ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী

নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজার অন্বেষণের তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

বাসস | আপডেট: সোমবার, জানুয়ারী ২২, ২০২৪

নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজার অন্বেষণের তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
বৈদেশিক আয় বাড়াতে তৈরি পোশাকের মতো পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি, হস্তশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যে গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেছেন, আমাদের আরও নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার (রপ্তানির জন্য) অন্বেষণে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা বর্তমানে রপ্তানির জন্য কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভর করি। রপ্তানির জন্য একটি বা দুটি পণ্যের ওপর নির্ভর করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারণ, অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। 

রোববার রাজধানীর উপকণ্ঠে পূর্বাচল নিউ টাউনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে মাসব্যাপী ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিআইটিএফ)-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার যে নির্বাচনি ইশতেহার দিয়েছি, সেখানে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি আয় বাড়াব ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যদিও এক্ষেত্রে সময় খুব কম; কিন্তু আমাদের নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে। আর একটা লক্ষ্য স্থির থাকলে যে কোনো অর্জন সম্ভব হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করতে চাই।’

সারা দেশে ১শ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেখানে দেশিবিদেশি বিনিয়োগ হবে এবং কোন অঞ্চলে কোন পণ্য ভালো হয়, সেখানে সেই শিল্প গড়ে উঠবে। সেবা খাতেও আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং ভালো সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ খাতে রপ্তানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে এবং আইসিটি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিশাল সুযোগ সামনে রয়েছে। আইটি খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ২৭ দশমিক ৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ দেশে পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারছি। যদিও বিশ্ব মন্দার অভিঘাতে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক উন্নত দেশেও পণ্য চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। সেটা মাথায় রেখে নতুন বাজার আমাদের খুঁজতে হবে, নতুন জায়গায় যেতে হবে।’

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পণ্য রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে সরকার জাতীয় ট্যারিফ পলিসি ২০২৩ প্রণয়ন করছে। এটা আমাদের রপ্তানিতে আরও সুযোগ-সুবিধা এনে দেবে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বিদেশি অতিথিরা আছেন। আমি একটা অনুরোধ করব-আমাদের আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য বজায় রাখা একান্তভাবে দরকার। আপনারা রপ্তানি করেন, রপ্তানি করার সময় যে অর্থ ব্যবহার হয় তার যে রিটার্নটা আসবে ঠিক চাহিদামতো, তা আসে না। সেদিকে সবাইকে একটু যত্মবান হওয়ার আহ্বান জানাই।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রমুখ। 

স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। অনুষ্ঠানে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং স্থানীয় ও বিনিয়োগ আকর্ষণে ১৫ বছরে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজন। সেটা নিতে পারলে যে কোনো অভিঘাত থেকে মুক্ত হওয়া যায়। যে কোনো দুর্যোগ আসুক, সেটা আমরা মোকাবিলা করতে জানি এবং করতে পারব। সেই বিশ্বাসটা অন্তত আমার আছে এবং আমি মনে করি, আমাদের দেশবাসীরও আছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন পলিটিক্যাল নয়, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির যুগ। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদাটা খুঁজে বের করতে হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর আমাদের প্রতিটি কূটনৈতিক মিশনে আমরা এ মেসেজটাই দিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার আমরা কী রকম ঘটাব, এর ওপরই আমাদের ক‚টনৈতিক মিশনগুলো কাজ করছে এবং করবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের নিট এবং ওভেন গার্মেন্টস বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের সুযোগ আরও বাড়াতে হবে। আমরা যে পণ্যটাকে সুযোগ দিচ্ছি, সেগুলোই খুব সাফল্য অর্জন করছে। তাহলে আমাদের অন্য পণ্যগুলো কেন বাদ যাবে। তাদেরও আমাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে যাতে ভালো ব্যবসা করতে পারে।’ 

এ সময় পাটের ‘জেনোম সিকোয়েন্সিং’ এবং বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদার উলে­খ করে তিনি চামড়া সংরক্ষণ ও বহুমুখীকরণ করে চামড়া রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, পাট ও চামড়ার সংমিশ্রণে অনেক পণ্য হয়। পাট ও চামড়ার সংমিশ্রণে তৈরি পণ্যগুলোর বিশ্বে বিরাট বাজার রয়েছে। কাজেই এ ক্ষেত্রটিকে আমাদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে। 

তিনি জানান, আগের যে কোনো সরকারের চেয়ে তার সরকার বিশ্বে রপ্তানি অনেকাংশে বাড়াতে পেরেছে, পাশাপাশি মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা ও চাহিদা উভয়ই বাড়ছে। ফলে দেশীয় বাজার উন্মুক্ত হচ্ছে এবং দেশের ভেতরেও বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর একটা পণ্যকে বর্ষপণ্য হিসাবে সুনির্দিষ্ট করে দিই। পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, এভাবে প্রতিবছরই বর্ষপণ্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এবার আমি ঠিক করেছি হস্তশিল্প পণ্যকে ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসাবে ঘোষণার।’ কেন হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য করা হলো, এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এবারের যে বর্ষপণ্য অর্থাৎ ‘হস্তশিল্প পণ্য’, সেটা আমাদের নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হতে পারবেন।

প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার তৃণমূলে অনলাইন ব্যবহারের শিক্ষা দিচ্ছে। এমনকি সবার হাতেও মোবাইল ফোন রয়েছে। তাছাড়া সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছে। সেখানেও অনেক সুবিধা রয়েছে। নারীরা বহুপণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকার জয়িতা ফাউন্ডেশন করে দিয়েছে। একেবারে তৃণমূলের মানুষ যে উৎপাদন করবে, সেটাই তারা বাজারজাত করবে। 

বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাতক্ষীরায় একধরনের মাটি পাওয়া যায়, যা দিয়ে বিশেষ টাইলস হয় এবং সেটা ইতালিতে রপ্তানি হয়। সেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করে। এরকম সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক পণ্য, যার হয়তো খবরই কেউ রাখে না। ওইসব পণ্য উৎপাদকদের যদি প্রণোদনা দিয়ে প্রশিক্ষিত করা যায়, তাহলে তারা সে কাজটা আরও ভালোভাবে করতে পারবেন।

এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, হংকং ও ইরানের কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। বিদেশি কোম্পানির ১৬-১৮টি প্যাভিলিয়নসহ ৩৫১টি স্টল রয়েছে। মেলা সকাল ১০টায় খুলে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে দর্শনার্থীরা রাত ১০টা পর্যন্ত মেলায় থাকতে পারবেন। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার্থে ফার্মগেট থেকে মেট্রোরেল এবং এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগের জন্য বাস পাওয়া যাবে।