ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বুধবার, জুলাই ৩, ২০২৪ |

EN

বেগম খালেদা জিয়ার আলোচিত ১০ অমানবিকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২, ২০২১

বেগম খালেদা জিয়ার আলোচিত ১০ অমানবিকতা
বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য মানবিকতার কথা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে মানবিক রাজনীতির উর্ধ্বে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে হবে। এই মানবিক দৃষ্টি দেখিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে যেন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয় সেজন্য শুধু বিএনপি নয় বিভিন্ন সুশীল মহলের দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু মানবিকতার  প্রশ্ন যখন আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই আসে যে বেগম খালেদা জিয়া কতটুকু মানবিক ছিলেন। ১০ বছর তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেসময় তিনি দেশের রাজনীতিতে এবং জনগণের সাথে কতটুকু মানবিক আচরণ করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার ১০ বছরের শাসনামলে দশটি সেরা অমানবিকতার ঘটনা আমরা এখানে উল্লেখ করছি।

অমানবিকতার প্রথম
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা:  ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সুস্পষ্টভাবে ছিল বিএনপি জামায়াতের এক মাস্টারপ্ল্যান। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং শেখ হাসিনাকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য এই গ্রেনেড হামলার ঘটনা হয়েছিল। এটি আজ আদালতের রায়ে প্রমাণিত। বেগম খালেদা জিয়া তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এখন আদালতের রায়ে দেখা যায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া এই গ্রেনেড হামলার পর ন্যূনতম দুঃখ প্রকাশ করেননি বরং তিনি তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন এমন উদ্ভট, অমানবি্‌ দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে না, বিশ্বের যে কোন সরকারপ্রধানের অমানবিকতার একটি বড় নিদর্শন বলেই মনে করা হয়।

দ্বিতীয়
১৫ আগস্টের ভুয়া জন্মদিন পালন: ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার বিয়োগান্তক দিন। এই দিনে ভুয়া জন্মদিন পালন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এবং শুধু ভুয়া জন্মদিন পালন করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, ভুয়া জন্মদিনের তিনি বড় বড় কেক কাটার উৎসব করেছিলেন যেন শোকের আবহ নষ্ট হয়। একজন মানুষ কতটা অমানবিক হলে একজন মানুষের মৃত্যু দিবসে ভুয়া জন্মদিনের উৎসব করেন। এটিই বেগম খালেদা জিয়ার অমানবিকতার আরেকটি উদাহরণ।

তৃতীয়
অক্টোবরের নির্বাচনের পর সারাদেশে তান্ডব:  ২০০১ এর অক্টোবরে নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয় বিএনপি-জামায়াত। এই বিজয়ের পর পরই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সারাদেশে এক তাণ্ডব শুরু করে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগের ভোটারদেরকে নির্মূল করার জন্য সশস্ত্র হামলা,

আক্রমণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ইতিহাসে একটি এটি একটি বড় ঘটনা।

চতুর্থ
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের অস্বীকৃতি:  ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেবল  স্বপরিবারে হত্যাই করা হয়নি বরং এই হত্যাকাণ্ডের যেন বিচার না হয় সেজন্য বিচারের পথরুদ্ধ করেছিলেন খুনি মোস্তাক এবং জিয়াউর রহমান। বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যখন শপথ নেন তখন তার সামনে সুযোগ এসেছিল এই কালো আইনটি বাতিল করার। আওয়ামী লীগের এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল এর জন্য বিল এনেছিলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলে অস্বীকৃতি জানান। এটি অমানবিকতার আরেকটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

পঞ্চম
যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করা: বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী হিসেবে স্বীকৃত জামায়াত এবং জামায়াতের শিরোমনি নেতাদেরকে পাশে নিয়েই ২০০১ এর মন্ত্রী সভায় বসেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুজাহিদের মত নরঘাতকদের কে মন্ত্রী বানানো ছিল মানবতার বিরুদ্ধে এক ধরনের অপরাধ।

ষষ্ঠ
১৯৭৫ এর খুনিদের চাকরিতে বহাল: জিয়াউর রহমান জাতির পিতার হত্যাকারীদেরকে কূটনৈতিক চাকরি দিয়ে পুরো জাতিকে কলঙ্কিত করেছিলেন আর সেই কলঙ্কের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়া কেবল সেই চাকরি বহাল রাখেন নি বরং তাদেরকে পদোন্নতি দিয়েছেন। এর চেয়ে অমানবিক কান্ড আর কি হতে পারে এ প্রশ্ন অনেকেরই।

সপ্তম
১৯৭৫ এর খুনীদেরকে সংসদে নিয়ে আসা:  বেগম খালেদা জিয়া জাতির পিতার হত্যাকারীদেরকে সংসদে নিয়ে এসেছিলেন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে। তিনি খুনীদেরকে দলকে জাতীয় সংসদে নিয়ে এসে পবিত্র সংসদের অবমাননা করেছিলেন। এটাও একটি অমানবিকতার একটি উদাহরণ।

অষ্টম
বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধ:  ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করেছিল. এই বিচার সম্পন্ন হবার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। বিএনপি-জামায়াতে ক্ষমতায় আসার পর বেগম খালেদা জিয়ার স্ব-উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হতে দেননি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তার আত্মজীবনী মূলক লেখায় এ ব্যাপারে নিজের দুঃখ এবং ক্ষোভের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।

নবম
শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড: শাহ এস এম এস কিবরিয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ডিপ্লোম্যাট এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তিনি যখন হবিগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হন তখন সরকারের কাছে একটি হেলিকপ্টার চাওয়া হয়েছিল কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এই হেলিকপ্টার দিতে অস্বীকৃতি জানান।

দ্বশম
আওয়ামী লীগের নেতা আহসানুল্লাহ মাস্টারকে হত্যা:  আওয়ামী লীগের নেতা আহসানুল্লাহ মাস্টারকে গাজীপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে বেগম খালেদা জিয়ার অনুগত বাহিনীর লোকজন। এই সময় মুমুরশ অবস্থায় আহসানুল্লাহ মাস্টারকে ঢাকার পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হলে বাধা দেয়া হয় টঙ্গীতে। আর এই বাধা না দেওয়া হলে শেষ পর্যন্ত হয়তো আহসানুল্লাহ মাস্টারকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হতো না। এটিও অমানবিকতার একটি বড় উদাহরণ ।