ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, জুলাই ৯, ২০২৪ |

EN

রেলে কুয়াশা বিপদ বাড়াচ্ছে, প্রতিরোধে প্রযুক্তি নেই

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩

রেলে কুয়াশা বিপদ বাড়াচ্ছে, প্রতিরোধে প্রযুক্তি নেই
রেলওয়েতে সেবা সাশ্রয় ও নিরাপদ-এমনটাই প্রচলিত। কিন্তু বাংলাদেশে রেল না পারছে সেবা নিশ্চিত করতে, না পারছে নিরাপত্তা দিতে। দুর্ঘটনা, নাশকতা পদে পদেই। আবার শিডিউল অনুযায়ী চলে না অধিকাংশ ট্রেন। এমন অবস্থায় কুয়াশাকালীন পুরো নিরাপত্তা আরও ঝুঁকিতে পড়ে। গতি কমে নেমে আসে প্রায় অর্ধেকে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন রেলে কুয়াশা মোকাবিলার রাস্তা রয়েছে। একই সঙ্গে রেলপথ নিরাপত্তায় লাইনে বসানো থাকে সেন্সর-জিপিএস। এর কোনোটাই বাংলাদেশ রেলে নেই। খোদ রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মধ্যরাত থেকেই লাইন ঘেঁষে কুয়াশা আষ্টেপৃষ্ঠে পড়ছে। কখনো ট্রেন দাঁড় করাতে হচ্ছে, কখনো নামমাত্র গতি নিয়ে চালাতে হচ্ছে। যাত্রীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, রেলে আমূল পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও এখনো কেন প্রযুক্তি সম্পৃক্ত করতে পারল না?

এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রকৌশলী কামরুল আহসান বলেন, কুয়াশার সময় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কিছু এলাকায় গতি কমিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। আমরা আধুনিক ‘ফগ পাস সিস্টেম’ ব্যবহারের দিকে যাচ্ছি। একই সঙ্গে রেলপথে সেন্সর কিংবা জিপিএস বসানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে রেলওয়েসংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পুরো রেলে সেন্সর এবং ফগ পাস সিস্টেমের ব্যবস্থা নেই। একই সঙ্গে কুয়াশা ভেদ করে যথাযথ গতিতে ট্রেন চালানোরও ব্যবস্থা নেই রেলে। ঘন কুয়াশার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলা ট্রেন কেবল স্টেশন আউটার বরাবর এলে মান্ধাতার আমলের ‘পটকা’ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। লাইনে কোনোমতে পটকা আটকে দেওয়া হয়। ট্রেনের চাকা পটকায় চাপ দিলে শব্দ করে ফেটে ওঠে। আর তাতেই স্টেশন মাস্টার-ম্যানেজার বুঝতে পারেন, ট্রেন স্টেশন এবং স্টেশন এলাকায় প্রবেশ করছে। ঘন কুয়াশায় সিগন্যাল বাতিও চোখে পড়ে না।

ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত চালক-গার্ড ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যরাত থেকেই ঘন কুয়াশা শুরু হয়। রাজনৈতিক সহিংসতায় দুর্বৃত্তরা রেলপথ কেটে নেওয়াসহ ট্রেন, স্টেশন এবং লাইনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এমন অবস্থায় ঘন কুয়াশা আরও আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। ঘন কুয়াশায় ট্রেনের আলো বেশি দূরে যেতে পারে না। কখনো দৃশ্যমানতা ১০-১৫ ফুটে নেমে আসে। এ কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। পটকাও নিয়মিত ব্যবহৃত হয় না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-পঞ্চগড়, ঢাকা-রাজশাহীসহ বিভিন্ন রুটে চলা দূরপাল্লার রাতের আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ঘন কুয়াশা এলাকায় ১০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার গতিতে চলে। স্বাভাবিক সময়ে চলে ৩৫ থেকে ৮৬ কিলোমিটার গতিতে। কুয়াশার কারণে ইতোমধ্যে অধিকাংশ মেইল, লোকাল ও এক্সপ্রেস ট্রেন ন্যূনতম গড়ে দেড় থেকে দুঘণ্টা দেরিতে চলছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। বাড়ছে আতঙ্কও। এমন অবস্থায় নিরাময় খোঁজার বদলে সেই দেরি ব্যাধির একটা না একটা কারণ খাড়া করে দায় ঝেড়ে ফেলছে রেল। নানা অজুহাতে সাফাই গাইছে স্টেশন মাস্টার-ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টরা।

রেলওয়ে পরিবহন ও অপারেশন দপ্তর সূত্র বলছে, পাহাড় ও বিল এলাকা দিয়ে যাওয়া রেলপথ কুয়াশায় একেবারেই আচ্ছন্ন থাকে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির শেষের দিক পর্যন্ত ট্রেন চলাচলে মারাত্মক ব্যাহত হয়। ৬ ঘণ্টার যাত্রাপথ পার হতে অনেক সময় ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টাও লাগে। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় চালক মাঝপথে ট্রেন থামাতে বাধ্য হন। লাইনে সেন্সর এবং ফগ পাস সিস্টেম যুক্ত থাকলে ট্রেন যথাযথ গতিতে চালানো যায়। ঘন কুয়াশায়ও ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি থাকে না। ওই প্রযুক্তিতে কুয়াশাচ্ছন্ন পথে ট্রেনের পরবর্তী সিগন্যাল পোস্ট কত দূরে রয়েছে, এর আভাস চালককে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানিয়ে দেয় জিপিএসনির্ভর যন্ত্র।

বাংলাদেশ রেলের একমাত্র ভরসা পটকা, যার অধিকাংশ ড্যামেজ থাকে। ঘন কুয়শায় সিগন্যাল বাতি জ্বললেও চোখে পড়ে না। লাল, হলুদ না সবুজ-চালক-গার্ডরা বুঝতে পারেন না। কখনো পটকা দিয়ে সিগন্যাল এবং স্টেশনের দূরত্ব সম্পর্কে আভাস মিললেও এর রং দেখার মতো ব্যবস্থা থাকে না চালক-গার্ডদের। কুয়াশা কিছুটা কমলে সিগন্যাল-স্টেশনের দূরত্ব বোঝা যায়, তখন গতি বাড়ানো সম্ভব হয়।

এদিকে ঢাকা-খুলনাগামী ট্রেনযাত্রী আমিনুল ইসলাম সোহাগ জানান, কুয়াশা মাসখানেক থাকে। কিন্তু ট্রেন বিলম্বে চলার যে ব্যাধি তা তো দীর্ঘদিনের। পশ্চিমাঞ্চলে চলা দ্রুতযান, অগ্নিবীণা, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর নামের সঙ্গে কাজের মিল নেই। এসব ট্রেন প্রায় প্রতিদিনই বিলম্বে চলাচল করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোকাল-মেইল ট্রেনের একাধিক চালক-গার্ড জানান, এসব ট্রেনের ইঞ্জিন পুরোনো, অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। ফলে কুয়াশা সবচেয়ে বেশি ঘায়েল করে এসব ট্রেনকে।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, আমরা আধুনিক ব্যবস্থাপনার দিকে যাচ্ছি। কুয়াশায় সবচেয়ে বেশি ব্যহৃত হয় পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন পরিচালনা। কুয়াশায় ট্রেনের স্বাভাবিক দেরির জেরে বিভিন্ন সেকশনে কিছু ট্রেন বিলম্বে চলাচল করে। ঝুঁকি এড়াতে খুবই সতর্কাবস্থায় ট্রেন চালাতে হয়।