নিজেদের মধ্যকার যাবতীয় বিভেদ ভুলে সব ফিলিস্তিনিকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। শুক্রবার (১ মার্চ) মস্কোতে ফিলিস্তিনের একটি রাজনৈতিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের সময় এ আহ্বান জানান তিনি।
ল্যাভরভ বলেন, ‘সন্দেহাতীত ভাবেই, এই ঐক্যের প্রধান উদ্দেশ্য হবে গাজায় রক্তপাত বন্ধ করা। বর্তমানে সেখানে যুদ্ধ-সহিংসতা আমরা দেখতে পাচ্ছি, হয়তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চেষ্টায় কিছুদিনের জন্য তা বন্ধ থাকবে, তারপর আবার ঘটবে এবং বার বার ঘটবে। এই সংঘাত পুরোপুরি বন্ধ হতে পারে কেবলমাত্র স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো ঘরে যদি একাধিক মতের লোকজন সারক্ষণ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে ব্যস্ত থাকে, তাহলে সেই ঘর বা পরিবার কখনও উন্নতি করতে পারে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে বড় বাধা এটি।’
১৯৪৭ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইস্যুতে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৫৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর তা আরও জোরালো রূপ নেয়। ১৯৫৭ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে দুই পৃথক রাষ্ট্রের ভৌগলিক সীমানাও নির্দিষ্ট করা হয়। কিন্তু তারপর থেকে এ ইস্যুতে গঠনমূলক আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এর মধ্যে গত কয়েক দশকে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি ও গোষ্ঠীগুলো অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বৈরীতায় জড়িয়ে পড়ে। সেখানকার একটি পক্ষ দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে এবং অপরপক্ষ ইসরায়েল রাষ্ট্র নির্মূলের পক্ষে অবস্থান নেয়। এই দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই ১৯৮৭ সালে জন্ম নেয় সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস, যেটি আদর্শগতভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র নির্মূলের পক্ষে। ২০০৫ সালের নির্বাচনে জিতে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস। তারপর থেকে ফিলিস্তিনে কার্যত দু’টি সরকার ব্যবস্থা ক্রিয়াশীল রয়েছে। পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম রয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (ফিলিস্তিনি অথরিটি-পিএ) বা ফাতাহর অধীনে, আর গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে হামাস। দুই গোষ্ঠীই পরস্পরের প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন।
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনরত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর জোটের নাম প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। এই জোটটি আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত জোট।
আলোচনায় ল্যাভরভ বলেন, ‘ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে একদিকে সেখানকার সাধারণ জনগণের স্বার্থ, লক্ষ্য এমনকি ভাগ্যও অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছে। অন্যদিকে এই দ্বন্দ্বের সুফল নিচ্ছে সুযোগ সন্ধানী পক্ষ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি আলোচনায় নিয়ে আসতে চায়, সে সময় সুযোগ সন্ধানী পক্ষ বলে যে ফিলিস্তিনের সত্যিকার প্রতিনিধি কেউ নেই।’
‘স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আপনারা যদি পিএলওর ব্যানারে সবাই ঐক্যবদ্ধ হন, তাহলে সুযোগ সন্ধানী পক্ষ আর টালবাহানা করতে পারবে না। আমি আশা করবো যে আপনারা এ ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেবেন। এক্ষেত্রে আপনাদের সব রকমের সহযোগিতা করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’ সূত্র: আনাদোলু