আমাদের মাতৃভুমিকে রক্ষা করার জন্য তারা যে অবদান রেখেছে- এটা কি আমরা ভুলে যাব! আর আজকে এই দেশ থেকে ইন্ডিয়া আউট, ভারত আউট কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে এটা খুবই দুঃখজনক। যারা ভারত বিরোধি স্লোগান দিচ্ছে, ইন্ডিয়া আউট বলছে- তারা আজকে বাংলাদেশের জনগণ থেকে আউট হয়েছে।
তারা পাকিস্তানপন্থী এবং পাকিস্তানের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ভারত সহযোগিতা করেছে বলেই ভারত বিরোধি স্লোগান এবং রাজনীতিতে যখনই পরাজিত হয়ে যায় এবং জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়-তখনই ভারত বিরোধি স্লোগান শুরু করে। ভারত বিরোধি স্লোগান মানেই তো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা লুকিয়ে আছে। এ সাম্প্রদায়িকতার জন্য কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। এ সাম্প্রদায়িকতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দেয়নি। এ সাম্প্রদায়িকতার জন্য লক্ষ লক্ষ মা ও বোনের আত্মত্যাগ নেই। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ থাকলে দেশে এগিয়ে যাবে বর্তমান বাস্তবতা সেটি প্রমান করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করলে যে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় আজকে ২০২৪ সাল সেটি প্রমাণ করছে। ভারত আউট মানেই হলো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিকে আহবান জানানো। আমরা তো সেই জায়গায় ফিরে যেতে চাইনা।
প্রতিমন্ত্রী আজ রাজধানীর বিআইডব্লিউটিএ ভবনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত "জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন" শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিয়ির সচিব মোঃ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম এবং বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোঃ শরীফ উদ্দিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ করতে চায়; তারা বাংলাদেশের উন্নয়নটাকে, দেশের এগিয়ে যাওয়াটাকে সহ্য করতে পারেন না। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ সারা পৃথিবীতে কেন বিস্ময়কর একটি জায়গায় চলে গেল, কেন এটি উন্নয়নের রোল মডেল হলো- এটা তাদের বড় কষ্ট। তারা এই উন্নয়ন চায় না, তারা সবসময় প্রভুত্ববাদের বেড়াজালের আবদ্ধ থাকতে চায়। দেশের উন্নয়ন এবং স্বাবলম্বী হওয়া তারা চায় না। এজন্য বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার চেষ্টা করে। বাকশাল একটি দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিকে রাজনীতিকরণ তারা করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর শুধু একটাই কারণ-দেশের স্বাধীনতা সুখ যেন আমরা না পাই। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি কমিটি গঠন করে দিল। ১০ সদস্যের ওই কমিটিতে ৭ জন নোবেল লরিয়েট ছিলেন। ওই কমিটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতর সম্পর্কে গবেষণা করলো। তারা গবেষণা করে দেখলো এই দেশের কোন ভবিষ্যৎ নেই। এই দেশকে সাহায্য সহযোগিতা করে কোন লাভ হবে না। এটা অসুস্থ একটা রোগী। এটাকে আর বাঁচানো সম্ভব না। তখন তারা বলল-বাংলাদেশের দিকে না তাকিয়ে অন্য কোনো দেশের দিকে তাকাতে। হেনরী কিসিঞ্জার বলেছিল- বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। তাদের এই থিওরির বিপরীতে দাঁড়িয়ে এই দেশকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। এবং যেই জায়গায় নিয়ে গেছেন, সেই জায়গাগুলো এখনও আমরা ছুঁয়ে দেখতে পারি নাই। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকান্ড শুধু একটি পারিবারিক হত্যাকন্ড নয়। হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, একটি দেশকে হত্যা করার জন্য। আজকে তাঁরই রক্তের উত্তরাধিকার দেশরতœ শেখ হাসিনা সেই কাংখিত লক্ষ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন। ৭৫ এর পরে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। আমরা যদি ৭৫ এর এবং মুক্তিযুদ্ধে সেই জায়গায় ফিরে যেতে চাই- হবে না। কারণ সমাজ অনেক বিশৃংঙ্খলা হয়ে গেছে। শিক্ষায় বিশৃঙ্খলা হয়েছে, অর্থনীতিতে বিশৃংখলা হয়েছে। সবকিছুতে ভেজাল ঢুকে গেছে। এই ভেজালকে পরিশুদ্ধ করা কঠিন কাজ। এর মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন। এই স্বাধীনতার জন্য অনেকেই সংগ্রাম করেছেন। কারো কথায় স্বাধীনতা আসেনি। এই বাংলার সম্পদ দিয়ে লন্ডন শহর তৈরি করা হয়েছে, এই বাংলার সম্পদ দিয়ে কলকাতা শহর তৈরি করা হয়েছে। এই বাংলার সম্পদ দিয়ে ইসলামাবাদ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এই দেশের মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। বঙ্গবন্ধু সেটা জানতেন এবং সেই পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আমার সম্পদ দিয়ে আমার অধিকার তিনি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। দেশের সম্পদ যারা লুণ্ঠন করেছিলেন, এই লুণ্ঠনকারীরা এদেশকে বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে দিতে চাইবে না। বঙ্গবন্ধু সেটি করেছিলেন। বাংলাদেশ কারো একার দেশ না। এই দেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। বঙ্গবন্ধু এই দেশটিকে আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব হল এই দেশটিকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানো। আত্মসম্মান নিয়ে দাঁড় করানো। ভিক্ষার থলি নিয়ে পৃথিবীর দাতা গোষ্ঠীর দ্বারে দ্বারে ঘুড়বো- এটা কোন মর্যাদার বিষয় না। আজকে পদ্মা সেতু আমাদের একটি মর্যাদার জায়গা। দেশের বাইরে থেকে সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান যারা আসেন তারাই পদ্মা সেতু দেখতে চান। ভুটানের রাজা এসেছেন তিনি যাচ্ছেন পদ্মা সেতু দেখতে। কি বানিয়েছে- বাংলাদেশ এটা দেখতে। শেখ হাসিনা কি উন্নয়ন করেছে এটা সমগ্র পৃথিবী জানতে চায়। এটি আমাদের জন্য বড় একটি অহংকারের বিষয়। যে অহংকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে তৈরি হয়েছিল। আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের হিমালয়ের কাছে নিয়ে গেছেন-এটা আমাদের বড় প্রাপ্তি। এটাকে ধরে রাখা আমাদের বড় দায়িত্ব।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।