আবু হোসেন, দেশের দক্ষিণের জনপদ লক্ষ্মীপুরের পরিশ্রমী এক মানুষের নাম। সাত বছর আগেও করতেন বাড়ি বাড়ি ফেরি করে শাড়ি,কাপড়,গহনা,লিপস্টিকসহ নানান কিছু বিক্রির কাজ। জেলা সদরের বাসিন্দা হলেও তিনি নিজের ব্যবসায়ীক কর্ম চালাতেন জেলার রায়পুর উপজেলার সোলাখালি, হায়দরগঞ্জ, চরমোহনা, কেরোয়া, বামনীসহ বিভিন্ন স্থানে। সেসময় তিনি বিক্রির উপকরণ সংগ্রহ করতেন রাজধানী শহর ঢাকার বিভিন্ন মোকাম থেকে।
আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলে বছর পঞ্চান্ন বয়সী স্বপ্নবাজ এই সাবেক ফেরিওয়ালা বলেন, আগে দীর্ঘ সময় আমি ফেরি করে জিনিসপত্র বিক্রি করার কাজে যুক্ত ছিলাম। এখন আর সে পেশায় নেই। দেশে আগের মতো ফেরিওয়ালাদের কদর নেই। তাই জীবিকার তাগিদে পেশা বদলেছি। এখন লক্ষ্মীপুর শহরে অটো চালাই। আমি আসলে জীবিকাকে মুখ্য মনে করি। পেশা আমার কাছে কিছুই না। হালাল উপার্জন করি।
সংগ্রামী এই জীবনযোদ্ধার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। স্ত্রী সন্তান সমেত দিব্যি রয়েছেন ভালো। ছেলে পড়ছে বিবিএ অনার্স। সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি মনোযোগী। দীর্ঘ ফেরিওয়ালা জীবন ও ২০১৪ সালের পর থেকে অটো চালানোর কাজ করে নির্মাণ করেছেন তিনতলা ভিত বিশিষ্ট একটি ভবন। যার এক তলার কাজ শেষ করে সেটির একটি ইউনিট ভাড়াও দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বছর দশেক আগে ক্রয় করেছেন কয়েক শতাংশ ভূমি।
তার মাধ্যমে জানা যায়, আগে ফেরিওয়ালার কাপড় ও সামগ্রী ছিলো না এমন ঘর খুঁজে পাওয়া ছিলো অনেকটা দুষ্কর। এখন মানুষের আয়-রোজগার বাড়ায় কমেছে ফেরি করা জিনিসপত্রের চাহিদা। ফেরিওয়ালাদের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে কালের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন আবু হোসেন নামের এই সাবেক ফেরিওয়ালা।
অটোচালক আবু হোসেন নিজের স্ত্রী-পরিবার নিয়ে থাকেন লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। সামাজিক প্রতিবন্ধকতার দরুন সন্তান ও পরিবারের পরিচয় প্রকাশ না করলেও তিনি তার নিজ কর্মে যে মন্ত্রমুগ্ধ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ফেরি করে ফ্যাশন ও শপিং পন্য বিক্রির সেই সোনালী অতীত স্মরণ করে তিনি বলেন, দিনগুলো খুবই সুন্দর ছিলো। এমন দিনও ছিলো যেদিন অন্তত দশ-পনেরো হাজার টাকা বিক্রি করেছি। এখন বয়স বেড়েছে, ফেরি করার শক্তি আর আগের মতো সেই মনোবল নেই। আমি আসলে আগে থেকেই পরিশ্রমী মানুষ। পরিশ্রম কাউকে ফেরায় না, আমাকেও ফেরায়নি। সোনালী সময়ের কথা টানার ফাঁকে তিনি জানান, অ্যাইইইইইই লেস-ফিতা, লাগবো নি গো লেস ফিতা- শব্দগুলো এখনো রয়েছে তার মন ও মস্তিষ্কে গেঁথে। কথায় কথায় তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে পরিশ্রম আমার সফলতার অংশ হলেও পরিশ্রম আমার কাছে সবচেয়ে বেশি স্বস্তির জায়গা। আমার পরিবার নিয়ে আমি যথেষ্ট পরিমাণে সুখে আছি।
অবশ্য স্বপ্ন মুখরতা ও নিরলস পরিশ্রম তাকে নিয়ে এসেছে আজকের এই অবস্থানে। স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করতে যে কঠোর পরিশ্রম তিনি করেছেন সেসব স্বপ্নর বাস্তব রুপই তাকে আজ বানিয়েছে স্বপ্নবাজ। স্বপ্ন দেখেন তার ছেলে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দিবেন কোনো বড় দপ্তরের বড় কর্মকর্তা পদে। ঘোচাবেন বাবার কষ্ট। দাঁড়াবেন সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জনমানুষের পাশে।