গর্ভবতী নারীদের মধ্যে রোজা নিয়ে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকে। কেউ বলে রোজা রাখা যাবে, আবার কেউ বলে যাবে না। প্রকৃতপক্ষে রোজা রাখা যাবে কি না তা নির্ভর করে গর্ভবতীর স্বাস্থ্য ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপর। যদিও ধর্মীয়ভাবে গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা না রাখা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে।
* রোজা রাখার ব্যাপারে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় : প্রথমত, একজন গর্ভবতী নারী শারীরিকভাবে কী অবস্থায় আছেন তার ওপর নির্ভর করে রোজা রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যদি গর্ভবতী অসুস্থ বোধ করেন তবে রোজা রাখা উচিত নয়। কারণ এতে তার এবং তার অনাগত শিশুর ক্ষতি হতে পারে। দ্বিতীয়ত, রোজা রাখার সময়কাল শীতকাল নাকি গরমকাল? যদি গরমকাল হয়, তাহলে এ আবহাওয়ায় গর্ভবতী মায়ের পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। যা মায়ের ও গর্ভের শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে। গর্ভবতী শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকলে এবং সুস্থ থাকলে তিনি রোজা রাখতে পারবেন। কারণ, তিনি যতক্ষণ রোজা রাখবেন ততক্ষণ তার গর্ভের শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি তার শরীরে মজুত থাকে।
* রোজা শুরু হওয়ার আগে গর্ভবতীর পূর্ব প্রস্তুতি : রোজা রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডায়াবেটিস, অ্যানিমিয়া এবং প্রি-অ্যাকলেমপসিয়া আছে কিনা পরীক্ষা করে নিতে হবে। ডায়াবেটিস যদি থেকে থাকে তবে রোজার সময়ে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে তখন গর্ভবতী মা ও শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এছাড়া অ্যানিমিয়া আক্রান্ত মায়েরা শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন। তাই অতিমাত্রায় অ্যানিমিয়া আক্রান্ত মায়েদের গর্ভাবস্থায় রোজা না রাখাই ভালো। রোজা শুরুর আগে একজন পুষ্টিবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট প্ল্যান তৈরি করে রাখতে পারলে ওই সময়ে গর্ভবতী মায়ের শরীরে পুষ্টি মান অটুট থাকে। রমজান শুরুর পূর্ব থেকেই কফি, চা (এমনকি গ্রিন টি) এবং চকোলেট খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। কারণ এগুলোতে ক্যাফেইন থাকে, ফলে গর্ভবতী মায়েরা রোজার সময় পানিশূন্যতায় ভুগতে পারেন।
* রোজা রাখলে করণীয় : গর্ভবতী যদি রোজা পালন করেন, তবে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো লক্ষ রাখবেন। রোজার ক্লান্তি কমাতে বিশ্রামের মাত্রা বাড়িয়ে দিন। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন। বেশি হাঁটবেন না এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম করবেন না। ভারী কিছু বহন করবেন না। সেহরি, ইফতার ও রাতের খাবারের প্রতি মনোযোগী হোন। রাত জাগার অভ্যাস পরিহার করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
* যেসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন : দীর্ঘ এক মাসের রোজার যে কোনো সময়ে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচের সমস্যাগুলোর যে কোনো একটি হলেও যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত-গর্ভের সন্তান নড়াচড়া না করলে, তলপেটে ব্যথা অনুভব করলে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম করার পরও যদি ঘুম ঘুম ভাব হয় বা দুর্বলতা অনুভব হয়, বমি ও মাথাব্যথা হলে, জ্বরজ্বর ভাব হলে, গর্ভের শিশুর ওজন যদি না বাড়ে, ঘনঘন এবং গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হলে।
একজন অন্তঃসত্ত্বা মা তার নিজের শরীরে অন্য একটি জীবনকে ধারণ করছেন। তাই সেই জীবনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব মায়ের ওপর বর্তায়। গর্ভের শিশুর সামান্যতম ক্ষতি হতে পারে এমন কোনো কিছু করা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। কিন্তু গর্ভবতী যদি যথেষ্ট শক্ত-সমর্থ ও সুস্থ হয়ে থাকেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অনায়াসেই রোজা রাখতে পারেন।
লেখক : ডা. হাসনা হোসেন আঁখি, ফার্টিলিটি কনসালটেন্ট ও গাইনোকোলজিস্ট, হার্টবিট ফার্টিলিটি ক্লিনিক, গ্রীণ রোড, ঢাকা।