আমন মৌসুম শেষ হতে চলেছে। কৃষকরা ধান গোলায় তোলার পালাও শেষের দিকে।
কিন্তু গত দেড় মাসে মাত্র ১২০০ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহ হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় ২৭ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
বাকি সময়ে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকার আমন সংগ্রহের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে, কৃষকেরা সেই মূল্যে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী নন। সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি, তাই কৃষকরা সরকারি সংগ্রহের চেয়ে বাজারেই বিক্রি করতে আগ্রহী।
আপদকালীন খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গরিব মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় খাদ্যপণ্য দেওয়ার জন্য এই ধান-চাল সংগ্রহ করে সরকার।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে ডিসেম্বরের ২০ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে আমন শেষ হয়ে যায়। উত্তরাঞ্চলে একটু আগে নভেম্বরের ১৫ থেকে ২০ তারিখে আমন মৌসুম শুরু হয়।
খাদ্য বিভাগ জানায়, সারাদেশে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ২০২৩-২৪ সালের আমন সংগ্রহ শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার ৩টি সিএসডি গুদাম ও ১০৫ উপজেলায় ১১০টি গুদামে চলতি আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে খাদ্য বিভাগ।
জেলার তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দেড় মাসে চট্টগ্রাম জেলায় দুটি সিএসডি ও ১৬টি এলএসডি সরকারি গুদামে ৬ হাজার ১৪৬ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে দুটি গুদামে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৫৬ মেট্রিক টন। জেলার নাজিরহাট এলএসডিতে ৩০ মেট্রিক টন ও বোয়ালখালী এলএসডিতে ২৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে।
এছাড়া জেলায় ১৫ হাজার ৮০৭ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর বিপরীতে একই সময়ে মাত্র ৬২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। একইভাবে ৮০৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ পর্যন্ত ৫১১ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় ২৭ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের বিপরীতে দেড় মাসে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১২০০ মেট্রিক টন। ৫৭ হাজার ২৮ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের বিপরীতে ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন এবং ৪৫ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের বিপরীতে ২৯ হাজার ২০০ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছে।
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার কালাডেবা গ্রামের কৃষক মো. আবদুল ওয়াদুদ মোল্লা বলেন, এবছর আমন সম্পর্কে তেমন প্রচারণা নেই। সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ কৃষক বাজারেই বিক্রি করতে আগ্রহী। এছাড়া এসময়ে আমন মৌসুম শেষের দিকে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সহকারী উপ নিয়ন্ত্রক (এডিডি) দোলন দেব জানান, ধানের বাজার বেশি থাকায় কৃষকরা সরকারি দামে ধান বিক্রি করতে চান না।
চট্টগ্রাম জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মো. ফখরুল আলম বলেন, কৃষকরা সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করতে গুদামে আসে না, বাজারেই ধানের দাম তুলনামূলক বেশি।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে সারাদেশে মোট সাত লাখ টন চাল ও ধান কিনবে সরকার। এর মধ্যে দুই লাখ টন ধান ও পাঁচ লাখ টন চাল। এরমধ্যে চার লাখ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা কেজি দরে ও এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল ৪৩ টাকা কেজি দরে কেনা হবে। আর দুই লাখ টন ধান কেনা হবে ৩০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ ১৭ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন।