ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

অপচয় রোধে ইসলামের সতর্কবার্তা

ধর্মকথা ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩

অপচয় রোধে ইসলামের সতর্কবার্তা
আজকাল অপচয় ও অপব্যয় যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অপচয় ও অপব্যয় যে যত কৌশলে যত বেশি করতে পারবে সে যেন তত বেশি আধুনিক বা স্মার্ট হবে। এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা উচ্চবিত্তদের মধ্যে থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বস্তরে।

প্রায়ই দেখা যায়, খাবারের টেবিলে বসে কেউ কেউ প্লেট ভরে খাবার নিচ্ছেন কিন্তু পুরো খাবার খাচ্ছেন না। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান, দাওয়াতে বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে অতিমূল্যবান খাবারের কিছু অংশ খেয়ে বাকিটা নষ্ট করে রেখে দিচ্ছেন। অনেক দেশের তুলনায় খাদ্য অপচয়ের এ হার আমাদের দেশে কম থাকলেও ধারণা করা হয়, উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত মিলে অন্তত এক কোটি মানুষ এভাবে খাবার নষ্ট করেন। অথচ যে মুহূর্তে খাবার নষ্ট করা হচ্ছে, ঠিক তখনই আশপাশে হয়তো কোনো ক্ষুধার্ত শিশু কিংবা বৃদ্ধ অথবা অসহায় নারী ও পুরুষ খাবারের জন্য কষ্ট করছেন। ডাস্টবিন থেকে ফেলে দেওয়া এ খাবারগুলো তুলে খাচ্ছেন কেউ। এভাবে অপচয় না হলে হয়তো ওই লোকগুলো কম দামে এ খাবারগুলো কিনে খেতে পারতেন। শুধু খাদ্য অপচয়ই নয়, আমাদের রয়েছে নানা অপচয়ের অভ্যাস। দিনে দিনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে জেনেও পানি অপচয়ে কেউ সচেতন হচ্ছেন না।

অধিকাংশ মানুষকেই দেখা যায়, কল ছেড়ে দীর্ঘসময় নিয়ে থালা-বাসনসহ বিভিন্ন ধোওয়ার কাজ করেন। একটু সচেতন হলে যেখানে অর্ধেক পানি বাঁচানো যায়। গ্যাসের চুলা সারা দিন জ্বালিয়ে রাখার প্রবণতাও অনেকের মধ্যে দেখা যায়। যেখানে বাংলাদেশে গ্যাসের সংকট। লাইনে গ্যাস নেই বিধায় রান্নার বিকল্প লাকড়ি বা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও কিছু অপচয় চোখে পড়ে। যেখানে শুধু খাবার নয়, যে কোনো অপচয়ই ইসলামে শক্তভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার কর ও পান কর, কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না, (সূরা আরাফ : ৩১)। অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে খাদ্যের বরকত উঠে যায়। আল্লাহর রাসূল (সা.) খাবার অপচয় থেকে বাঁচতে খাবারের সময় দস্তরখানা বিছিয়ে তার ওপর খাওয়ার জন্য বলেছেন, যাতে খাবার পড়ে গেলে সেটা তুলে খাওয়া যায়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সা.) খাওয়ার পর তার তিনটি আঙুল চেটে নিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কারও খাবারের লোকমা নিচে পড়ে গেলে, সে যেন তার ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ফেলে না রাখে। তিনি আরও বলেছেন, তোমাদের খাদ্যের কোন অংশে বরকত রয়েছে, তা তোমাদের জানা নেই। (তিরমিজি : ১৮০৩)। খাবার হলো মহান আল্লাহর নেয়ামত। আমাদেরও উচিত এ খাবারকে সম্মান করা এবং কৃতজ্ঞচিত্তে তার প্রতি বিনীত হওয়া; যিনি আমাদের জন্য এ খাবার সৃষ্টি করেছেন।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-‘হে ওইসব মানুষ যারা ইমান এনেছ! তোমরা আহার কর আমার দেওয়া উত্তম রিজিক থেকে, অতঃপর কৃতজ্ঞতা আদায় কর মহান আল্লাহর; যদি তোমরা তার ইবাদত করে থাক’ (সূরা বাকারা : ১৭২)। অন্য আয়াতে আল্লাহ এভাবে সতর্ক করে এসেছেন, ‘হে মানব সম্প্রদায়! যদি তোমরা আমার শোকর আদায় কর তা হলে অবশ্যই আমি তোমাদের রিজিক বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে জেনে রেখ নিশ্চয় আমার আজাব অত্যন্ত কঠিন!’ (সূরা ইবরাহিম : ৭)। এ খাবার খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। জীবনধারণ করছি এ খাবারের ওপর নির্ভর করে।

আমাদের জন্য খাবার আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। খাদ্যের ছোট একটা কণাও যেন অপচয় না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীকে অনেক সুন্দর ও সুশোভিত করে সৃষ্টি করেছেন। এখানে মানবের জন্য প্রয়োজনীয় সব বস্তুই তিনি রেখেছেন। জলজ, খনিজ ও উদ্ভিজ্জ যা কিছু সবই মানুষের জন্য। তিনি সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে যেমন সব কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা ভোগ করার সুযোগও দিয়েছেন তেমনি। তিনি অপচয় ও অপব্যয়কে নিষিদ্ধ করে প্রতিটি বস্তুর সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার করতে বলেছেন। ইসলামে সব কিছুর ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রায়জনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখ, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ (সূরা বনি ইসরাইল-২৬ :২৭)। আমরা সচেতন হব। আমাদের শিশুদের সচেতন করব। আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার করব। এতে আল্লাহর আদেশ পালন করা হবে। পাশাপাশি আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন হবে। দেশের খাদ্য ঘাটতি কমে আসবে। জিনিসপত্রের দামও কমে আসবে। প্রতিটি মানুষের কাছে খাবার সংগ্রহ সহজ হবে।