আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নতুন সরকারে কিশোরগঞ্জের তিন রাষ্ট্রপতির সন্তানদের মধ্যে একজন মন্ত্রিত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। এ নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে কিশোরগঞ্জবাসীর মধ্যে। এমন গুঞ্জনে উচ্চারিত হচ্ছে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নামও।
গুঞ্জন ও কৌতূহল সামনে রেখে এখন যেন শুধু অপেক্ষা পালা। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানপুত্র নাজমুল হাসান পাপন, সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি নাকি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর ভাগ্যে রয়েছে মন্ত্রিত্বের মুকুট?-এমন আলোচনা এখর হাওরাঞ্চলে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অব্যবহিত পর দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর পর কিশোরগঞ্জবাসী আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারে মন্ত্রিত্বের পদ বঞ্চিত হয়। ওই বছরের ৩ জানুয়ারি তদানীন্তন প্রয়াত জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের শূন্য আসন থেকে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরাসরি সক্রিয় রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটে সৈয়দ আশরাফের ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির। অবশ্য এ মাটির অপর রাজনৈতিক জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও এ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসন থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি দ্বিতীয়বারের মতো; কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) আসন থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক চতুর্থবারের মতো ও কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব -কুলিয়ারচর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব ও উত্তর সময়ের আন্দোলন সংগ্রাম ও নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছাকাছি থেকে তার অবর্তমানে দলের হাল ধরেন কিশোরগঞ্জের কৃতীসন্তান শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান ও আবদুল হামিদ। এমনকি পরবর্তীতে সামরিক সরকার নিয়ন্ত্রিত ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও কিশোরগঞ্জের কৃতীসন্তান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের বড় ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের কাণ্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
আর তাই আস্থা, বিশ্বাস ও অবদানের জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং নেতৃত্বে গঠিত অতীতের সব সরকারে কিশোরগঞ্জের এসব কীর্তিমান রাজনীতিকদের ঠাঁই মেলে দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিরোধী দলীয় উপনেতার মতো সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ পদসহ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, রাষ্ট্রপতি, জনপ্রশাসন মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে। এ কারণে বিগত সময়ে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জ ও কীর্তিমান রাজনীতিকদের জেলা কিশোরগঞ্জের নাম দলে ও সরকারে একাকার হয়ে ওঠে।
এমন সব ঐতিহাসিক ভূমিকা, অবদান, আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে বরাবরই কিশোরগঞ্জের এসব কীর্তিমান রাজনীতিকরা আওয়ামী লীগে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গঠিত সরকারের মর্যাদাসম্পন্ন পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পান; কিন্তু প্রথমবারের মতো মৃত্যু ও অবসরজনিত কারণে এসব দেশবরেণ্য রাজনীতিকরা তাদের উত্তরাধিকারদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে নিজেরা দলের সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন।