লক্ষ্মীপুরের মাইলের মাথা এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম মিরাজ (১৪)। ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন বুট-বাদাম প্রভৃতি। মিরাজের জন্মস্থান জেলার সদর উপজেলার মস্তান মসজিদ এলাকার মোল্লা বাড়ি।
বাবা আবদুল হোসেন মোল্লা ও মা শারমিন সুলতানার ঘরের একমাত্র ছেলে সন্তান স্বপ্নবাজ বাদাম বিক্রেতা মিরাজ। স্ত্রী সমেত তিন মেয়ে ও এক ছেলের সংসারের পুরো ভরণপোষণের দায়িত্ব মিরাজের বাবা হোসেন মোল্লার উপর। ছেলেটির ভাষ্যমতে, তার বাবা হোসেন মোল্লা স্থানীয় দালাল বাজার এলাকায় মসলার ব্যবসা করেন।
সোমবার (৫ই ফেব্রুয়ারী) বিকেলে আনন্দ পরিবহনে মিরাজের সাথে কথা বলার কে ফাঁকে সে কী করে জানতে চাইলে- সংশয়হীন কন্ঠে জানায় সে একজন ব্যবসায়ী।
মিরাজ চেনেন লক্ষ্মীপুর দুই আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নকে। কথার ফাঁকে মিরাজ তাকে সম্বোধন করেছেন এমপি নয়ন স্যার বলে। কোমল কন্ঠে ছেলেটি জানায়, একদিন তার সাথে কথা বলেছেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। মিরাজ বলেন, 'ব্যবসার টাকার জন্য আমি এমপি নয়ন স্যারকে খুজি, দালাল বাজার, মস্তান মসজিদ, রায়পুর কোথাও পাই না।' অবশ্য দেখা হলে টাকা নিবে ব্যবসার জন্য এমন স্বপ্ন নিজের মধ্যে লালন করছে বছর চৌদ্দ বয়সী এই কিশোর।
ব্যবসার কথা জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, এগুলো আমার মা প্রস্তুত করে দেন। আমি বিক্রি করি। আমি অনেক বড় ব্যবসায়ী। রায়পুর, দালাল বাজার,লক্ষ্মীপুর, এমপি সবাই আমাকে চিনে। আমি ব্যবসা করি।
রায়পুর বাসস্ট্যান্ডে আনন্দ পরিবহনের একজন চালক জানান, মিরাজের বোধশক্তি কম হওয়ায় আগে টাকা-পয়সার জন্য সে হাত পাততো মানুষের কাছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ বাদাম বিক্রি করছে। কারো সাথে দেখা হলেই বলে ব্যবসার জন্য এমপি নয়ন স্যার টাকা দিবে।
মস্তান মসজিদ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিরাজের পারিবারিক অবস্থা অনেকটা ভঙ্গুর ও অসচ্ছল। তবে মিরাজ ছেলেটি উদ্যমী। সে স্থানীয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েছে। কিছুটা সমর্থন যোগ্য একটি সুত্র জানায়, সে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে পড়াশোনা করেছে। পরে আর পড়েনি। মাঝের কিছু দিন টুকটাক কাজের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে অচেনা মানুষকে আপন মনে করে টাকার জন্য হাত পেতেছিলো। পরে তাকে বোঝানোর পর সে সহজেই বিষয়টি বুঝে বেশ কিছুদিন যাবৎ বুট-বাদাম বিক্রি করছে। তার বিক্রির স্থান জেলা সদরের দালাল বাজার ও রায়পুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। সে তার ব্যবসায়ীক সামগ্রী নিয়ে আনন্দ পরিবহনে নিয়মিত যাতায়াত করে। জানা গেছে, পরিবহন কর্তৃপক্ষ তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কোনো দিনই নেয় না ভাড়া।
কিশোর মিরাজের উদ্যমের কথা শুনে রায়পুরের এক তরুন আবদুল কাদির জিলানী ফ্রীডমবাংলানিউজকে বলেন, ছেলেটি সমাজের জন্য উদাহরণ। তাকে সহযোগিতার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিৎ।