ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

সরকারি বিএল কলেজে আবাসন ও পরিবহন সংকট চরমে

ক্যাম্পাস প্রতিবেদক | আপডেট: শুক্রবার, জানুয়ারী ২৬, ২০২৪

সরকারি বিএল কলেজে আবাসন ও পরিবহন সংকট চরমে
খুলনার উচ্চশিক্ষার প্রথম বাতিঘর সরকারি ব্রজলাল কলেজ (বিএল কলেজ)। প্রতিষ্ঠার ১২১ বছর পার হলেও কলেজটির শিক্ষার্থীদের আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তির যেন শেষ নেই।

বছরের পর বছর এ দুই সংকটে পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের।

কলেজের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, খুলনা মহানগরী থেকে আট কিলোমিটার দূরে দৌলতপুরের ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত এ কলেজটি ১৯০২ সালের ২৭ জুলাই কলকাতার হিন্দু কলেজের আদলে ‘হিন্দু অ্যাকাডেমি’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বৃহত্তর খুলনার বাগেরহাটের বাউডাঙ্গার জমিদার ও তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ব্রজলাল চক্রবর্তী (শাস্ত্রী)। তিনি ছিলেন সংস্কৃত, ইংরেজি সাহিত্য ও আইনে লেখাপড়া জানা মানুষ। এই বিদ্যানুরাগীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের আর্থিক সহায়তা ও সমর্থনে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।  

১৯০২ সালের ৩ জুলাই কলেজের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হলেও পাঠদান শুরু হয় ২৭ জুলাই। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ‘হিন্দু অ্যাকাডেমি’। ১৯০৩ সালে চতুষ্পাঠী এবং ১৯০৭ সালে বি-গ্রেডের কলেজ হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে। পরে চতুষ্পাঠী বন্ধ হয়ে গেলে শুধু কলেজের কার্যক্রম চলতে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৯ জন ছাত্র নিয়ে এফএ (ফার্স্ট আর্টস) ক্লাস শুরু হয়। আবাসিক কলেজ হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং এটি ছিল অবিভক্ত বঙ্গদেশের প্রথম আবাসিক কলেজ।

কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক, সম্মান এবং স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিকসহ ২১টি বিষয়ে স্নাতক সম্মান এবং ২২ বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সে ২৫ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজটির একাডেমিক ভবনসহ অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন হয়নি শুধু আবাসিক হলের। নির্মিত হয়নি নতুন কোনো ছাত্রাবাস। ২৫ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আটটি আবাসিক হলে আবাসন সুবিধার রয়েছে মাত্র সাড়ে সাত শ’ ছাত্র-ছাত্রীর। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রাবাসে ৪৩১ জন ছাত্র এবং তিনটি ছাত্রীনিবাসে ৩১৯ জন আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।

শিক্ষার্থীরা বলেন, কলেজের পাঁচটি ছাত্রাবাসের বেহাল অবস্থা। কক্ষের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। পলেস্তারা খসে পড়েছে অনেক স্থানে। গ্রিলগুলো বাঁকা হয়ে গেছে। পিলারের ঢালাই খুলে রড বেরিয়ে আছে। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রাবাসে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। শহীদ তিতুমীর, ড. জোহা এবং হাজী মহসীন হলের প্রায় তিন শ ছাত্র জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হলে থেকে পড়াশোনা করছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুবোধ চন্দ্র হলের ছাত্ররা টিনের চালের ঘরের হলে থাকেন। ২০২২ সালে সর্বশেষ বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নামে একটি ছাত্রীনিবাস তৈরি করা হয়।

২৫ হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনের জন্য কলেজটিতে বাস রয়েছে মাত্র ছয়টি। প্রতিদিন নওয়াপাড়া থেকে ডুমুরিয়া পর্যন্ত ছয়টি রুট থেকে ছাত্র-ছাত্রী আনা-নেওয়া করা হয়। প্রতিটি ৭০ সিটের বাসে ১৩০ থেকে ১৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী আনা-নেওয়া করা হয়।

কলেজের শিক্ষার্থী মো. রিয়াদ হোসেন বলেন, বিএল কলেজে পাঁচটি ছাত্রাবাস রয়েছে। যেগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শহীদ তিতুমীর, ড. জোহা এবং হাজী মহসীন হলে প্রায় তিন শ’ ছাত্র থাকে। অধিকাংশরা ঝুঁকি নিয়ে হলে থেকে পড়াশোনা করে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুবোধ চন্দ্র হলে ছাদ না থাকায় গরমের দিনে অনেক গরম সহ্য করা লাগে। প্রায় ২৫ হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আটটি আবাসিক হলে আবাসন সুবিধা রয়েছে মোটে এক হাজারের মতো। এজন্য সবদিক বিবেচনা করে আমাদের আবাসন সংকট কাটিয়ে উঠতে অধ্যক্ষ মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

হাজী মুহাম্মদ মহাসীন হলের ছাত্র মো. আলিম হোসেন জানান, হলে খাওয়ায় অনেক সমস্যা। ঠিকমতো মিল চললেও খাবারের মান অনেক নিম্নমানের। পাশাপাশি আলোর একটু স্বল্পতা রয়েছে। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য বিদ্যুতের ওয়েরিং ব্যবস্থা নতুন করে করতে হবে।

মন্নুজান হলের ছাত্রী সুতপা বসু বলেন, অনেকদিন ধরে আমাদের হলটা সংস্কারের অভাবে পড়ে আছে। বাধ্য হয়ে আমাদের অন্য হলে গিয়ে থাকতে হয়। এজন্য দ্রুতই মন্নুজান হলটা সংস্কার করা হলে মেয়েদের আবাসন সংকট অনেকটা কমবে।

দৌলতপুরের একটি মেসে থাকেন এম এম মিলন নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারের বেশি। কিন্তু সে তুলনায় হলগুলোতে সিটের সংখ্যা অনেক কম। এজন্য চাইলেও আমরা হলে থাকতে পারি না৷ নতুন করে আরও দু’একটি হলের ব্যবস্থা হলে আমাদের সবার জন্য সুবিধা হতো।

পরিবহন সংকট প্রসঙ্গে শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা বলে বাসের দুটি ট্রিপ থেকে একটি ট্রিপ বন্ধ করে দেয়। ফলে বিভিন্ন রুটের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বাসে সিটের অপ্রতুলতায় দাঁড়িয়ে পর্যন্ত যাওয়ার জায়গা হচ্ছে না৷ ফলে বাড়তি টাকা খরচ করে কলেজে যাওয়া-আসা করা লাগছে।

পরিবহন ও আবাসন সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি বিএল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জামান বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বলেন, আবাসন সমস্যা দীর্ঘদিনের। সরকারের এ নিয়ে আপাতত কোনো পলিসি নেই। ছাত্রী হল তৈরি হয়, কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রদের কোনো হল তৈরি হয় না। কোনো কোনো জায়গায় ছাত্রদের হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে যে ছাত্র হলগুলো আছে সেগুলো আমরা সংস্কারের ব্যবস্থা করি। গাড়ি তো ছাত্রদের অর্থায়নে কেনা ও তত্ত্বাবধায়ন করা হয়। এ খাতে সরকারের কোনো বরাদ্দ থাকে না।