ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

নারায়ণগঞ্জে সিটি নির্বাচন: ভিন্ন কৌশলে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: সোমবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২১

নারায়ণগঞ্জে  সিটি নির্বাচন: ভিন্ন কৌশলে বিএনপি
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে। আর এই নির্বাচন উপলক্ষে ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ তার মনোনয়ন চূড়ান্ত করে ফেলেছে। বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকেই আওয়ামী লীগ আবার মনোনয়ন দিয়েছে। এবার মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে তেমন কোনো বিতর্ক হয়নি। বিএনপি কিছুদিন আগে থেকেই ঘোষণা করেছিল যে, তারা কোন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপির ভাষায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। এরকম কথা বললেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। দলের ভেতর থেকে যারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেছেন তাদেরকে উৎসাহিত করা হয়েছে, বাঁধা দেওয়া হয়নি, এমনকি বিজয়ী হওয়ার পর অনেক জায়গায় অভিনন্দিত করা হয়েছে। অর্থাৎ বিএনপি প্রকাশ্যে নির্বাচন না করে স্বতন্ত্রভাবে গোপনে নির্বাচন করছে। সেই পদ্ধতিতে তারা কিছুটা সাফল্য পেয়েছে বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন।

বিএনপির একজন নেতা বলছিলেন যে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের যদি আমরা দলীয় প্রতীক অংশগ্রহণ করতাম তাহলে আমাদেরকে মাঠে দাঁড়াতে দেয়া হতো না, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন আমাদের ঘরে তুলে রাখতে। কিন্তু স্বতন্ত্র হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়েছে এবং নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তারা খারাপ ফলাফল করেনি বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। আর এই কৌশলই এখন বিএনপি অবলম্বন করতে চাইছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিনা চ্যালেঞ্জে যেন সেলিনা হায়াৎ আইভী যেন জয়ী না হয় সে জন্য বিএনপি সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয়ার কথা বিবেচনা করছে। ইতিমধ্যে, বিএনপির সহ-সভাপতি আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা দলীয় ভাবে নির্বাচন করবে না। কিন্তু দলীয় ভাবে নির্বাচন না করলেও সাখাওয়াত হোসেন, এটিএম কামাল বা তৈমুর খন্দকারের মধ্য থেকে যেকোনো একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবে। বিএনপি অনানুষ্ঠানিকভাবে এই স্বতন্ত্র প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর প্রধান কারণ হলো নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিভক্তির রাজনীতি। বিএনপির নারায়ণগঞ্জের নেতারা বলছেন, যদি তারা একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দেন তাহলে শামীম ওসমানের পক্ষের লোকজনের সমর্থন পাওয়া যাবে এবং সেক্ষেত্রে এই নির্বাচনে আইভীকে হারানো সহজ হবে।

বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন যে, আইভিকে হারানোর জন্য শামীম ওসমানপন্থীদের একটি বড় অবশ্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখন শুধু দরকার একজন ভালো প্রার্থী। যেহেতু বিএনপি দলীয়ভাবে প্রার্থী দিচ্ছে না, সেজন্য স্বতন্ত্র ভাবে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। এখন পর্যন্ত দলের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো মন্তব্যই করেনি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন যে, দলের সিদ্ধান্ত হলো কোন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা এবং সেই সিদ্ধান্তের এখন কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে কেউ যদি স্বতন্ত্র দাঁড়ায় কি হবে এরকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সেটি হলে তখন দেখা যাবে। আর এ কারণেই নারায়ণগঞ্জে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে আইভিকে ঠেকানোর জন্য এবার বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের একাংশের ঐক্য হতে পারে। নেপথ্যে থেকে শামীম ওসমানের সমর্থকরা আইভিকে হারানোর জন্য বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারেন। ফলে নারায়ণগঞ্জে একটি ভিন্ন কৌশল নিয়ে বিএনপি এগুচ্ছে এবং এই কৌশলে বিএনপি একটি চমক দেখাতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। একদিকে সেলিনা হায়াত আইভীরপন্থীরা প্রথম থেকে একটু হাল ছাড়া। কারণ, তারা মনে করছে যে নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দিতাহীন। কিন্তু পিছন থেকে একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ আইভীর বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। আর এই প্রেক্ষাপটেই নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের আগে একটা চমক আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে স্বতন্ত্র কে দাঁড়ান তার ওপর নির্ভর করছে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন কতটা উত্তেজনাপূর্ণ হবে সেটি।

সুত্র: বাংলাইনসাইডার