৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের তান্ডবে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া এক দেশ। স্বাধীনতা অর্জনের পরও ক্ষুধার্ত জনগণকে যখন দুবেলা খাইয়ে রাখাই তখন কষ্টকর। এমন অবস্থায় বহির্বিশ্ব বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করত। অথচ স্বাধীনতার ঠিক পঞ্চাশ বছর পর এসে সেই দেশটি এখন অর্থনীতিতে সমীহ জাগানো একটি দেশ। এমনকি অর্থনৈতিক ও সামাজিক সব সূচকে সেই পাকিস্তানের তুলনায়ই বেশ এগিয়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে জানায় ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ২৫তম অর্থনীতির দেশ হবে। এছাড়া অন্যান্য অর্থনৈতিক জরিপের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৪৩ সাল নাগাদ ২১তম শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হতে যাচ্ছে। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে প্রায় চার বছর আগেই পাকিস্তানকে অতিক্রম করে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২২২৭ মার্কিন ডলার যা গতবছর ছিল ২০৬৪ মার্কিন ডলার। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯ শতাংশ। অন্যদিকে বর্তমানে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ১৫৪৩ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে পাকিস্তানের তুলনায় যোজন যোজন এগিয়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ মোট জিডিপির হিসেবেও পাকিস্তানকে পিছনে ফেলেছে ২ বছর আগে। করোনা মহামারির আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। যা বিশ্বে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে ছিল অন্যতম। মাথাপিছু জিডিপিতেও পাকিস্তানকে তিন বছর আগে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ। শিক্ষার হার কিংবা গড় আয়ুর দিক থেকে পাকিস্তান থেকে অনেকটা এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর এবং পাকিস্তানে ৬৭.১ বছর। বাংলাদেশের শিক্ষার হার ৭৩.৯%, যেখানে পাকিস্তানে শিক্ষার হার মাত্র ৫৯.১৩%। এছাড়া বিভিন্ন রিপোর্ট সমীক্ষা অনুযায়ী অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচকে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, এছাড়া গণতন্ত্রের সূচকেও পাকিস্তানের চেয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
বিভিন্ন সামাজিক সূচক যেমন শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি, জন্মহার, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধাসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতি বেশ ভালো। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানে এই হার ২ শতাংশ। এছাড়া প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে বাংলাদেশে মারা যায় ২২ জন, আর পাকিস্তানে মারা যায় ৬১ জন শিশু।
২০১৯ সালে পাকিস্তানে 'দ্য নেশন' পত্রিকায় 'দ্য বাংলাদেশ মডেল' শিরোনামে প্রকাশিত একটি কলামে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ নিয়ে পাকিস্তানে ব্যাপক আলোচনা হয়। পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞরা দুই দেশের বিভিন্ন সূচকে অবস্থান পরিষ্কার করেন এবং বাংলাদেশকে তাদের জন্য উন্নয়নের মডেল হিসেবে চিহ্নিত করেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব ব্যাংকের পাকিস্তান প্রোগ্রামের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান বলেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের কাছে সাহায্য চাওয়া লাগতে পারে পাকিস্তানের। সর্বশেষ এক দশকে পাকিস্তানের তুলনায় সব সূচকেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে বাংলাদেশের। হেনরি কিসিঞ্জারের সেই 'তলাবিহীন ঝুড়ি' এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল।
সুত্র: বাংলাইনসাইডার